ডেসমন্ড টুটু: ভয়েস অব জাস্টিস

ডেসমন্ড টুটু। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

গ্যালারিতে উপচে পড়া দর্শক। সবাই এসেছেন রাগবি খেলা দেখতে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শিরোপা জয়ের এই খেলায় নেমেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। গ্যালারির সব শ্বেতাঙ্গ দর্শক উল্লাস করছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আর কৃষ্ণাঙ্গ দর্শকদের উল্লাস ছিল বিরোধীদের ঘিরে তথা নিজ দেশের বিরুদ্ধে।

নেলসন ম্যান্ডেলা ও ডেসমন্ড টুটু। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

এ দৃশ্য 'ইনভিকটাস' মুভির। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলাকে নিয়ে তৈরি চলচ্চিত্রের এ দৃশ্যে উঠে আসে নিজ দেশের শ্বেতাঙ্গ খেলোয়াড়দের প্রতি কৃষ্ণাঙ্গ জনতার মনোভাব।

বায়তুল মোকাদ্দাসে ডেসমন্ড টুটু। ছবি: এপি ফাইল ফটো

আফ্রিকার সর্ব দক্ষিণের এই দেশটির অন্যতম কিংবদন্তি ছিলেন আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু। দাঙ্গা বিধ্বস্ত এই দেশটিতে শ্বেতাঙ্গদের বিরুদ্ধে তিনি দিয়েছিলেন অহিংস আন্দোলনের ডাক।

শান্তিতে নোবেলজয়ী ৯০ বছর বয়সী এই মহানায়কের মৃত্যুতে তার স্মরণে বিশ্ব গণমাধ্যমে ব্যবহার করা হয়েছে 'মরাল জায়েন্ট,' 'মরাল কম্পাস', 'ভয়েস অব জাস্টিস'সহ নানা অভিধা।

১৯৮৪ সালে ডেসমন্ড টুটুকে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার দেওয়ার সময় নোবেল কমিটি বলেছিল, 'তার লক্ষ্য ছিল একটি গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন সমাজ যেখানে কোনো জাতিগত বিভেদ থাকবে না।'

নরওয়ের নোবেল ইনস্টিটিউটের ভাষায়, 'টুটুর দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কার ছিল এবং তা প্রকাশে তিনি ছিলেন ভয়হীন।' তাকে 'আফ্রিকান মুক্তিসেনাদের প্রতীক' হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

বৈষম্যহীন সমাজের ইচ্ছা আমৃত্যু লালন করেছিলেন জোহানেসবার্গের এই অ্যাংলিকান ধর্মযাজক।

টুটু শুধু যে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের বিরোধিতা করেছিলেন তা নয়। ইসরায়েলের হাতে নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের পক্ষে তিনি সোচ্চার ছিলেন। তিনি সরব ছিলেন ইরাকে মার্কিন হামলার বিরুদ্ধে। উত্তর আয়ারল্যান্ড, সাইপ্রাস ও কেনিয়ায় শান্তির পক্ষে কথা বলেছিলেন। এই মানুষটি সরব ছিলেন তার নিজ ধর্মের মানুষের অপকর্ম নিয়েও।

দক্ষিণ আফ্রিকায় কর্মরত আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক গবেষক স্কট ফারসিং সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে বলেন, 'টুটু ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার "মরাল কম্পাস"। সাম্যের কথা বলায় তিনি হয়েছিলেন সাবেক বর্ণবাদী সরকারের গলার কাঁটা। তিনি বর্তমান শাসকদের দুর্নীতির বিরুদ্ধেও কথা বলেছিলেন।'

তার মতে, 'টুটু ছিলেন সরব আদর্শবাদী মানুষ। সব সময়ই ন্যায়ের পক্ষে কথা বলতেন। জানি না ম্যান্ডেলার পর টুটুর মৃত্যুতে দক্ষিণ আফ্রিকা এখন কার কাছ থেকে দিক নির্দেশনা পাবে।'

১৯৬২ সালে নেলসন ম্যান্ডেলার জেলে যাওয়ার পর বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব অন্যদের পাশাপাশি তার দীর্ঘদিনের বন্ধু টুটুর ওপরও বর্তায়। টুটু দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছিলেন, 'সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গ সরকার বর্ণবাদী। তারা ঈশ্বরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।'

টুটুর জীবনীলেখক স্টেভেন গিশ আল জাজিরাকে বলেন, 'এই ধর্মযাজক ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার "মার্টিন লুথার কিং"। তিনি তার বিরোধীদের ঘৃণা করেননি। তিনি সব সময় আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের নীতিতে বিশ্বাস করতেন এবং মানুষের ন্যায়বোধ জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করতেন।'

Comments

The Daily Star  | English

IMF sets new loan conditions

Bangladesh must clear dues, hit steep revenue, reserve targets for next tranche

8h ago