ল্যাথাম একা করলেন ২৫২, বাংলাদেশ সবাই মিলে ১২৬!

Trent Boult
৪৩ রানে ৫ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে ধসিয়ে দিলেন ট্রেন্ট বোল্ট। ছবি- টুইটার

এই টেস্ট দেখলে কে বলব আগের টেস্টেই নিউজিল্যান্ডকে দাপট দেখিয়ে হারিয়েছে বাংলাদেশ! এবার বোলিং হলো না একদম জুতসুই, টিম সাউদি-ট্রেন্ট বোল্টদের স্যুয়িংয়ে ব্যাটসম্যানরা হলেন নাকাল। টম ল্যাথামের আড়াইশ ছাড়ানো ইনিংসে রানের পাহাড়ে চড়া কিউইদের জবাবে চরম ব্যাটিং ব্যর্থতায়  মাত্র ১২৬  রানে গুটিয়ে ফলোঅনে পড়েছে মুমিনুল হকের দল। এমনই বেহাল অবস্থা যে ল্যাথাম একা করলেন ২৫২ রান, বাংলাদেশের সবাই মিলে তার অর্ধেক রান করতে পারলেন। 

সোমবার ক্রাইস্টচার্চে টেস্টে দ্বিতীয় দিনেই যেন ম্যাচের গতিপথ একদম চূড়ান্ত পর্যায়ে। স্বাগতিকরা ৬ উইকেটে ৫২১ রান করে ইনিংস ছেড়ে দেওয়ার পর বাংলাদেশের ইনিংস টিকেছে  ৪১.২ ওভার। তৃতীয় দিনে নিউজিল্যান্ড বাংলাদেশকে আবার ব্যাটিং করতে পাঠাবে কিনা তা এখনো জানা যায়নি। তবে বোলাররা ক্লান্ত না হওয়ায় ফলোঅন করানোরই কথা। সেক্ষেত্রে  ইনিংস হার বাঁচানো এখন মুমিনুলদের সামনে ভীষণ কঠিন ব্যাপার।

হ্যাগলি ওভালের সবুজ গালিচায় কেমন বল করতে হয় দেখিয়েছেন কিউই পেসাররা। স্যুয়িংয়ের পসরায় আগুনে বল করে  বাংলাদেশকে বিধ্বস্ত করে দিতে ৪৩ রানে ৫ উইকেট তুলেন বোল্ট, ২৮ রানে ৩ উইকেট নেন সাউদি, ৩২ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন জেমিসন। বাংলাদেশের এগারো জনের মধ্যে দুই অঙ্কের রান করেছেন কেবল দুজন। সর্বোচ্চ ৫৫ এসেছে ইয়াসির আলি রাব্বির ব্যাটে, ৪১ করেছেন সোহান। বাকি সবার স্কোর টেলিফোন ডিজিট।

অথচ দিনের প্রথম সেশনটা ছিল বাংলাদেশেরই। লাঞ্চের আগে ৭৪ রানে নিউজিল্যান্ডের ৪ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন শরিফুল ইসলাম-ইবাদত হোসেনরা। কিন্তু কিউইরা আগের দিনেই বড় রানের ভিত তৈরি করে ফেলায় সেসব পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়নি। অধিনায়ক ল্যাথাম আর টম ব্ল্যান্ডেল মিলে দলকে নিয়ে যান পাঁচশো ছাড়িয়ে। ল্যাথাম থামেন আড়াইশ ছাড়িয়ে।

শেষ দুদিনে বৃষ্টির শঙ্কায় চা-বিরতির আগেই ইনিংস ছেড়ে দেয় নিউজিল্যান্ড। প্রতিপক্ষের বিশাল রানের জবাব দিতে নেমে ইনিংসের একদম দ্বিতীয় ওভারেই ফেরেন ওপেনার সাদমান ইসলাম। বোল্টের বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাট লাগিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন ৭ রান করা সাদমান।

অভিষিক্ত ওপেনার নাঈম শেখ তার পথ ধরেন পরের ওভারে। প্রথম শ্রেণীতে বিবর্ণ পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধভাবে দলে আসা নাঈম টেস্টে প্রথম দফায় নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি। তিনি টিকেছেন কেবল ৫ বল। এরমধ্যে দুবার হতে পারতেন আউট। টিম সাউদির বাড়তি বাউন্সের বলে আড়ষ্ট ভঙ্গিতে বল নামাতে গিয়ে স্টাম্পে টেনে বোল্ড হন কোন রান করতে না পারা এই বাঁহাতি।

প্রথম টেস্টে দারুণ ব্যাট করে ফিফটি করেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এবার তিনি ব্যর্থ। বোল্টের আউট স্যুইংয়ে ড্রাইভ করতে গিয়ে ক্যাচ দেন স্লিপে। শান্তর ব্যাট থেকে আসে ৪ রান। প্রথম টেস্টে দৃঢ়তার ছবি হয়ে থাকা অধিনায়ক মুমিনুল হকও এদিন করেন হতাশ। সাউদির বল একটু সামনের পায়ে পুশ করার চেষ্টায় লাইন মিস করে হয়ে যান বোল্ড।  বাংলাদেশ অধিনায়কও খুলতে পারেননি রানের খাতা

১১ রানেই পড়ে যায় ৪ উইকেট। চরম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে চা-বিরতির আগে সামান্য প্রতিরোধ আসে লিটন দাস-ইয়াসির আলির ব্যাটে।

চা-বিরতির পর ফিরেই ছন্দে থাকা লিটন দেন আত্মাহুতি। বোল্টের স্যুয়িংয়ে ড্রাইভ করতে উইকেটের পেছনে ধরা দেন ৮ রান করা লিটন। দুই স্যুয়িং বোলার সাউদি-বোল্ট তাদের প্রথম স্পেল শেষ করতে স্বস্তিতে নুরুল হাসান সোহানের সঙ্গে প্রতিরোধ গড়েন ইয়াসির। দুজনেই ছিলেন সাবলীল। আসতে থাকে দ্রুত রান।  ৬ষ্ঠ উইকেটে ৬০ রানের জুটির পর দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে সোহানকে ছাঁটেন সাউদি।

সাউদির ভেতরে ঢোকা বলে লাইন মিস করে এলবিডব্লিউ হন ৬২ বলে ৪১ করা সোহান। ইয়াসির ছিলেন চোয়ালবদ্ধ দৃঢ়তা নিয়ে। মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে ২২ রানের আরেক জুটি আসে তার ব্যাটে। তাতে মিরাজের অবদান কেবল ৫। এই জুটিতেই দিন শেষ করার আশায় ছিল বাংলাদেশ। মিরাজকে আউট করার মধ্য দিয়ে টেস্টে ৩০০ উইকেটের মাইলফলকও স্পর্শ করেন নিউজিল্যান্ডের বাঁহাতি পেসার।

সেই আশা ধুলিসাৎ হয়ে যায় মিরাজের বিদায়ে। ৩৩ বলে ৫ মিরাজ বোল্টের দারুণ এক বলে হয়ে যান বোল্ড। টেল এন্ডারদের মধ্যে কিছুটা ব্যাট করতে জানা তাসকিন আহমেদ টেকেননি ৩ বলের বেশি। অযতা মারার চেষ্টায় ক্যাচ উঠিয়ে বিদায় তার।

বাকিদের বিদায়ে এক প্রান্তে তখন একার লড়াইয়ে ইয়াসির। তার লড়াইও থামে যায় ফিফটির পর। টেস্টে প্রথম ফিফটি করা ইয়াসির দ্রুত রান তুলার চেষ্টায় কাইল জেমিসনের শিকার হন ৫৫ রান করে। পরের ওভারেই শরিফুলকে তুলে ইনিংস মুড়ে দেন বোল্ট। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর

(দ্বিতীয় দিন শেষে)

নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংস: ১২৮.৫ ওভারে ৫২১/৫ (ইনিংস ঘোষণা)  (ল্যাথাম ২৫২,  ইয়ং ৫৪, কনওয়ে ১০৯, টেইলর ২৮, নিকোলস ০, মিচেল ৩, ব্ল্যান্ডেল ৫৭*, জেমিসন ৪*   ; তাসকিন  ০/১১৭ , শরিফুল ২/৭৯,  ইবাদত ২/১৪৩, মিরাজ ০/১২৫, শান্ত ০/১৫, মুমিনুল ১/৩৪)

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৪১.২ ওভারে ১২৬ (সাদমান ৭, নাঈম ০, শান্ত ৪, মুমিনুল ০, লিটন ৮, ইয়াসির ৫৫ , সোহান ৪১, মিরাজ ৫, তাসকিন ২, শরিফুল ২, ইবাদত ০*  ; সাউদি ৩/২৮  , বোল্ট ৫/৪৩,   জেমিসন ২/৩২, ওয়েগনার ০/২৩ )

Comments

The Daily Star  | English

7 colleges to continue operating under UGC until new university formed

Prof AKM Elias, principal of Dhaka College, to be appointed as the administrator

2h ago