বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের ৫০তম শাহাদাতবার্ষিকী আজ
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিনের ৫০তম শাহাদাতবার্ষিকী আজ ১০ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় তিনি খুলনায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের ছোড়া বোমায় দগ্ধ হয়ে শাহাদাতবরণ করেন।
শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শুক্রবার সকালে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন ফাউন্ডেশন ও সোনাইমুড়ী উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন নগরে (বাগপাঁচড়া গ্রাম) এবং রুহুল আমীন গ্রন্থাগার ও স্মৃতি যাদুঘরে আলোচনা সভা, মিলাদ মাহফিল ও দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণের আয়োজন করা হয়েছে। সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফজলুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নোয়াখালীর কৃতি সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মো. রুহুল আমিন ১৯৩৫ সালে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার দেওটি ইউনিয়নের বাগপাঁচড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মো. আজহার পাটোয়ারী ও মা জুলেখা খাতুন। তিনি পরিবারের বড় ছেলে। ছোটকাল থেকে তিনি ছিলেন দেশপ্রেমিক। দেওটি ইউনিয়নের বাগপাঁচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা ও সোনাইমুড়ী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৪৯ সালে তিনি এসএসসি পাস করেন। এসএসসি পাস করেই তিনি পাকিস্তান নৌবাহিনীতে যোগ দিয়ে প্রশিক্ষণ নিতে করাচি যান। তিনি পাকিস্তানের ম্যানোরা দ্বীপ থেকে প্রশিক্ষণ শেষে প্রবেশনারি হিসেবে করাচির পি.এন.এস কারসাজে কাজ শুরু করেন।
বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে রুহুল আমিন পাকিস্তানি নৌবাহিনীর চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে আসেন। এরপর তিনি এলাকার কয়েকশ তরুণ-যুবকদের নিয়ে একটি মুক্তিযুদ্ধের দল গঠন করেন। ১৯৭১ সালের মে মাসে প্রথম সপ্তাহে ৫০০ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুবকদের নিয়ে তিনি ৩ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর কে এম শফিউল্লাহর অধীনে যুদ্ধে যোগ দেন। পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজে যোগদান করেন। এসময় তিনি যুদ্ধ জাহাজ পলাশ ও পদ্মার স্কোয়াড্রন লিডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর খুলনার রূপসা নদীতে মুক্তিযোদ্ধাদের বহনকারী যুদ্ধ জাহাজ পলাশের ইঞ্জিনরুমের দায়িত্ব পালনকালে পাকসেনা ও রাজাকার আলবদর বাহিনীর ছোড়া অব্যাহত বোমা ওই জাহাজের ইঞ্জিনরুমে আঘাত করলে তাতে আগুন ধরে যায়। অবশেষে আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যান তিনি।
বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের ৩ মেয়ে জাকিয়া খাতুন, নুর জাহান বেগম, ফাতেমা বেগম ও ২ ছেলে মোহাম্মদ আলী বাহার ও শওকত আলীর মধ্যে বড় ছেলে মোহাম্মদ আলী বাহার মারা গেছেন। শওকত আলী একসময় অর্থনৈতিক দৈন্যদশার মধ্যে কালাতিপাত করলেও বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে তাকে মাসিক ভাতা ও পাকা দালান ঘর করে দেয়।
সোনাইমুড়ী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফজলুর রহমান বলেন, 'বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের ৫০তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় তার গ্রামের বাড়িতে, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন একাডেমি ও বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্মৃতি যাদুঘর মিলনায়তনে কোরআনখানি, আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।'
আলোচনা সভায় নোয়াখালী-১ আসনের সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিম এবং উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বীরশেষ্ঠ রুহুল আমীনের পরিবারের লোকজন উপস্থিত থাকবেন বলেও জানান তিনি।
Comments