বড়দিনে নানা দেশের নানা আয়োজন

ছবি: সংগৃহীত

হরেক রকমের উপহারে, আলোতে, গানে গানে শীতের চাদর মুড়িয়ে প্রতি বছরের মতো এবারও দরজায় কড়া নেড়েছে বড়দিন। এ বছরও সান্তা ক্লজ আর ক্রিসমাস ট্রির সঙ্গে কেক-মিষ্টির আড়ম্বরে ডিসেম্বর মাসে উদযাপিত হচ্ছে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব মেরি ক্রিসমাস ডে বা বড়দিন। 

বছরের ২৫ ডিসেম্বরে মূল আনুষ্ঠানিকতা থাকলেও মাসের প্রথম থেকেই শুরু হয় তোড়জোড়। অন্যান্য উৎসবের মতো বড়দিন উদযাপন করা হয় নানা দেশে নানাভাবে। যেখানে অংশ নেন জাতি-বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে সব বয়সের মানুষ।  

ফিলিপাইনের 'দ্য জায়ান্ট ল্যানটার্ন ফেস্টিভ্যাল'

ছবি: সংগৃহীত

ফিলিপাইনের বড়দিনের রাজধানীখ্যাত সান ফার্নেন্দো শহরে প্রতি বছর বড়দিনের আগের শনিবারে উদযাপন করা হয় দ্য জায়ান্ট ল্যানটার্ন ফেস্টিভ্যাল বা লিগলিগান পারুল সাম্পারনেন্দো। বড়দিন উপলক্ষে শুধু ফিলিপাইন নয়, সারা বিশ্বের মানুষ অপেক্ষা করে এই ফেস্টিভ্যালের আয়োজন উপভোগ করার জন্য। এই ফেস্টিভ্যালের বিশেষত্ব হলো ফিলিপাইনের ১১টি গ্রামের (স্থানীয় ভাষায় 'বারাঙ্গে') বাসিন্দাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা কে সবচেয়ে বড় এবং সুন্দর লণ্ঠন বানাতে পারে। আগে মূলত এই লণ্ঠনগুলো আকারে অর্ধ মিটার ব্যাস এবং লণ্ঠন বানানোর জন্য ব্যবহার করা হতো জাপানি অরিগামি কাগজ (প্যাপেল দে হ্যাপন) আর প্রজ্জ্বলনের জন্য মোমবাতি। বর্তমানে নানা উপাদানে তৈরি লণ্ঠনগুলোর আকার হয় প্রায় ৬ মিটার এবং মোমবাতির পরিবর্তে ইলেকট্রিক বাল্ব দিয়ে সাজানো হয় একেকটি লণ্ঠন। এই আয়োজন দেখতে সান ফার্নেন্দো শহরে জড়ো হয় কয়েক হাজার মানুষ।

সুইডেনের 'গ্যাভল গোট'  

ছবি: সংগৃহীত

১৯৬৬ সাল থেকে সুইডেনের শহর গ্যাভলে বড়দিন উদযাপনে স্থাপন করা হয় একটি ছাগলের বিশালাকৃতির খড়ের মূর্তি। মূর্তিটি মূলত স্ক্যান্ডিনেভিয়া এবং উত্তর ইউরোপ অঞ্চলের ইউলেটাইড ঋতুর একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতীক। ৪২ ফুট উঁচু এবং ৩ দশমিক ৬ টন ওজনের ইউল ছাগলের অবতারটি প্রতি বছর বড়দিন উপলক্ষে নানা বাতির আলোকসজ্জায় সজ্জিত হয়। এটি দেখতে সুইডিশরা পরিবার-পরিজন নিয়ে যায় গ্যাভল শহরে। তবে দুঃখের বিষয়, একদল ব্যক্তি মনে করেন এটি তাদের ঐতিহ্য বিকৃতির পরিচায়ক। ফলে সেখানকার মানুষদের বেশিরভাগ সময়ে আতঙ্কে থাকতে হয় দুর্বৃত্তদের আক্রমণের ভয়ে। নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে ২৯ বার হামলা চালিয়ে আগুনে পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে শতভাগ সফল হওয়া সম্ভব হয়নি। 

অস্ট্রিয়ার 'ক্র্যাম্পাস'

ছবি: সংগৃহীত

জন্তুবেশে রাক্ষসকুল ঘুরে বেড়ায় শহরের অলি-গলিতে, ছোট্ট ছোট্ট শিশুদের ধরে বস্তায় ভরে নিয়ে যায় দূর-দূরান্তে। নাহ! রূপকথা নয় বা হ্যালুইনের উৎসবও নয়। এটি হলো অস্ট্রিয়ার বড়দিন উপলক্ষে সেন্ট নিকোলাসের দুষ্ট সাহায্যকারী ক্র্যাম্পাস সেজে বাচ্চাদের ভয় দেখানোর রীতি। প্রতি বছর অস্ট্রিয়ার যুবকরা শিকল ও ঘণ্টা বাজিয়ে এ উৎসব পালন করেন। 

জাপানের 'কেনটাকি ফ্রাইড ক্রিসমাস ডিনার'

ছবি: সংগৃহীত

আগে জাপানে বড়দিন পালনে তেমন বিশেষ কোনো রীতি ছিল না। সাধারণভাবেই উপহার দেওয়া-নেওয়া, আলোকসজ্জার মাধ্যমে উদযাপিত হতো বড়দিন। কিন্তু সম্প্রতি বড়দিন এলে কেনটাকি ফ্রাইড ক্রিসমাস ডিনারের আয়োজন করার মাধ্যমে দিনটি উপভোগ করে জাপানের অধিকাংশ পরিবার। এর মাধ্যমে পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, আত্নীয়-স্বজনদের সঙ্গে সময় কাটানোর ফুরসত পায় তারা।     

আইসল্যান্ডের 'দ্য ইউল ল্যাডস'

ছবি: সংগৃহীত

আইসল্যান্ডে বড়দিন উপলক্ষে এক বিশেষ রীতির প্রচলন আছে। প্রতিবছর বড়দিনের ১৩ দিন আগে থেকে ১৩ জন ইউল ল্যাড (আইসল্যান্ডিক ভাষায় 'জোলাসভেইনারনির বা জোলাসভেইনার') আইসল্যান্ডের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে বাচ্চাদের উপহার দেয় এবং ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে খেলা দেখায়। বড়দিন এলেই ইউলেটাইডের প্রতি রাতে সেখানকার বাচ্চারা তাদের সবচেয়ে সুন্দর জুতো জানালার পাশে রেখে দেয়। আর ইউল ল্যাড শান্ত ছেলে ও মেয়ে শিশুদের উপহার আর দুষ্টুদের জুতোর ভেতর নষ্ট আলু রেখে দেয়। এটি ঘিরে আইসল্যান্ড জুড়ে উৎসবের আমেজ দেখা যায়। 

জার্মানির 'সেন্ট নিকোলাস ডে'

ছবি: সংগৃহীত

প্রতি বছর নিকোলাস বড়দিনের রাতে গাধার বাহনে চড়ে বাভারিয়ান অঞ্চলের শিশুদের চকলেট, কমলা, খেলনাসহ নানা উপহার দেন। কখনো কখনো প্রচলিত সান্তা ক্লজের পোশাক পরে বাড়ি বাড়ি মিষ্টি বা উপহারও দিয়ে থাকেন। তবে এর জন্য শিশুদের কবিতা আবৃত্তি, গান শোনাতে ও ছবি আঁকতে বলে শিশুদের আনন্দ উপভোগ করতেও দেখা যায় তাকে। আবার তার সঙ্গে নেচেট রুপ্রেচটকে দেখলে দুষ্ট শিশুরা ভয়ও পায় বটে। কেন না তিনি যে তাদের ভয় দেখান আবার শাস্তিও দেন বটে। 

যুক্তরাষ্ট্রের 'লাইটিং অফ ন্যাশনাল হানুক্কাহ মেনোরাহ'

ছবি: সংগৃহীত

১৯৭৯ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউজের সামনে ৮ দিনব্যাপী ৯ মিটার আকৃতির হানুক্কাহ মেনোরাহতে আলোকসজ্জা করা হয়। এ ছাড়া নানা বিষয়ে আলোচনা, গান-বাজনা, শিশুদের সাংস্কৃতিক পারফর্মেন্সের আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়। অনুষ্ঠানটি উপভোগ করতে বিনামূল্যে টিকিট বিতরণ করা হলেও আগে থেকে আগ্রহীদের সিট বুকিং করে রাখতে হয়। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ইভেন্টগুলোর মধ্যে অন্যতম। 

কলোম্বিয়ার 'লিটল ক্যান্ডেলস ডে'

ছবি: সংগৃহীত

ডিসেম্বরের শুরুর দিকেই বড়দিনের আগমনী বার্তা হিসেবে কলোম্বিয়ায় পালিত হয় লিটল ক্যান্ডেলস ডে বা ডিয়া দে লাস ভেলিটাস। কলোম্বিয়ার অধিবাসীরা মেরি এবং ইম্যাকুলেট কনসেপশনের প্রতি সম্মান জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে জানালায়, বারান্দায়, উঠোনে মোমবাতি ও কাগজের তৈরি লণ্ঠন জ্বালিয়ে রাখে বহু আগে থেকেই। বর্তমানে এ রীতিটি পুরো দেশ জুড়ে নানা আয়োজন ও আলোকসজ্জার মাধ্যমে উদযাপন করা হয়। 

কানাডার 'ক্যাভালকেড অফ লাইটস'

ছবি: সংগৃহীত

কানাডার টরোন্টোতে আয়োজিত ক্যাভালকেড অফ লাইটসের মাধ্যমে বড়দিন উপলক্ষে আনুষ্ঠানিক ছুটির আমেজ নিয়ে আসে সকলের কাছে। ক্যাভালকেড মূলত আলোকসজ্জার বিশাল আয়োজন হিসেবে পরিচিত সারা বিশ্ববাসীর নিকট। এ অনুষ্ঠানটির সূচনা হয় যখন ১৯৬৭ সালে কানাডার সিটি হল এবং নাথান ফিলিপস স্কয়ারে উদ্বোধন করা হয়। তারপর থেকে বড়দিনের আগে থেকে নতুন বর্ষ পর্যন্ত আতশবাজি, আইস স্কেটিংয়ের পাশাপাশি সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত টরোন্টোর স্কয়ার এবং ক্রিসমাস ট্রি ৩ লক্ষাধিক এলইডি বাল্ব দিয়ে প্রজ্বলিত থাকে। 

এভাবেই নানা আড়ম্বরে, জাঁকজমকভাবে পালিত হয় বড়দিন। এ দিনটি উপলক্ষে দেশে দেশে মোতায়েন করা হয় বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী। সবাই যাতে নির্বিঘ্নে উৎসবটি উপভোগ করতে পারে তা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করে রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তারা।
 

Comments

The Daily Star  | English

Tarique, Fakhrul, Khasru invited by US to ‘prayer breakfast’

The US government has invited BNP Acting Chairman Tarique Rahman, its Secretary General Mirza Fakhrul Islam Alamgir and Standing Committee member Amir Khasru Mahmud Chowdhury to attend the National Prayer Breakfast led by the US Congress

1h ago