সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমায় সরকারের ব্যাংক ঋণ বেড়েছে

জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থার কম বিনিয়োগের কারণে চলতি অর্থবছরে ব্যাংকিং খাত থেকে নেওয়া সরকারি ঋণের পরিমাণ দ্রুত বেড়েছে, যা বেসরকারি খাতকে বিপদে ফেলতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকার ব্যাংকগুলো থেকে ২২ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। গত অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ২৬ হাজার ৭৮ কোটি টাকা।

সরকারি ঋণের দ্রুত বৃদ্ধি সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত তা বেসরকারি খাতে বিরূপ কোনো প্রভাব ফেলেনি। তবে একই ধারা অব্যাহত থাকলে এটি সামনের মাসগুলোতে ব্যাংকিং খাতে তহবিল সংকট তৈরি করতে পারে।

সরকার চলতি অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় গত সেপ্টেম্বরে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্র ও প্রবাসী বন্ডের সুদের হার ১ থেকে ৩ শতাংশ কমানোর পর ব্যক্তি পর্যায়ের বিনিয়োগকারী ও কোম্পানিগুলো সঞ্চয় স্কিমগুলোতে বিনিয়োগ কমিয়েছে। ফলে সরকারের ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। 

চলতি বছরের জুলাই থেকে অক্টোবরের মধ্যে সঞ্চয় স্কিমগুলোতে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৪০ শতাংশ কম।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুরের বক্তব্য, ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার বিষয়টি এখন পর্যন্ত বেসরকারি খাতের জন্য কোনো নেতিবাচক প্রভাব বয়ে আনেনি।

তিনি বলেন, 'কিন্তু চলমান প্রবণতা এমন ইঙ্গিত দেয় যে, আগামী দিনে ঋণের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। আর সরকার যদি ব্যাংকিং খাত থেকে এভাবে ব্যাপক হারে ঋণ নিতে থাকে, তাহলে তা বিদ্যমান তারল্য সংকটকে আরও বাড়িয়ে দেবে। তাই এই ধরনের পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য সরকারের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।'

কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত বছরের এপ্রিল থেকে ঋণের যে সীমা নির্ধারণ করেছে, তাতে তারল্য সংকট আরও গভীর হলে ব্যাংকগুলো বিপাকে পড়তে পারে।

আহসান এইচ মনসুরের অভিমত, বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য সরকারের ৯ শতাংশ সুদহারের সীমা প্রত্যাহারের কথা ভাবা উচিত।

বাংলাদেশ পর্যাপ্ত পরিমাণে স্বল্প সুদের বিদেশি ঋণের সংস্থান করতে পারেনি জানিয়ে তিনি আরও বলেন,  'ব্যয় মেটাতে বিদেশি ঋণ ও সহায়তা সরকারকে ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরতা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশেষ ফেলো মুস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোতে বিনিয়োগের ক্রমহ্রাসমান প্রবণতা সরকারকে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে আরও বেশি ঋণ নিতে বাধ্য করেছে।

তার ভাষ্য, 'সরকারের উচিত তহবিলের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা। না হলে ঋণের বোঝা অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।'

মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক উভয়েরই এটি নিশ্চিত করা উচিত, যেন বিনিয়োগের চাহিদা বাড়লে বেসরকারি খাত কোনো ধরনের বাধার সম্মুখীন না হয়।

করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাব কাটিয়ে অর্থনীতি পুরোদমে চালু থাকায় বেসরকারি খাতে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ঋণের প্রবৃদ্ধি আশানুরূপ বেড়েছে।

গত অক্টোবরে ঋণের প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশে উন্নীত হয়। যা ছিল আগের ১৩ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমরানুল হক মনে করেন, সরকারি ঋণের পরিমাণ বাড়ার কারণগুলোর মধ্যে একটি হতে পারে, বড় উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত হওয়া, যা মহামারির কারণে স্থবির হয়ে পড়েছিল।

তিনি বলেন, যদিও এর কারণে ব্যাংকিং খাতে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের অস্বস্তি তৈরি হয়নি। এর কারণ হলো মেয়াদী ঋণের চাহিদা এখন পর্যন্ত প্রত্যাশিত গতি আর্জন করতে পারেনি, যা পরিশোধের মেয়াদ ১ বছরের বেশি।

এদিকে আমদানি পরবর্তী অর্থায়ন বেশে ভালোভাবে বাড়ছে। এই ধরনের ঋণ স্বল্পমেয়াদে আমদানিকারকদেনর দেওয়া হয়। এ ছাড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঋণপত্রের নিষ্পত্তিও অনেকাংশে বেড়েছে।

জুলাই থেকে অক্টোবরের মধ্যে আমদানি মূল্য পরিশোধের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।

এমরানুল হকের মতে, রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বেশি না হলে ব্যাংকগুলোতে তারল্যের  সংকট বাড়তে পারে।

বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকের চাহিদা বাড়ার কারণে নভেম্বর মাসে রপ্তানি আয় ৪ দশমিক শূণ্য ৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু একই মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২৫ শতাংশ কমে ১ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, যা গত বছরের জুনের পর সর্বনিন্ম।

অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ

Comments

The Daily Star  | English

Poll irregularities: Sedition among 3 new charges added against three ex-CECs

BNP filed a case against 24 individuals, including three former chief election commissioners, 10 election commissioners, and top government and police officials, for their alleged role in irregularities during national polls in 2014, 2018, and 2024

22m ago