‘ঘরের কাজের মূল্যায়ন না থাকায় কর্মক্ষমতা কমে নারীদের’
মূল্যায়ন না থাকায় নারীর সেবামূলক ও গৃহস্থালি কাজের গুণগত মান প্রভাবিত হয়, শ্রমের মজুরি না পাওয়ায় তাদের কর্মক্ষমতাও কমে যায়। আজ বুধবার একটি গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেছেন।
ঢাকায় দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) এবং দ্য ডেইলি স্টার যৌথভাবে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।
বৈঠকে বক্তারা বলেন, সেবামূলক শ্রমের বাজারে নারীদের প্রবেশ করতে ও পেশাজীবী হিসেবে নিজেদের তৈরি করতে ঘরের কাজে মূল্যায়ন না পাওয়া একটা বাধা হিসেবে কাজ করে।
বক্তারা বলেন, নারীদের সেবামূলক ও গৃহস্থালি কাজের আর্থিক মূল্য ২০১৬-১৭ অর্থবছরের হিসেবে দেশের জিডিপির প্রায় ৪০ শতাংশ ছিল। এ কারণে এর স্বীকৃতি দেওয়া অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়েমা হক বিদিশা মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি জাতীয় আয় পরিমাপের পদ্ধতিতে (এসএনএ) গৃহস্থালি কাজের পারিশ্রমিক অন্তর্ভুক্ত করতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের সুপারিশ করেন।
তিনি বলেন, 'অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করে (যেমন গ্রামীণ নারীদের জন্য নলকূপ স্থাপন) গৃহস্থালি ও সেবামূলক কাজে নারীর কাজ আরও সহজ করা সম্ভব।'
'মজুরিবিহীন কাজের বোঝা কমাতে সরকার কমিউনিটিভিত্তিক বা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ডে-কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। পাশাপাশি এ ধরনের বেসরকারি খাতে কর রেয়াত, ডে-কেয়ার স্কিম বা আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা সম্ভব। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য এটা খুবই কার্যকর হবে,' যোগ করেন তিনি।
বৈঠকে এমজেএফ এর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, 'আমাদের সেবামূলক কাজের সংজ্ঞা পরিবর্তন করতে হবে। পাশাপাশি এ ধরনের কাজের যথাযথ মর্যাদা দিতে হবে যেন এগুলোকে কাজ না বলে কেউ ধরে না নেয়।'
'সেবামূলক কাজের অর্থনৈতিক গুরুত্বকে উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এসডিজির ৫ নম্বর গোলের ৪ নম্বরে জনসেবামূলক, অবকাঠামোগত এবং সামাজিক নিরাপত্তা নীতিমালায় সেবামূলক ও গার্হস্থ্য কাজকে স্বীকৃতি দেওয়ার এবং মূল্যায়ন করার উল্লেখ আছে,' যোগ করেন তিনি।
শাহীন আনাম মূলধারার শ্রমবাজারে সেবামূলক কাজের অন্তর্ভুক্তি এবং নারীর থেকে বোঝা কমাতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের কথাও তুলে ধরেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সোমা দে বলেন, 'গৃহস্থালি কাজে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য সচেতনতা প্রয়োজন যেন নারীরা কখনো মনে না করেন যে তাদেরই সব কাজ করতে হবে।'
'সমাজে নারীদের প্রতিচ্ছবি পরিবর্তন করতে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে,' যোগ করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উম্মে ওয়ারা বলেন, 'আমাদের সংবিধানের ২০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, 'কর্ম হলো কর্মক্ষম প্রত্যেক নাগরিকের পক্ষে অধিকার, কর্তব্য ও সম্মানের বিষয় এবং প্রত্যেকের যোগ্যতানুসারে ও প্রত্যেককে কর্মানুযায়ী পারিশ্রমিক দিতে হবে।' কিন্তু সেবামূলক কাজের ক্ষেত্রে দেখা যায়, নারীরা নিজেরাই এর বিপরীতে টাকা নিতে মানসিকভাবে প্রস্তুত নয়।'
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আজকের পত্রিকার সম্পাদক অধ্যাপক গোলাম রহমান, বাংলা ট্রিবিউনের চিফ রিপোর্টার উদিসা ইসলাম, প্রথম আলোর সাংবাদিক নাজনীন আক্তার, ডেইলি স্টারের সাংবাদিক সুপ্রভা তাসনিম, সমকালের সাংবাদিক সাজিদা ইসলাম পারুল প্রমুখ।
Comments