যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে চীনা গুপ্তচর!

ক্রিস্টিন লি। ছবি: টুইটার

ব্রিটিশ নিরাপত্তা সংস্থা সংসদ সদস্যদের সতর্ক করেছে যে, একজন সন্দেহভাজন চীনা এজেন্ট পার্লামেন্টের অভ্যন্তরে 'জেনেশুনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কার্যক্রমে জড়িত'। বৃহস্পতিবার কর্তৃপক্ষ এ কথা জানিয়েছে বলে দ্য স্ট্রেইটস টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তবে, এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছে চীন।

দ্য স্ট্রেইটস টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাউস অব কমন্সের স্পিকার লিন্ডসে হোয়েলের অফিস নিশ্চিত করেছে, নিরাপত্তা সেবা সংস্থার সঙ্গে পরামর্শ করে তারা সংসদ সদস্যদের এই ঘটনা জানাতে ই-মেইল করেছে।

হোয়েলের একজন মুখপাত্র বলেছেন, স্পিকার সদস্যদের নিরাপত্তা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। তাই তিনি নিরাপত্তা সেবা সংস্থার সঙ্গে পরামর্শ করে এই নোটিশ জারি করেন।

বিজ্ঞপ্তিতে সন্দেহভাজন ব্যক্তির নাম ক্রিস্টিন লি উল্লেখ করে বলা হয়েছে, তিনি 'জেনেশুনে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ইউনাইটেড ফ্রন্ট ওয়ার্ক ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কার্যক্রমে জড়িত'।

কিন্তু, যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তা সংস্থার এমন দাবিকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে বেইজিং। আজ শুক্রবার চীনা সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েবিন এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, চীনের পক্ষে 'তথাকথিত হস্তক্ষেপ কার্যক্রমে' জড়িত হওয়া অপ্রয়োজনীয়।

তিনি আরও বলেছেন, একজনের ব্যক্তিকেন্দ্রিক কল্পনার ওপর ভিত্তি করে হিয়ারসে অ্যালার্মিস্ট বক্তৃতা জারি করা দায়িত্বজ্ঞানহীন।

দ্য স্ট্রেইটস টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জানা গেছে- লন্ডনভিত্তিক সলিসিটর লেবার শ্যাডো ক্যাবিনেটের প্রাক্তন সদস্য ব্যারি গার্ডিনারকে ২ লাখ পাউন্ড এবং তার দলকে কয়েক লাখ পাউন্ড দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে (যার কনজারভেটিভদের বিরুদ্ধে রাশিয়ার কাছ থেকে লাখ লাখ অর্থ লাভবান হওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে) ২০১৯ সালে চীন-ব্রিটিশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে লি'কে তার অবদানের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য একটি পুরস্কার প্রদান করেছিলেন।

২০১৫ সালে লি একটি অনুষ্ঠানে মে'র পূর্বসূরি ডেভিড ক্যামেরন এবং প্রাক্তন লেবার নেতা জেরেমি করবিনের সঙ্গে আলাদাভাবে ছবি তুলেছিলেন।

ব্রিটিশ প্রচার মাধ্যমের মতে, স্পিকারের নোটে বলা হয়েছে- লি 'হংকং এবং চীনভিত্তিক বিদেশি নাগরিকদের পক্ষে কর্মরত এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী সংসদ সদস্যদের আর্থিক অনুদানের সুবিধা প্রদান করেছেন'।

এতে আরও বলা হয়েছে, এই সুবিধাটি অর্থপ্রদানের উত্সকে ঢাকতে গোপনে করা হয়েছিল। এটি স্পষ্টতই অগ্রহণযোগ্য আচরণ এবং এটি বন্ধ করতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

ব্রিটেনের এমআই৫ গোয়েন্দা সংস্থা লি'র কার্যকলাপ নিয়ে সতর্ক করার পর কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন প্রাক্তন কনজারভেটিভ নেতা এবং বেইজিংয়ের সোচ্চার সমালোচক ইয়ান ডানকান স্মিথ।

তিনি বলেন, আমি একজন সংসদ সদস্য হিসেবে বলছি- এটি অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।

চীন গত বছর ডানকান স্মিথসহ যুক্তরাজ্যের ১০টি সংস্থা এবং ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল।

তিনি অভিযোগ করেন, লিকে গ্রেপ্তার বা নির্বাসিত করা হয়নি। শুধু সংসদে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে।

গার্ডিনার অবশ্য বলেছেন, ক্রিস্টিন লি'র ছেলে তার ডায়েরি ম্যানেজার হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। তবে, সে বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করেছেন।

ক্রিস্টিন লি কে?

মিস ক্রিস্টিন লি ক্রিস্টিন চিং কুই লি নামেও পরিচিত। তিনি ক্রিস্টিন লি অ্যান্ড কো সলিসিটরস নামে একটি আইন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা। যার লন্ডন এবং বার্মিংহামে অফিস আছে। কোম্পানিটি তার ওয়েবসাইটে ব্রিটেনে চীনা দূতাবাসের আইনি উপদেষ্টা হিসাবে তার ভূমিকা তালিকাভুক্ত করেছে।

লি তার কোম্পানির অধীনে ব্রিটেনের করপোরেট রেজিস্ট্রি কোম্পানি হাউসের সঙ্গে আর্থিক ফাইলিংয়ে ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে তালিকাভুক্ত।

গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ২০১৯ সালে চীনের একটি প্রচার মাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়- লি বিদেশে চীনা সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রতিনিধি। যাদের সে বছর গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ৭০ তম বার্ষিকীতে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫৮ বছর বয়সী এই নারী ১৯৭৪ সালে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে হংকং থেকে উত্তর আয়ারল্যান্ডে চলে এসেছিলেন। তখন তিনি শিশু ছিলেন এবং প্রায়ই তার সহপাঠীরা তাকে উত্যক্ত করত।

প্রতিবেদনে তাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, আমি তখন বুঝতে পেরেছিলাম- আমার ইংরেজি যতই সাবলীল হোক না কেন, এবং আমি যে জাতীয়তা করি না কেন আমার সবসময় হলুদ চামড়া, কালো চোখ এবং ইয়ানের বংশধরদের রক্ত​থাকবে। আর আমার মাঝে সবসময় হুয়াং প্রবাহিত হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Iran's top security body to decide on Hormuz closure

JD Vance says US at war with Iran's nuclear programme, not Iran

16h ago