অপারেশন চন্দ্রপুর: অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের চরম মূল্য দিতে হয়েছিল যেখানে
মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে অসফল অপারেশনগুলোর একটি ছিল অপারেশন চন্দ্রপুর বা চন্দ্রপুর লাটুমুড়ার যুদ্ধ। অপারেশন চন্দ্রপুরের কারণে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় মিত্র বাহিনীর উভয়েরই। অপারেশন চন্দ্রপুর ছিল এক অপরিকল্পিত এবং অপরিণামদর্শী যুদ্ধ। এই যুদ্ধের কারণে ব্যাপক মূল্য চুকাতে হয়েছিল ৯ম ইস্ট বেঙ্গলকে। এই অপারেশনে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্র বাহিনীর বহু সৈন্য শহীদ হন। পরবর্তীতে ভারতীয় ৭৩ মাউন্টেন ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার তুলিকে কোট মার্শালের মুখোমুখি হতে হয়েছিল এবং তিনি চাকরি হারান।
চন্দ্রপুরের অবস্থান
চন্দ্রপুর ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা স্টেশন থেকে তিন মাইল উত্তরে ভারতের সীমান্তঘেঁষা লাটুমুড়া পাহাড়ের পাদদেশে একটি গ্রাম। কসবা এবং ইমামবাড়ী রেলস্টেশনের মাঝামাঝি পূর্বদিকে সীমান্তের কাছাকাছি চন্দ্রপুরের অবস্থান।
অপারেশন চন্দ্রপুর কেন?
পাকিস্তানি বাহিনীর বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে চন্দ্রপুর এবং লাটুমুড়া দখলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যে পরিকল্পনার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানি বাহিনীর ২৭ ব্রিগেডের অধীনস্থ ১২ ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের এক কোম্পানি ২২ অক্টোবর থেকে চন্দ্রপুরে প্রতিরক্ষা অবস্থানে দেওয়া হয়েছিল। তাদের ধারণা ছিল যদি এটি পাকিস্তানি বাহিনীর দখলে থাকে তবে ভারতীয় সেনারা সীমান্ত অতিক্রম করে এখানে আসতে পারবে না। পাকিস্তানিদের এমন পদক্ষেপে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর নানান ছক আঁকতে থাকে। মুক্তিবাহিনীর জন্য এই চন্দ্রপুর ও লাটুমুড়া দখল করা ছিল প্রথাগত আক্রমণের যোগ্যতার পরীক্ষাস্বরূপ। তাই এই আক্রমণ করার ভীষণ প্রয়োজন ছিল।
যেভাবে পরিকল্পনা হয়
নভেম্বরের ১৮ তারিখে ভারপ্রাপ্ত সেক্টর কমান্ডার মেজর আবদুস সালেক চৌধুরী এবং ৯ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক মেজর আইনউদ্দিন ত্রিপুরার মেলাঘরে ভারতীয় বাহিনীর ৭৩ মাউন্টেন ব্রিগেড হেড কোয়ার্টারে এই ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার তুলির সঙ্গে বৈঠক করেন। এই বৈঠকেই ব্রিগেডিয়ার তুলি মেজর আবদুস সালেক এবং মেজর আইনউদ্দিনকে চন্দ্রপুর এবং লাটুমুড়ায় আক্রমণের ছক তৈরির নির্দেশ দেন। এসময় মেজর আইনউদ্দিন ব্রিগেডিয়ার তুলিকেই পরিকল্পনা করার অনুরোধ জানান। তখন ব্রিগেডিয়ার তুলি আক্রমণের পরিকল্পনা করেন।
অপারশন চন্দ্রপুরের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক এবং তীব্র জেদ
ব্রিগেডিয়ার তুলির সেই সিদ্ধান্ত মনঃপুত হলোনা মেজর আইনউদ্দিন, মেজর আবদুস সালেক কারোরই। কারণ মেজর সালেকের তীব্র আশঙ্কা ছিল চন্দ্রপুর আক্রমণ করলে লাটুমুড়া পাহাড় থেকে অবস্থানরত পাকিস্তানি বাহিনী সহজেই মুক্তিবাহিনীর উপর আক্রমণ করে ব্যাপক ক্ষতি করতে পারবে। কিন্তু ব্রিগেডিয়ার তুলি বারবার বলতে থাকে আখাউড়া দখল করতে হলে চন্দ্রপুর লাটুমুড়া দখল করতেই হবে। এসময় ব্রিগেডিয়ার তুলির সঙ্গে মেজর সালেক এবং মেজর আইনউদ্দিনের তীব্র বিতর্ক হয়। মেজর আইনউদ্দিন বারবার বলছিলেন, পাকিস্তানিদের প্রতিটি অস্ত্রের অবস্থান যথোপযুক্ত কায়দায় তৈরি যা সহজে ভয়ংকর আক্রমণ করতে পাড়ে। এ ছাড়া উঁচু স্থানে তারা আছে বলে আমাদের পক্ষে তাদের উপর আক্রমণ করাও খুব কঠিন। কিন্তু ব্রিগেডিয়ার তুলির এক কথা—যেভাবেই হোক এই আক্রমণ করতেই হবে।
কিছুদিন আগেই গঠিত হয়েছিল ৯ম ইস্ট বেঙ্গল। সুতরাং এই সদ্যগঠিত ব্যাটালিয়নটি নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর শক্ত প্রতিরক্ষার ওপর আক্রমণকে আত্মঘাতী হবে বিবেচনা করে কিছুদিন সময় চান মেজর আইনউদ্দিন। এর প্রত্যুত্তরে ব্রিগেডিয়ার তুলি বলেন, 'তোমরা স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করছ বলছ, কিন্তু তোমরা তো কনভেনশনাল যুদ্ধের জন্য উপযুক্ত নও।' এসময় মেজর আইনউদ্দিন ব্রিগেডিয়ার তুলিকে বলেন, 'আপনি জীবনে কয়টা যুদ্ধ করেছেন? আমি আপনার চেয়ে বেশি যুদ্ধ করেছি।' সামরিক প্রথার বাইরে এসময় বেশ কিছু রূঢ় কথা শোনালেন মেজর সালেকও।
শেষ পর্যন্ত ব্রিগেডিয়ার তুলির অনড় মনোভাবের কাছে পরাজিত হন মেজর আবদুস সালেক চৌধুরী এবং মেজর আইনউদ্দিন।
শেষ পর্যন্ত একদম অনিচ্ছায় বাধ্য হয়েই মেজর আইনউদ্দিন এবং মেজর আবদুস সালেক চৌধুরী সিদ্ধান্ত নিলেন এই অপারেশনটি করা হবে। তবে মেজর আইনউদ্দিন ব্রিগেডিয়ার তুলিকে শর্ত দিলেন, আমাদের যতোজন মুক্তিযোদ্ধা অপারেশনে অংশ নিবেন ঠিক ততোজন ভারতীয় সৈন্যকেও যেতে হবে। ব্রিগেডিয়ার তুলি মেজর আইনউদ্দিনের এই প্রস্তাব মেনে নিলেন। শেষে পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয় অপারেশনটি হবে ২২ নভেম্বর রাতে।
আক্রমণের রেকি
১৯, ২০ এবং ২১ তারিখে ৯ম ইস্ট বেঙ্গলের কমান্ডার মেজর আইনউদ্দিন এবং ভারতীয় বাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল কোলি নিয়মিতভাবে এই অপারেশনের রেকি করতে লাগলেন। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে দিনরাত রেকি করেও মেজর আইনউদ্দিন এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল কোলি কোন দিক থেকে আক্রমণের অবস্থান হবে তা পূর্ণ ধারণা পেলেন না। কারণ ২০ ও ২১ নভেম্বর ভারতীয় ৫৭ আর্টিলারি ব্রিগেড বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে গোলাবর্ষণ শুরু করে। এসময় বেশ কিছু গোলা চন্দ্রপুর ছাড়াও ব্রাহ্মণগাঁও, গোপীনাথপুর এবং তিনলাখপুরে এসে পড়ে। অন্যদিকে মেজর আইন উদ্দিন এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল কোলি আর্টিলারি ফায়ারের কারণে কাছাকাছি থেকে রেকি করা সম্ভব ছিল না। আবার তারা রেকি করার সময় দেখলেন যে পাশ থেকেই আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা তারা ভাবছেন ঠিক সেখানেই খুব সহজে হামলা করতে পারবে পাকিস্তানি বাহিনী। ব্রিগেডিয়ার তুলি এসময় গভীর রাতে ট্যাংক নিয়ে এসে টহল দিতেন যেন পাকিস্তানি বাহিনী বুঝতে পারে এলাইড ফোর্সে প্রচুর ট্যাংক আছে।
আক্রমণের পজিশন
অপারেশন চন্দ্রপুরে অংশ নিয়েছিলেন মুক্তিবাহিনীর নবম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের আলফা ও চার্লি কোম্পানি, ভারতীয় বাহিনীর ৭৩ মাউন্টেন ব্রিগেড, ১৯ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট ও ৫৭ আর্টিলারি ব্রিগেড। অন্যদিকে পাকিস্তানি বাহিনীর ছিল ১২ ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের একটি কোম্পানি এবং একটি ১০৫ মিলিমিটার হাউটজার গান।
সিদ্ধান্ত হয় আক্রমণ শুরু হবে চন্দ্রপুরের দক্ষিণ দিক থেকে। বামে রেললাইনের সঙ্গে থাকবে ৯ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের দুটি কোম্পানি। ডানে থাকবে ১৯ পাঞ্জাব পাঞ্জাব রেজিমেন্টের দুটি কোম্পানি। অন্যদিকে দুই রেজিমেন্টের সহ অধিনায়কেরা আক্রমণে থাকবেন। সাপোর্টে থাকবে ভারতীয় বাহিনীর ৫৭ আর্টিলারি ব্রিগেড।
আক্রমণ শুরু
২১ নভেম্বর রাতেই সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হারুন এবং সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট খন্দকার আজিজুল ইসলাম তাদের স্বীয় কোম্পানি নিয়ে এসেম্বলি এলাকায় চলে আসেন। ২২ নভেম্বর ভোর ৪টার দিকে তারা অ্যাসল্ট লাইন অতিক্রম করা মাত্রই আর্টিলারি ফায়ার শুরু করে ভারতীয় বাহিনীর ৫৭ আর্টিলারি ব্রিগেড। মুহূর্তের মধ্যে মেশিনগানের সমন্বিত গুলিবর্ষণের মধ্য দিয়ে পাল্টা আঘাত আসে পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা অবস্থান থেকে। এসময় পাকিস্তানি বাহিনীর আর্টিলারি ফায়ারের এয়ারবা প্রিন্টার ও বৃষ্টির মতো মেশিনগানের গুলিতে হতাহতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় সৈন্যদের। কারণ পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থান ছিল সুবিধাজনক উঁচুতে। যার ফলে তারা নিখুঁত লক্ষ্যে আঘাত হানতে পেরেছিলও। অন্যদিকে মুক্তিবাহিনীর অবস্থান নিচে থাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর উপর আঘাত হানতে প্রচণ্ড বেগ পেতে হচ্ছিল।
যুদ্ধের প্রথম দিকেই ৯ম ইস্ট বেঙ্গলের কোম্পানি কমান্ডার সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট খন্দকার আজিজুল ইসলাম শহীদ হন। তার কোম্পানির সৈন্যরা শেষ তাকে পাকিস্তানিদের বাংকারের ওপর হাতাহাতি যুদ্ধ করতে দেখেছে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই শহীদ হন ১৯ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের এক শিখ মেজরও।
২২ নভেম্বর সারা রাত একটানা যুদ্ধ চলে। একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনারা সেখান থেকে পিছু হটে। মুক্তি ও মিত্রবাহিনী চন্দ্রপুর দখল করে। কিন্তু বেশিক্ষণ এ অবস্থান তাদের পক্ষে ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। কয়েক ঘণ্টা পর পাকিস্তানি সেনারা আবার প্রচণ্ড আক্রমণ চালিয়ে চন্দ্রপুর-লতুয়ামুড়া দখল করে নেয়। কিন্তু হঠাৎ পাকিস্তানিদের ১০৫ মি.মি. গোলার আঘাতে দুইটি মিডিয়াম গান সাইট নষ্ট হয়ে যায়। এ সময় গান পজিশনের থাকা ১২ জন ক্রু-ও আহত হন। বেশ কিছু ওয়্যারলেসসহ মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর সৈন্য শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধারা খোলা আকাশের নিচে থাকায় এবং পাকিস্তানি সৈন্যরা বাঙ্কারের ভিতরে নিশ্ছিদ্র অবস্থানে থাকায় একের পর এক মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় সৈন্য শহীদ হচ্ছিলেন। ভারতীয় গান পজিশনের ছয় জন সৈন্য শহীদ হওয়ায় ভারতীয় বাহিনীর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবস্থা এক প্রকার ভেঙেই পড়ে। আচমকা গোলা বর্ষণে ভারতীয় গান পজিশনের ছয় জন সৈন্য শহীদ হলে ভারতীয় বাহিনীর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়ে।
ওয়্যারলেস সংযোগ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ার ফলে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনী আর্টিলারির সহায়তাও বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে প্রাণহানি হতে হতে চরম আকার ধারণ করে। টিকতে না পেরে বাধ্য হয়ে এক পর্যায়ে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর সমন্বয়ে তৈরি যৌথ বাহিনী পিছু হটে।
অপারেশনের ফলাফল
অপারেশন চন্দ্রপুরে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনী উভয়েই চরম ক্ষতির শিকার হয়। চন্দ্রপুরের যুদ্ধ ছিল যৌথবাহিনীর জন্য প্রচণ্ড আত্মঘাতী এক সিদ্ধান্ত। এই যুদ্ধে ৯ম ইস্ট বেঙ্গলের লেফটেন্যান্ট খন্দকার আবদুল আজিজ সহ মোট ২২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। আহত হন ৩৪ জন মুক্তিযোদ্ধা। একই সঙ্গে ভারতীয় বাহিনীর কোম্পানি কমান্ডার এক শিখ মেজর সহ ৪৫ জন সেনা এই যুদ্ধে শহীদ হন। ভারতীয় গান পজিশনের ছয় জন সৈন্য শহীদ হয়েছিলেন। ভারতীয় বাহিনীর সর্বমোট ১৬৪ জন এই যুদ্ধে হতাহত হন। আহত মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর সৈন্যদের বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী।
পরদিন ২৩ তারিখ বিকেলে মেজর আইনউদ্দিন চন্দ্রপুরে আহত ও শহীদ সৈন্যদের আনার জন্য কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা পাঠালে তাদের মধ্যেও কয়েকজন পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে শহীদ হন। শেষমেশ মাত্র আট জন মুক্তিযোদ্ধার লাশ আনতে পেরেছিল মুক্তিবাহিনী। এই যুদ্ধের পর ৯ম ইস্ট বেঙ্গলের মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ভেঙে পড়ে। কারণ আর কোনো রণাঙ্গনে এত মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হননি। মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ফিরিয়ে আনতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। যার ফলশ্রুতিতে ৭৩ মাউন্টেন ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার তুলিকে কোট মার্শালের মুখোমুখি হতে হয়েছিল এবং তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল।
পরাজয়ের কারণ
চন্দ্রপুর যুদ্ধের পরাজয়ের অন্যতম কারণ ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর শক্ত অবস্থান ও দুর্ভেদ্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পরও সেখানে আক্রমণ চালিয়েছে যৌথ বাহিনী। চন্দ্রপুর আক্রমণের প্রয়োজন ছিল কিন্তু সেক্ষেত্রে সমন্বিত আক্রমণ ও ব্যাপক পরিকল্পনা ও সংগঠিত আক্রমণের প্রয়োজন ছিল অথচ এই যুদ্ধে সঠিক পরিকল্পনা বা সমন্বিত পরিকল্পনার ব্যাপক অভাব ছিল। দ্বিতীয়ত এখানে ভুল পরিকল্পনায় আর্টিলারি ফায়ার হয়েছিল। যার ফলে সঠিকভাবে রেকি করা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধারা খোলা আকাশের নিচে থাকায় এবং পাকিস্তানি সৈন্যরা বাঙ্কারের ভিতরে নিশ্ছিদ্র অবস্থানে থাকায় ব্যাপক হতাহত হয়েছিল ৯ম ইস্ট বেঙ্গলের। অন্যদিকে ভারতীয় গান পজিশনের ছয় জন সৈন্য শহীদ হওয়ায় ভারতীয় বাহিনীর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবস্থা এক প্রকার ভেঙেই পড়েছিল। সর্বোপরি সঠিক নির্দেশনা এবং পরিকল্পনা ছাড়াও এই যুদ্ধের পরাজয় মূলত ৭৩ মাউন্টেন ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার তুলির একগুঁয়েমির ফল। মেজর আইনউদ্দিন এবং মেজর আবদুস সালেক চৌধুরীর বারবার আপত্তি সত্ত্বেও এই যুদ্ধ হয়েছিল।
সূত্র- বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধঃ দলিলপত্র দশম খণ্ড।
মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান, দ্বিতীয় খণ্ড / বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
Comments