আগ্রাসী অস্ট্রেলিয়া নাকি ঠাণ্ডা মাথার নিউজিল্যান্ড?

Australia vs New Zealand
অ্যারন ফিঞ্চ না কেইন উইলিয়ামসন? কার হাতে উঠবে ট্রফি। ছবি: আইসিসি

তাসমান সাগর পারের দুই প্রতিবেশী দেশ অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ড। কাছাকাছি অঞ্চলের মানুষ হলেও কিন্তু চরিত্রে আছে বেশ ভিন্নতা। বিশেষ করে খেলার মাঠে অস্ট্রেলিয়ানরা দাপট দেখাতে চায় ঝাঁজালো শরীরী ভাষায়, আগ্রাসী ক্রিকেটে। নিউজিল্যান্ডের সুরটা আবার ঠাণ্ডা মেজাজের। ক্রিকেটীয় স্কিলের পাশাপাশি শরীরী ভাষাতেও প্রতিপক্ষকে দমিয়ে দিত চায় অজিরা, কিউইরা আবার সব কিছুতেই বিনীত। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে লড়াই হবে তাই দুই ভিন্ন ঘরানার ক্রিকেটেরও।

প্রায় এক মাসের লড়াই শেষে রোববার দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে শিরোপা জেতার মঞ্চে মুখোমুখি অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড। বিশ্বকাপ শুরুর আগে সাম্প্রতিক ফর্ম বিচারে যাদের বাজির দর এতটা চড়া ছিল না।কিন্তু বিশ্বকাপের শুরু থেকে কন্ডিশনে দারুণ মানিয়ে হিসেবে ক্রিকেটে ছুটে চলে তাদের পথচলা।

গ্রুপ পর্বে দুদলই হেরেছে একটি করে ম্যাচ। মজার কথা হলে এতেও আছে বিপরীত ধর্মী এক মিল। নিজেদের প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ড হেরেছিল পাকিস্তানের কাছে। সেই পাকিস্তানকেই হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে অস্ট্রেলিয়া। আবার নিজেদের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে হারে অস্ট্রেলিয়া। সেই ইংল্যান্ডকে বিদায় করে ফাইনালে পা রাখে নিউজিল্যান্ড।

দু'দলই এই প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে নামছে। ওয়ানডে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ চারবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার জন্য সংক্ষিপ্ততম আসরের শ্রেষ্ঠত্বের পূর্ণতাও দেখানোর মিশন। নিউজিল্যান্ডের কাছে রঙিন পোশাকে প্রথম কোন আইসিসি শিরোপা ঘরে তোলার চ্যালেঞ্জ। এর আগে ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল দু'দল। সেবার একপেশে লড়াইয়ে জিতেছিল অজিরা। 

এবার বিশ্বকাপের আগে চারটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ হেরে এসেছিল অজিরা। তবে দুটোতেই আবার তারা খেলিয়েছে দ্বিতীয় সারির দল। বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশে পুরোপুরি ভিন্ন দল খেলিয়ে সিরিজ হেরেছে নিউজিল্যান্ড। কিন্তু এসব হার আসলে কোন রকম প্রভাবই ফেলেনি। আসল মঞ্চে মূল খেলোয়াড়দের সবাইকে নিয়ে জ্বলে উঠে তারা।

দুই দলের ওপেনাররাই আছেন রানে। মার্টিন গাপটিল-ড্যারেল মিচেলের কেউ একজন কোন না কোন ম্যাচে পারফর্ম করছেন। অন্য দিকে ডেভিড ওয়ার্নার, অ্যারন ফিঞ্চরাও তাই। তবে পেস আক্রমণে অনেকটা শাণিত দেখা যাচ্ছে কিউইদের। অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক ছন্দে থাকলেও বাকিদের কাছ থেকে সেরাটা পাওয়া যাচ্ছে না।

এদিকে কিউইদের সেরা দুই পেসার ট্রেন্ট বোল্ট আর টিম সাউদি পুরো আসরেই সবচেয়ে কম খরুচে বোলিং করে চাপটা জারি রাখছেন প্রতিপক্ষের উপর। দুই লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা আর ইশ সোধির মধ্যেও কেউ একজন ফলাফল নির্ধারক হয়ে যেতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোতে দুজনকেই পারফর্ম করতে দেখা গেছে।

তবে দ্বিতীয় স্পিনার অপশনে অজিদের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে কিউইরা। মিচেল স্যান্টনারকে নিয়মিত খেলাচ্ছে তারা, রান আটকে দেওয়ার কাজটাও করছেন তিনি। অন্যদিকে অ্যাস্টন অ্যাগারকে একাদশে না রেখে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের অফ স্পিন দিয়ে ঠেকার কাজ চালিয়ে নিচ্ছে ফিঞ্চের দল।

মিডল অর্ডারেও পরিস্কারভাবে এগিয়ে থাকতে পারত নিউজিল্যান্ড, যদি না ডেভন কনওয়ে চোটে পড়তেন। দারুণ ছন্দে থাকা এই বাঁহাতি অদ্ভুত এক চোটে নেই। তার জায়গায় খেলতে পারেন টিম সেইফার্ট।

অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে হাল ধরে ভরসা যোগাচ্ছেন। এখানে অজিদের চিন্তা বাড়াচ্ছেন স্টিভেন স্মিথ। তাকে দেখা যাচ্ছে নিষ্প্রভ।

কিউই কাপ্তান উইলিয়ামসন মনে করেন নানা হিসেব নিকেশ মাঠে গিয়ে যেকোনো সময় বদলে যেতে পারে, তবে লড়াইটা জম্পেশ হওয়ারই আশা তার,   'আমরা একে অপরের বিপক্ষে অনেক ম্যাচ খেলি। সবাই সবাইকে জানি। সব সময়ই দারুণ লড়াই হয়। ফাইনাল নিয়ে দুদলই খুব রোমাঞ্চিত।'

'ওদের অ্যাডাম জাম্পার মতো বিশ্বমানের বোলার আছে। বিশ্ব সেরাদের একজন সে। আছে বিশ্ব সেরা কয়েকজন পেসার। দল হিবে অনেক ম্যাচ উইনার তাদের।'

নিজেদের অনেক ম্যাচ উইনারের বদলে নিউজিল্যান্ডের সম্মিলিত শক্তিকে ভয় ফিঞ্চের। বিশেষ করে আইসিসি আসরগুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে নিউজিল্যান্ডের সাফল্য তার কাছে ঈর্শ্বনীয়, 'আমার মনে হয় নিউজিল্যান্ড গত ছয় আইসিসি ইভেন্টের সবকটাতেই (২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ছাড়া) ফাইনালে উঠেছে। তাদের হালকাভাবে নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। দারুণ সব ব্যাটসম্যান আছে তাদের, অভিজ্ঞতায়ও ঋদ্ধ।'

টি-টোয়েন্টির মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া। এখন পর্যন্ত খেলা ১৪ ম্যাচে ৯টিতে জিতেছে তারা, নিউজিল্যান্ডের জয় ৫ ম্যাচে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের লড়াইয়ে এবার এগিয়ে নিউজিল্যান্ড। ২০১৬ সালে ধর্মশালায় একমাত্র দেখায় ৮ রানে জিতেছিল কিউইরা। আজ কার হবে জয়?

Comments

The Daily Star  | English

7 colleges to continue operating under UGC until new university formed

Prof AKM Elias, principal of Dhaka College, to be appointed as the administrator

2h ago