আঙ্গুল নেই, কবজি দিয়ে লিখেই এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন মোবারক

মোবারক আলী কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ফুলবাড়ী পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। ছবি: স্টার

জন্ম থেকেই দুই হাতের নিচের অংশ নেই মোবারক আলীর। পড়ালেখার শুরুতে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পা দিয়ে লিখেছেন। পরে হাতের কবজিকে ব্যবহার উপযোগী করতে শুরু করেন। আপ্রাণ চেষ্টা করে তিনি হাতের কবজি দিয়ে লিখতে শুরু করেন এবং এখনও কবজি দিয়ে লিখে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছেন। হাতের কবজি দিয়েই সহপাঠীদের চেয়ে অনেক সুন্দর লিখেন তিনি।

মোবারক আলী কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ফুলবাড়ী পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। দুই হাতে আঙ্গুল না থাকলেও সুস্থ-স্বাভাবিক শিক্ষার্থীর মতোই কবজি দিয়ে লিখে পরীক্ষা দিচ্ছেন তিনি।

মোবারক আলী কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামের দিনমজুর এনামুল হকের ছেলে।

২০১৮ সালে কাশিপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন মোবারক। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও কঠোর পরিশ্রম করে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন।

মোবারক আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সকলে আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি যেন ভালো ফলাফল করে বাবা-মাসহ শিক্ষকদের মুখ উজ্জ্বল করতে পারি।'

'আগে হাতের কবজি দিয়ে লিখতে খুব কষ্ট হতো। এখন অভ্যাস হয়েছে। তবে এখনও কষ্ট হয়। আমি সংগ্রাম করছি আর সংগ্রাম করে বাঁচতে শিখেছি। আমার স্বপ্ন উচ্চ শিক্ষিত হওয়া। বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার ইচ্ছে আছে', বলেন তিনি।

দুই হাতে আঙ্গুল না থাকলেও সুস্থ-স্বাভাবিক শিক্ষার্থীর মতোই কবজি দিয়ে লিখে পরীক্ষা দিচ্ছেন মোবারক। ছবি: স্টার

মোবারক আরও বলেন, 'আমার বাবা একজন দিনমজুর। তার পক্ষে আমার পড়াশোনার খরচ যোগানো কষ্টের। এটাই আমার জীবনের একমাত্র সমস্যা। তবুও আমি চেষ্টা করে যাব লক্ষ্যে পৌঁছানোর।'

মোবারক আলীর বাবা এনামুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তারাও মোবারক আলীকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন। তার ছেলে মেধাবী। সে নিজের চেষ্টায় পড়াশুনা করছে।

'আমার আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় মোবারকের চাহিদা সবসময় মেটাতে পারি না। তবে আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব মোবারককে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে', বলেন তিনি।

মোবারক আলীর সহপাঠী শরিফুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মোবারক হাতের কবজি দিয়ে লিখলেও তার লেখা অনেকের চেয়ে সুন্দর ও ঝকঝকে। সে মেধাবী শিক্ষার্থী। পড়াশুনার পাশাপাশি খেলাধুলাতেও সে দক্ষ। তার অনেক গুণ আছে।'

কাশিপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জায়দুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মোবারক প্রতিবন্ধী হলেও যথেষ্ট মেধাবী এবং পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলায়ও খুবই পারদর্শী। আমি আশা করছি, সে ভালো ফলাফল করে বাবা-মা, শিক্ষক ও এলাকাবাসীর মুখ উজ্জ্বল করবে।'

ফুলবাড়ী পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রের সচিব গোলাম কিবরিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মোবারক অন্য শিক্ষার্থীদের মতোই প্রতিটি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাকে বাড়তি সময় দেওয়া হয়। কিন্তু সে মেধাবী শিক্ষার্থী, নির্দিষ্ট সময়েই পরীক্ষার খাতায় লেখা শেষ করছে।'

Comments

The Daily Star  | English
BDR massacre

BDR Massacre: Commission may ask for Hasina extradition or question her in India

"It is not enough to say that India is involved; evidence must be presented in support of it"

3h ago