অদ্ভুত অ্যাপ্রোচে টপাটপ উইকেট বিলিয়ে মহাবিপাকে বাংলাদেশ

ফাইল ছবি: ফিরোজ আহমেদ

বৃষ্টির বাগড়ায় ম্যাচের লম্বা সময় ভেসে যাওয়ায় ফল বের করা কঠিন। পাকিস্তান তাই আগেভাগে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করল। কিন্তু চা-বিরতির আগে বাংলাদেশ ব্যাট করতে নামল অদ্ভুত এক অ্যাপ্রোচে। স্বাগতিকদের ব্যাটারদের দেখে এটা টেস্ট ম্যাচ কিনা বোঝা মুশকিল হয়ে দাঁড়াল! চা বিরতির পরও জারি থাকল সেই অ্যাপ্রোচ। উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য খুব কঠিন না হলেও তাড়াহুড়োয় টপাটপ উইকেট হারিয়ে মহাবিপাকে পড়ল স্বাগতিকরা। যে কায়দায় উইকেটগুলো পড়ল, সেটাই তৈরি করল বিরাট প্রশ্ন।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ভেজা মাঠের কারণে নির্ধারিত সময়ের প্রায় দেড় ঘণ্টা পর শুরু হয়েছিল সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের চতুর্থ দিনের খেলা। আলোকস্বল্পতায় খেলা শেষ হয়েছে প্রায় ঘণ্টাখানেক আগে। পাকিস্তানের ৪ উইকেটে ৩০০ রানের জবাবে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ২৬ ওভারে ৭ উইকেটে তুলেছে ৭৬ রান। ক্রিজে আছেন সাকিব আল হাসান ৩২ বলে ২৩ ও তাইজুল ইসলাম ১০ বলে শূন্য রানে। ২২৪ রানে পিছিয়ে থেকে আগামীকাল পঞ্চম ও শেষ দিনের খেলা শুরু করবেন তারা।

ফলো-অন এড়াতে বাংলাদেশের দরকার আরও ২৫ রান। তাদের হাতে রয়েছে ৩ উইকেট। বৃষ্টি ম্যাচের বড় সময় জুড়ে রাজত্ব করলেও তালগোল পাকানো ব্যাটিংয়ে হেরে যাওয়ার অসম্ভব সম্ভাবনাও মুমিনুল হকদের জন্য সম্ভাবনাময় হয়ে উঁকি দিচ্ছে।

আলো কম থাকায় শাহিন শাহ আফ্রিদি প্রথম ওভার করার পর আর পেসার আনতে পারেনি পাকিস্তান। তবে অফ স্পিনার সাজিদ খানই কাঁপিয়ে দেন বাংলাদেশকে। ১২ ওভারে ৩৫ রানে তিনি নেন ৬ উইকেট। বাকিটি রানআউট। উইকেট না পেলেও দারুণ বল করে সাজিদকে যোগ্য সঙ্গ দেন বাঁহাতি স্পিনার নুমান আলি। দিনের শেষ ওভারে হাত ঘোরান পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম। অল্পের জন্য তাইজুলকে আউট করতে পারেননি তিনি।

চা বিরতি পর্যন্ত বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ১০.১ ওভারে ৩ উইকেটে ২২ রান। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে বল তুলে দেওয়া হয় সাজিদের হাতে। তার করা পঞ্চম বলটি ক্রিজ ছেড়ে এগিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন অভিষিক্ত মাহমুদুল হাসান জয়। কিন্তু অফ স্টাম্পের বাইরে বেরিয়ে যাওয়া বলটি তার ব্যাট ছুঁয়ে জমে পড়ে স্লিপে থাকা বাবরের হাতে। বাংলাদেশের ২৪তম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট অভিষেকে শূন্য রানে আউট হন জয়।

চট্টগ্রামে আগের টেস্টে ব্যর্থ আরেক ওপেনার সাদমান ইসলামও টেকেননি। ধৈর্যচ্যুতি ঘটিয়ে বাজে শটে উইকেট খোয়ান তিনি। জায়গায় দাঁড়িয়ে স্কয়ার কাট করতে গিয়েছিলেন। কিছুটা লাফিয়ে ওঠা বলে ঠিকমতো ব্যাটের সংযোগ ঘটাতে পারেননি তিনি। সহজ ক্যাচ নেন হাসান আলি। ২৮ বল খেলে তার রান ৩। দ্বিতীয় সেশনের শেষ বলে হাসানের সরাসরি দুর্দান্ত থ্রোতেই কাটা পড়েন অধিনায়ক মুমিনুল। পয়েন্টে ঠেলে দ্রুত রান নিতে গিয়ে তিনি মাঠ ছাড়েন ২ বলে ১ রান করে।

তৃতীয় সেশনের শুরুতে অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম সবাইকে যেন ছাড়িয়েই যান! সাজিদের বলে এলবিডব্লিউ থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন আম্পায়ার্স কলে। ভেতরে ঢোকা পরের বলে মারেন বাউন্ডারি। কিন্তু এরপরই স্লগ সুইপ করতে গিয়ে মিড-উইকেটে ধরা দেন ফাওয়াদ আলমের হাতে। তার সংগ্রহ ৮ বলে ৫ রান। ৩১ রানেই পড়ে বাংলাদেশের ৪ উইকেট। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান লিটন দাসও সাজঘরে ফেরেন মুশফিকের মতো একই অ্যাপ্রোচে। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে বিলাসী শট খেলতে গিয়ে গড়বড় করে জীবন হারান তিনি। দারুণ একটি ফিরতি ক্যাচ নেন সাজিদ। ১২ বল খেলে লিটনের রান ৬।

তিনে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত বেঁচে যান কয়েক দফা। নুমান তাকে প্রায় ঝুলিতে পুরেই ফেলেছিলেন। তার ব্যাট ছুঁয়ে যাওয়া বল ডানদিকে সরে দারুণভাবে গ্লাভসবন্দি করেন উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ রিজওয়ান। কিন্তু বল ব্যাটে লাগেনি ভেবে শান্ত নেন রিভিউ। সেখানে দেখা যায়, নুমানের বলটি ছিল নো। তবে শেষরক্ষা হয়নি। সাজিদের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরত যান শান্ত। ৫০ বলে ৩০ রান করার পাশাপাশি একটি রিভিউ নষ্ট করেন তিনি।

দিনের শেষ শিকারটিও সাজিদের। সজোরে সুইপ করতে গিয়ে স্টাম্প হারান মেহেদী হাসান মিরাজ। ৮ বল খেলে রানের খাতা খুলতে ব্যর্থ হন তিনি। তাতে ৭১ রানে ৭ উইকেট খোয়ায় বাংলাদেশ। আলোক স্বল্পতায় খেলা শেষ হওয়ার আগের বাকিটা সময় পার হয় সাকিব ও তাইজুলের ব্যাটে।

এর আগে দ্বিতীয় সেশনের পানি পানের বিরতির কিছুক্ষণ পর প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে সফরকারী পাকিস্তান। ৯৮.৩ ওভার খেলে তারা ৪ উইকেট হারিয়ে তোলে ঠিক ৩০০ রান। ফাওয়াদ ৯৬ বলে ৫০ রানে অপরাজিত থাকেন। তার আগে ফিফটি তুলে নেওয়া উইকেটরক্ষক-ব্যাটার রিজওয়ান ৯৪ বলে করেন অপরাজিত ৫৩ রান। তাদের অবিচ্ছিন্ন পঞ্চম উইকেট জুটির রান ১৮৪ বলে ১০৩।

বৃষ্টির বাধা এড়িয়ে খেলা মাঠে গড়ালে শুরুটা দারুণ হয় বাংলাদেশের। ৫ ওভারের মধ্যে তারা তুলে নেয় ২ উইকেট। আজহার আলিকে ফেরান পেসার ইবাদত হোসেন। পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবরকে বিদায় করেন সৈয়দ খালেদ আহমেদ। তিন বছরের ক্যারিয়ারে তৃতীয় টেস্ট খেলতে নেমে এই সংস্করণে নিজের প্রথম উইকেটের স্বাদ পান তিনি। এরপর স্বাগতিকদের হতাশায় ঠেলে রান বাড়ান ফাওয়াদ ও রিজওয়ান।

শেষবেলায় একের পর এক উইকেট হারানোয় সকালের উল্লাস উবে গিয়ে সামনে আরও কঠিন সময় অবশ্য চোখ রাঙাচ্ছে বাংলাদেশকে। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

(চতুর্থ দিন শেষে)

পাকিস্তান প্রথম ইনিংস: ৯৮.৩ ওভারে ৩০০/৪ ইনিংস ঘোষণা (আবিদ ৩৯, শফিক ২৫, আজহার ৫৬, বাবর ৭৬, ফাওয়াদ ৫০*, রিজওয়ান ৫৩*; ইবাদত ১/৮৮, খালেদ ১/৪৯, সাকিব ০/৫২, তাইজুল ২/৭৩, মিরাজ ০/৩৭)

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ২৬ ওভারে ৭৬/৭ (সাদমান ৩, জয় ০, শান্ত ৩০, মুমিনুল ১, মুশফিক ৫, লিটন ৬, সাকিব ২৩*, মিরাজ ০, তাইজুল ০*; শাহিন ০/০, নুমান ০/৩৩, সাজিদ ৬/৩৫, বাবর ০/১)।

Comments

The Daily Star  | English

Confronting Dhaka’s battery-run rickshaw dilemma

One of the more recent manifestations of informal urban expansion is the proliferation of battery-run rickshaws.

6h ago