রাষ্ট্রপতির সংলাপ: আজ যাবে জাতীয় পার্টি, সিদ্ধান্তহীন বিএনপি

Abdul Hamid
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ

রাষ্ট্রপতি আজ সোমবার পরবর্তী নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের লক্ষ্যে নিবন্ধনকৃত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করতে যাচ্ছেন। তবে এই সংলাপে অংশগ্রহণের ব্যাপারে বিএনপি এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ প্রতিটি দলের সঙ্গে আলাদা আলাদা করে বসবেন এবং সবাই আশা করছেন আরও শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। প্রথম দিনের বৈঠকে আজ তিনি জাতীয় পার্টির সঙ্গে বসবেন।

জাতীয় নির্বাচনের আর মাত্র ২ বছর বাকি থাকায় রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন কমিশন গঠন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। গত কয়েকটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনে ভোটারদের অনুপস্থিতি ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি অবিশ্বাসের বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। যে কারণে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়টি সবার নজরে এসেছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে পরিচালিত বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। এ কারণেই মূলত রাষ্ট্রপতি এই সংলাপ শুরু করার উদ্যোগ নেন।

দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এখনো সংলাপে যোগ দেওয়া বা না দেওয়া সম্পর্কে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা জানান, তাদের দল হয়তো সংলাপে যোগ দেবেন না। কারণ তারা মনে করেন নতুন নির্বাচন কমিশন 'ক্ষমতাসীন দলের ইচ্ছা অনুযায়ী' তৈরি করা হবে।

তিনি জানান, সংলাপে যোগ দেওয়ার পরিবর্তে তারা নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন সম্পর্কে তাদের মতামত ও সুপারিশ চিঠির মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর পরিকল্পনা করছেন।

আজকের সংলাপে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি দেশের সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য একটি আইনের প্রচলন করার দাবির ওপর জোর দেবে বলে জানিয়েছেন দলের চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জি এম কাদের।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, তারা 'রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপের কোনো প্রয়োজনীয়তা দেখছেন না।'

তিনি আরও বলেন, 'রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সর্বশেষ সংলাপে (২০১৬ সালে) আমরা আমাদের সুপারিশ জানিয়েছি। তিনি তার কথা রাখেননি। তিনি এমন একটি নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দিয়েছেন, যারা ভোটের আগের রাতে নির্বাচন করেছে।'

'তিনি যদি এ ব্যাপারে আন্তরিক হতেন (নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে), তাহলে তিনি এ ধরনের সংলাপ আয়োজনের পরিবর্তে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনের আইন প্রণয়নের জন্য উদ্যোগ নিতেন', বলেন সেলিম।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক উভয়েই জানান তারা এখনও সংলাপে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি।

তারা আরও জানান, তারা দলীয় ফোরামে এবং বাম গণতান্ত্রিক জোটের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবেন।

খালেকুজ্জামান জানান, রাষ্ট্রপতির দপ্তর থেকে তার দলকে ২৬ ডিসেম্বরে সংলাপে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

তিনি এবং সাইফুল উভয়েই জানান, তারা সংলাপে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইনের প্রচলন করার অনুরোধ জানাবেন।

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাইফুল হক জানিয়েছেন, তারা এখনও আমন্ত্রণ পাননি।

রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন জানান, রাষ্ট্রপতি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (ইনু) ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সঙ্গে যথাক্রমে ২২ ও ২৬ ডিসেম্বর সংলাপে বসবেন।

আজ থেকে ৪৯ বছর আগে সংবিধানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সরকার এ ধরণের আইন প্রচলনের উদ্যোগ নেয়নি।

তবে দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে এ ধরনের আইন রয়েছে।

যেহেতু কোনো সুনির্দিষ্ট আইন নেই, রাষ্ট্রপতি ২০১২ ও ২০১৬ সালে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর সিইসি ও অন্যান্য কমিশনারদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য 'সার্চ কমিটি' গঠন করেন।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments