আমাদের নিজেদের তৈরি ট্রাজেডি!

যাত্রীদের নিরাপত্তার প্রতি নির্লজ্জ অবহেলার কারণেই এত মৃত্যু
ছবি: সংগৃহীত

আমাদের ইতিহাসে যাত্রীবাহী লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনায় আমরা দুঃখিত ও ক্ষুব্ধ। যা এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৪০ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এতে শতাধিক যাত্রী আহত হয়েছেন। এ ছাড়া আরও এখনো অনেকে নিখোঁজ আছেন।

আমাদের প্রতিবেদন অনুসারে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬ টায় ১ হাজারেরও বেশি যাত্রী নিয়ে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটি ঢাকা থেকে বরগুনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে লঞ্চের কর্মীরা কিছু সমস্যা দেখতে পান। সমস্যাগুলো সমাধান করতে গিয়ে তারা যানটি চালু রাখে।

এ সময় অনেক যাত্রী লক্ষ্য করেন যে, লঞ্চের ইঞ্জিন থেমে থেমে বিকট আওয়াজ করছে, ইঞ্জিন রুম থেকে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে এবং কখনো কখনো এক্সহস্ট পাইপ থেকে আগুনের ঝলকানি বের হচ্ছে। আসন্ন বিপর্যয়ের সব লক্ষণ নিয়েও লঞ্চটি চলছিল।

এমনকি, রাত দেড়টার দিকে বরিশাল লঞ্চ টার্মিনাল থেকে লঞ্চটি ছেড়ে যাওয়ার পর নিচের তলার যাত্রীরা যখন বুঝতে পারেন যে লঞ্চের ডেক আরও গরম হয়ে উঠছে, তখনো চালক লঞ্চটিকে গন্তব্যের দিকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন।

এরপর রাত ২টার দিকে বিস্ফোরণ ঘটে এবং আগুনের বলয় পুরো লঞ্চটিকে গ্রাস করে।

এই মারাত্মক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সম্পর্কে আমাদের অনেকগুলো প্রশ্ন আছে: যাত্রা শুরুর আগে লঞ্চের মাস্টার ও কর্মীরা ইঞ্জিন ও অন্যান্য যন্ত্রপাতির রুটিন চেকআপ কেন করেননি? ইঞ্জিনে সমস্যা হচ্ছে জেনেও কেন মাস্টার যাত্রা বাতিল করলেন না? কেন ইঞ্জিন রুম ও নিচের ডেকের একটি বড় অংশে জ্বালানির ব্যারেল রাখা হলো? রান্নাঘরটি কেন ঠিক ইঞ্জিন রুমের পাশেই ছিল?

বরিশাল লঞ্চ টার্মিনালে কেন মাস্টার লঞ্চটি থামিয়ে রাখেননি, যখন নিচের ডেকের তাপ এতটাই স্পষ্ট ছিল, যা সবাই টের পাচ্ছিল?

সর্বশেষ প্রশ্ন হচ্ছে, লঞ্চটির যাত্রী বহনের ক্ষমতা ৪২০ জনের হলেও কেন তাতে হাজারের বেশি যাত্রী ছিল? লঞ্চের মাস্টার ও কর্মচারীরা কিছু মৌলিক নিয়ম মেনে চললে ও যাত্রীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে একটু খেয়াল রাখলেই এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড সহজেই এড়ানো যেত।

ঘটনাস্থলে যারা মারা গেছেন; জীবন্ত পুড়ে মরেছেন বা শ্বাসরোধ হয়ে মারা গেছেন যারা, তাদের স্বজনদের কান্নাকাটি দেখাটা হৃদয়বিদারক। এ ছাড়া প্রাণঘাতী আগুন থেকে বাঁচতে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ হওয়া প্রিয়জনদের জন্য অপেক্ষায় আছেন অনেকে।

বরিশাল, ঝালকাঠি ও ঢাকার যে হাসপাতালগুলো অগ্নিদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, তারা এত গুরুতর আহত রোগী নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে।

আমরা আশা করি, তারা সবাই দেশের সর্বোত্তম চিকিৎসা পাবেন এবং আর কোনো প্রাণহানি হবে না।

দেখা যাচ্ছে, ঘটনা তদন্ত করে আগুন লাগার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে কয়েকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। দমকল বাহিনীর কর্মীরা প্রাথমিকভাবে ইঞ্জিন রুমকে আগুনের উৎস হিসেবে চিহ্নিত করলেও কমিটিগুলো তাদের প্রতিবেদন দিলে আমরা তা নিশ্চিতভাবে জানতে পারব।

লঞ্চ মাস্টার ও কর্মচারীদের গাফিলতির বিষয়ে আমরা মনে করি, যথাযথ ভূমিকা পালন না করার জন্য তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা উচিত। যাত্রীদের নিরাপত্তায় এমন নির্লজ্জ অবহেলা কখনোই বরদাশত করা উচিত না।

অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ

Comments

The Daily Star  | English

Private airlines caught in a bind

Bangladesh’s private airline industry is struggling to stay afloat, hobbled by soaring fuel prices, punitive surcharges, and what operators describe as unfavourable policies. Of the 10 private carriers that have entered the market over the past three decades, only two -- US-Bangla Airlines and A

8h ago