দারিদ্র্য বিমোচন দিবস: খাদ্যমূল্য বাড়ায় দরিদ্রদের দুর্দশা বাড়ছে 

মহামারিতে সবচেয়ে বেশি হতাশাজনক পরিস্থিতিতে পড়েছেন দেশের দরিদ্ররা। ১৮ মাসের চরম অর্থনৈতিক দুর্দশা কাটিয়ে বাংলাদেশ যখন মহামারি-পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে, খাদ্যমূল্য বাড়ার কারণে তাদের হতাশা তখনও কাটছে না।
স্টার ফাইল ফটো

মহামারিতে সবচেয়ে বেশি হতাশাজনক পরিস্থিতিতে পড়েছেন দেশের দরিদ্ররা। ১৮ মাসের চরম অর্থনৈতিক দুর্দশা কাটিয়ে বাংলাদেশ যখন মহামারি-পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে, খাদ্যমূল্য বাড়ার কারণে তাদের হতাশা তখনও কাটছে না।

মহামারির কারণে বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচনে কয়েক দশকের অগ্রগতি হারিয়ে গেছে। এ পরিস্থিতির মধ্যেই আজ আন্তর্জাতিক দারিদ্র বিমোচন দিবস পালিত হচ্ছে।

গত এপ্রিলে পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) জরিপে দেখা গেছে, করোনা পরিস্থিতি দেশের ২ দশমিক ৪৫ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে। মহামারির আগে দেশের জনসংখ্যার ২০ দশমিক ৫ শতাংশ দরিদ্র ছিল। কিন্তু এখন প্রায় ৪০ শতাংশ দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে। 

এই নতুন দরিদ্রদের মধ্যে আছেন রাজধানীর রূপনগর এলাকার গৃহকর্মী আরজু বেগম এবং মিরপুরের বাদাম বিক্রেতা আক্কাস মিয়া। 

কয়েক মাস বেকার থাকার পর আরজু মহামারিতে হারানো চাকরি ফিরে পেয়েছেন। তবে খাবারের দাম বৃদ্ধির কারণে দুর্দশা কাটছে না তার।

তিনি বলেন, 'মাছ-মাংসের স্বাদই ভুলে গেছি আমরা। ভাত, ডাল ও আলু খেয়ে বেঁচে আছি।'

আক্কাসেরও একই অবস্থা। বেশিরভাগ খাদ্য সামগ্রী ক্রয় ক্ষমতার বাইরে থাকায়, পরিবার নিয়ে কোনোমতে খেয়ে বেঁচে আছেন তিনি।

খাবারের দাম বছর জুড়েই ঊর্ধ্বমুখী থাকছে। গত কয়েক সপ্তাহে এ দাম আরও বেড়েছে ।

বাংলাদেশের ট্রেডিং করপোরেশনের তথ্য অনুসারে, গত বছর সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম ৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ডাল ও ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৬ এবং ৩৬ শতাংশ। 

গত মাসে পেঁয়াজের দাম ৪৯  শতাংশের মতো বেড়েছে। বেশিরভাগ সবজির কেজি ৪০ টাকার বেশি।

এমনকি আক্কাস যে চিনাবাদাম বিক্রি করেন, সেটির দামও বেড়েছে। মহামারির আগে ১ কিলোগ্রাম চিনাবাদামের দাম ৮০ টাকা ছিল। এখন ১১০ টাকা। 

বাদামের দাম বাড়ার সঙ্গে আক্কাসের বিক্রিও কমেছে। ফলে দিন শেষে খুব অল্প টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন তিনি।

মহামারির আগে তিনি বাদাম বিক্রি করে প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা আয় করতেন। এখন ৪০০ টাকার বিক্রি করতেই হিমশিম খাচ্ছেন।

আক্কাস গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এতো অল্প আয়ে ৪ জনের পরিবার চালানো কীভাবে সম্ভব?'

যদি এমন অবস্থা অব্যাহত থাকে, তাহলে আক্কাস ও আরজুর মতো মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়বেন।

পিপিআরসি ও বিআইজিডি শিগগির দারিদ্র্য এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের অবস্থা নিয়ে গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে পরিচালিত তাদের সবশেষ জরিপের ফলাফল প্রকাশ করবে।

পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, 'গত বছরের জুলাইয়ে মহামারির ক্ষতি পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু, নতুন ২টি আঘাতের কারণে সেই কাজ বাধাগ্রস্ত হয়।'

এর একটি হলো করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। অন্যটি বিশ্বব্যাপি সরবরাহ প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত এবং কার্যকর ব্যবস্থাপনার অভাবে নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য।

হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, 'এই মূল্যবৃদ্ধি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং এটি দারিদ্র্য বিমোচন ও  দরিদ্রদের অবস্থাকে প্রভাবিত করবে।'

 ক্ষতিগ্রস্তদের সরাসরি সহায়তার পরামর্শ দেন তিনি।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, 'পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। নিম্ন আয়ের মানুষের আবার কর্মসংস্থান হচ্ছে। তবে এসব চাকরি আগের তুলনায় নিম্নমানের এবং নিম্ন বেতনের। ফলে তাদের পক্ষে  নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্য কেনা কঠিন হয়ে পড়ছে।'

এ অবস্থায় খোলা বাজারে বিক্রি বাড়ানো এবং সরাসরি নগদ সহায়তা দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম

Comments

The Daily Star  | English

Budget support from WB, IMF, ADB: Bangladesh may get $5.65b by this fiscal year

The government is expecting at least $5.65 billion in budget support this fiscal year from the World Bank, the International Monetary Fund (IMF), and the Asian Development Bank (ADB) to expedite reforms.

6h ago