বিপিন রাওয়াতের বর্ণাঢ্য জীবন

বিপিন রাওয়াত। ছবি: সংগৃহীত

তামিলনাড়ুতে ভারতীয় বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার এমআই-১৭ভি৫ বিধ্বস্ত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান (সিডিএস) বিপিন রাওয়াতসহ আরও ১২ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন দেশটির বিমান বাহিনী। বিপিন রাওয়াতের মৃত্যুর পরপরই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও তার মৃত্যুর খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু, কে ছিলেন বিপিন রাওয়াত? 

জেনারেল বিপিন রাওয়াত ছিলেন ভারতের প্রথম প্রতিরক্ষা প্রধান (সিডিএস)। তিনি গত বছরের ১ জানুয়ারি এই দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সিডিএস-এর দায়িত্ব গ্রহণের আগে তিনি চিফস অব স্টাফ কমিটির ৫৭তম চেয়ারম্যানের পাশাপাশি ভারতীয় সেনাবাহিনীর ২৭তম সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন।

পারিবারিক জীবন

বিপিন রাওয়াত ১৯৫৮ সালের ১৬ মার্চ উত্তরাখণ্ডের পাউরিতে জন্মগ্রহণ করেন। তাদের বিভিন্ন প্রজন্ম ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। তার বাবা লক্ষ্মণ সিং রাওয়াত ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত থাকাকালীন লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে উন্নীত হয়েছিলেন। তার মা ছিলেন উত্তরকাশীর প্রাক্তন বিধায়ক কিষাণ সিং পারমারের মেয়ে।

শিক্ষাজীবন

বিপিন রাওয়াত দেরাদুনের ক্যামব্রিয়ান হিল স্কুল এবং সিমলার সেন্ট এডওয়ার্ডস স্কুল থেকে তার স্কুলজীবন শেষ করেন। এরপর তিনি খাদাকওয়াসলার জাতীয় প্রতিরক্ষা একাডেমি এবং দেরাদুনের ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমিতে যোগ দেন। সেখানে তাকে 'সোর্ড অব অনার' প্রদান করা হয়।

রাওয়াত ওয়েলিংটনের ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজ (ডিএসএসসি) থেকে প্রশিক্ষণ নেন। এছাড়া তিনি ইউনাইটেড স্টেটস আর্মি কমান্ড এবং কানসাসের ফোর্ট লিভেনওয়ার্থের জেনারেল স্টাফ কলেজে উচ্চতর কমান্ড কোর্স সম্পন্ন করেন।

তিনি ডিফেন্স স্টাডিজে এমফিল ডিগ্রির পাশাপাশি মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যানেজমেন্ট এবং কম্পিউটার স্টাডিজে ডিপ্লোমা করেছেন।

সামরিক জীবন

রাওয়াত ১৯৭৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর ১১-গোর্খা রাইফেলসের ৫ম ব্যাটালিয়নে যোগ দেন। একই ইউনিটে তার বাবাও ছিলেন। মেজর হিসেবে তিনি জম্মু ও কাশ্মীরের উরিতে একটি কোম্পানির কমান্ডের নেতৃত্ব দেন। কর্নেল হিসেবে তিনি কিবিথুতে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর পূর্বাঞ্চলীয় সেক্টরে ৫ম ব্যাটালিয়ন ১১-গোর্খা রাইফেলসের নেতৃত্ব দেন। একজন ব্রিগেডিয়ার হিসেবে তিনি সুপুরে রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের ৫-সেক্টরের নেতৃত্ব দেন। এরপর তিনি ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে (মনুসকো) সপ্তম চ্যাপ্টার মিশনে বহুজাতিক ব্রিগেডের নেতৃত্ব দেন। সেখানে তিনি দু'বার ফোর্স কমান্ডারের প্রশংসায় ভূষিত হন।

মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতির পর রাওয়াত ১৯তম পদাতিক বিভাগের (উরি) জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে তিনি পুনেতে দক্ষিণ সেনাবাহিনীর দায়িত্ব গ্রহণের আগে ডিমাপুরে সদর দপ্তর তৃতীয় কোরের নেতৃত্ব দেন।

এছাড়াও, তিনি বিভিন্ন সময় স্টাফ অ্যাসাইনমেন্টের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এরমধ্যে ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমিতে (দেরাদুন) ইন্সট্রাকশনাল টেনার, মিলিটারি অপারেশনস ডিরেক্টরেটের জেনারেল স্টাফ অফিসার গ্রেড-২, কেন্দ্রীয় ভারতের রি-অরগানাইসড আর্মি প্লেইনস ইনফ্যান্ট্রি বিভাগের (আরএপিআইডি) লজিস্টিক স্টাফ অফিসার, মিলেটারি সেকরেটারিস ব্রাঞ্চের কর্নেল মিলিটারি সেক্রেটারি এবং ডেপুটি মিলিটারি সেক্রেটারি, জুনিয়র কমান্ড উইং-এর সিনিয়র ইন্সট্রাক্টরসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ইস্টার্ন কমান্ডের মেজর জেনারেল জেনারেল স্টাফ (এমজিজিএস) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

আর্মি কমান্ডার গ্রেডে উন্নীত হওয়ার পর রাওয়াত ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি জেনারেল অফিসার কমান্ডিং-ইন-চিফ (জিওসি-ইন-সি) সাউদার্ন কমান্ডের পদ গ্রহণ করেন। সেখানে অল্প সময়ের জন্য দায়িত্ব পালনের পর ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর ভাইস চিফ অব আর্মি স্টাফের পদ গ্রহণ করেন।

সম্মাননা ও পুরস্কার

মিলিটারি-মিডিয়া অধ্যয়নের ওপর গবেষণার জন্য চৌধুরী চরণ সিং বিশ্ববিদ্যালয় বিপিন রাওয়াতকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করে। ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমি তাকে 'সোর্ড অফ অনার' পুরস্কারে ভূষিত করেছিল।

এছাড়াও, তিনি পরম বিশিষ্ট সেবা পদক, উত্তম যুদ্ধ সেবা পদক (ইউওয়াইএসএম), অতি বিশিষ্ট সেবা পদক (এভিএসএম), যুদ্ধ সেবা পদক (ওয়াইএসএম), সেনা পদক, বিশিষ্ট সেবা পদক (ভিএসএম) ইত্যাদি পুরস্কারে পেয়েছেন।

সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত

২০১৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর বিপিন রাওয়াতকে ২৭তম সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয় ভারত সরকার। জেনারেল দলবীর সিং সোহাগ অবসর গ্রহণের পর ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিনি সেনাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ফিল্ড মার্শাল শ্যাম মানেকশ এবং জেনারেল দলবীর সিং সোহাগের পর তিনি গোর্খা ব্রিগেডের তৃতীয় সামরিক কর্মকর্তা হিসেব সেনাপ্রধান হন।

ভারতের প্রথম প্রতিরক্ষা প্রধান

২০১৯ সালের ভারতের প্রথম প্রতিরক্ষা প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় বিপিন রাওয়াতকে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনী- এই তিনটি পরিষেবাকে একীভূত করতে এই পদ তৈরি করে তাকে চিফ অব ডিফেন্স স্টাফের (সিডিএস) দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সূত্র: দ্য ফ্রি প্রেস জার্নাল

Comments

The Daily Star  | English

Chief adviser returns home after joining COP29 in Baku

Chief Adviser Professor Muhammad Yunus returned home this evening wrapping up his Baku tour to attend the global climate meet Conference of Parties-29 (COP29)

1h ago