মিয়ানমার থেকে ব্যবসা গুটিয়ে চলে যাচ্ছে অনেক বিদেশি প্রতিষ্ঠান

‘মেট্রো’ মিয়ানমারে তার ব্যবসা গুটানোর ঘোষণা দিয়েছে। ছবি: রয়টার্স

মিয়ানমারের বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গুনের উপকণ্ঠে জার্মান হোলসেলার 'মেট্রো'র গুদামঘরের সামনে প্রতিষ্ঠানটির লোগো-সম্বলিত ট্রাকগুলো দাঁড়িয়ে আছে সারিবদ্ধভাবে। সেখান থেকে বাক্সভরা পণ্যগুলো নামিয়ে রাখা হচ্ছে—এ দৃশ্য গত বৃহস্পতিবারের।

'মেট্রো' ইতোমধ্যে মিয়ানমারে তার ব্যবসা গুটানোর ঘোষণা দিয়েছে। সেদিন গুদামঘরের সামনে এক নিরাপত্তাকর্মী নিক্কেই এশিয়াকে বলেছিলেন, 'শুক্রবার আমাদের শেষ ডেলিভারি।'

গত ৯ মাস ধরে মিয়ানমারে সামরিক শাসন চলছে। দেশটিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। সেই সঙ্গে ধীর হচ্ছে অর্থনীতির চাকা। এমন পরিস্থিতিতে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এই দেশ থেকে এক এক করে চলে যাচ্ছে বিদেশি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো।

সম্প্রতি 'মেট্রো'র এক বার্তায় বলা হয়েছে, প্রচুর বিনিয়োগ ও ব্যবসার পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও অক্টোবরেই সেখান থেকে তারা সরে আসছে। এতে আরও বলা হয়, 'বর্তমানে (মিয়ানমারে) মান বজায় রেখে ব্যবসা করার মতো অবস্থা নেই।'

'মেট্রো' মিয়ানমারে ব্যবসা শুরু করে ২০১৯ সালে। সংস্থাটি স্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান ইয়োমা গ্রুপের ইয়োমা স্ট্র্যাটেজিক হোল্ডিংসের সঙ্গে যৌথভাবে সেখানকার হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাবার সরবরাহ করে আসছিল। মিয়ানমারে খাদ্যমান উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও কৃষকদের আয় বৃদ্ধিতে কাজ করায় এ সংস্থা দুটি বিশ্ব ব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) থেকে আর্থিক সহায়তাও পেয়েছিল।

ইয়োমা স্ট্র্যাটেজিক হোল্ডিংসের প্রধান নির্বাহী মেলভিন পানের অভিযোগ, করোনা মহামারির কারণে হোটেল-রেস্তোরাঁ-ক্যাফেগুলোয় চাহিদা কমে গেছে।

তিনি বলেন, 'আমরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছি।'

নিক্কেই'র প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে—শুধু জার্মানির 'মেট্রো' নয়, মানবাধিকারের প্রশ্নে মিয়ানমার থেকে সরে আসতে হচ্ছে ইউরোপের অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকেও।

গত জুলাইয়ে নরওয়ের টেলিকম সংস্থা টেলিনর গ্রুপ বলেছিল তারা মিয়ানমারে তাদের মোবাইল কার্যক্রম ১০৫ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করে দেবে। তাদেরকে গোয়েন্দা সরঞ্জাম ব্যবহারের জন্যে মিয়ানমারের সেনারা চাপ দিচ্ছিল।

একইভাবে, ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো চলতি বছরের মধ্যেই মিয়ানমার ছাড়ার পরিকল্পনা করছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

শুধু ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানই নয়, ভারতের আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনোমিক জোন গত বুধবার জানিয়েছে যে তারা মিয়ানমার থেকে তাদের বিনিয়োগ সরিয়ে নেবে।

এক বার্তায় সংস্থাটি জানিয়েছে, 'পরিস্থিতি বিবেচনা করে মিয়ানমার থেকে বিনিয়োগ সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।'

মিয়ানমারের বিনিয়োগ ও কোম্পানি প্রশাসন অধিদপ্তরের হিসাব মতে, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মিয়ানমারে ১ হাজার ৮৭৩টি বিদেশি বিনিয়োগকৃত প্রকল্প ছিল। এখন অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই দেশটির পরিস্থিতি বিবেচনা করছে।

মিয়ানমারের এক আমদানিকারক নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমটিকে বলেছেন, 'স্থানীয় মুদ্রাকে ডলার রূপান্তরিত করতে পাচ্ছি না।'

আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) দৃষ্টিতে ২০২২ সালে মিয়ানমারের অর্থনীতি শূন্য দশমিক ১ শতাংশ কমে যাবে। তা আগামী ২০২৩-২০২৬ সালে ২ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়তে পারে।

বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো যখন একে একে মিয়ানমার ছাড়ছে তখন জাপানের প্রতিষ্ঠানগুলো এ নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত। ২০১১ সালে মিয়ানমার গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করলে জাপান সরকার সহায়তার হাত বাড়ায়। মিয়ানমারে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় জাপানি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেশি।

একটি শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী বলেছেন, 'আমরা মিয়ানমারে এতো বিনিয়োগ করেছি যে সেখান থেকে সরে আসার সুযোগ নেই।'

আগামী ২০২৩ সালে মিয়ানমারে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছে সেনা কর্তৃপক্ষ। তাই কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান অন্তত সেই সময় পর্যন্ত সেখানে থাকার কথা ভাবছে।

তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, এমন পরিস্থিতিতে যারা মিয়ানমারে ব্যবসা চালিয়ে যাবেন তারা একদিকে যেমন চরম ঝুঁকিতে পড়ছেন অন্যদিকে তারা প্রকারান্তরে সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী সেনাদের সহায়তা করছেন।

Comments

The Daily Star  | English

$14b a year lost to capital flight during AL years

Bangladesh has lost around $14 billion a year on average to capital flight during the Awami League’s 15-year tenure, according to the draft report of the committee preparing a white paper on the economy.

12h ago