সেমিফাইনালে যাবে বাংলাদেশ, মাশরাফির আশা

mashrafe
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাটিতে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কেমন করবে, তা নিয়ে কথা বলার জন্য মাশরাফি বিন মর্তুজা অবশ্যই আদর্শ একজন। বিশ্বমঞ্চে অনেক স্মরণীয় জয় উপহার দেওয়া এই ডানহাতি পেসার সবশেষ ২০১৬ সালের আসরে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন দলকে। দ্য ডেইলি স্টারের ক্রীড়া সাংবাদিক রামিন তালুকদারের সঙ্গে সম্প্রতি একান্ত আলাপে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ প্রস্তুতি, তার প্রত্যাশা এবং গত বিশ্বকাপের দলের সঙ্গে এবারের দলের পার্থক্যসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন দেশের ইতিহাসের সফলতম অধিনায়ক মাশরাফি।

ডেইলি স্টার: ২০১৬ সালে আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ খেলেছে। ওই দলের সঙ্গে এই দলের পার্থক্য কী? কোন দিকে বাংলাদেশ উন্নতি করেছে? কোন দিকে উন্নতি করার অবকাশ আছে এখনও?

মাশরাফি: ২০১৬ থেকে বললে তো অবশ্যই, অবশ্যই টি-টোয়েন্টি দল অনেক ভালো। আর উন্নতির কথা বললে, সাম্প্রতিক দুইটা সিরিজের দিকে তাকালে, বড় বড় দুইটা দলকে হারিয়েছি আমরা। অনেকেই হয়তো বলতে পারে, হোম কন্ডিশন। তো হোম কন্ডিশনে টি-টোয়েন্টিতে (অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে) জিতিনি আগে এর আগে। সেখানে আবার কেউ বলতে পারেন যে, তাদের প্রথম সারির দল আসেনি। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাস যদি আমরা অনুসরণ করি, সেই জায়গা থেকে তাদেরকে সিরিজ হারানো, আমি মনে করি না এতো সহজ বিষয়। এইগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায় যে, পরিবর্তন তো অবশ্যই হয়েছে এবং দুই বছর পর আরও ভালো দল হবে।

ডেইলি স্টার: আপনার মতে, সত্যিকার অর্থে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সুযোগ কতখানি? বাংলাদেশ কতদূর যেতে পারে?

মাশরাফি: নিশ্চিত করে তো কিছু বলা যায় না। আমাদের প্রথম লক্ষ্য, অবশ্যই কোয়ালিফাই করে মূল রাউন্ডে (সুপার টুয়েলভ) ওঠা। আমাদের ম্যাচ বাই ম্যাচ হিসাব করে খেলতে হবে। আমাদের অবশ্যই কোয়ালিফাই করা উচিত। আশা করি, আমরা করব-ও। এরপর সুপার টুয়েলভে যে খেলাগুলো, সেখানে অবশ্যই চ্যালেঞ্জ আছে এবং বড় বড় দলই খেলবে। আমি আশা করছি, সেমিফাইনাল পর্যন্ত দল যাবে। বাংলাদেশের সমস্ত দর্শকের মতো আমিও সেই প্রত্যাশাই করছি। সেমিফাইনালে গেলে পরিস্থিতি হবে একেবারে ভিন্ন। ওই বিষয়টা পরে ভাবতে হবে।

ডেইলি স্টার: অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা মোট দশটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের সাতটিতে জিতেছে বাংলাদেশ। কিন্তু মিরপুরের উইকেটে ম্যাচগুলো ছিল খুবই লো-স্কোরিং। এমন উইকেটে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি কি যথার্থ হয়েছে?

মাশরাফি: সিরিজ জিতেছি, এটাই আমাদের জন্য অনেক বড় ব্যাপার। জয়-পরাজয়ের মধ্য দিয়েই আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে হবে। ওই ম্যাচগুলোকে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবেই নিতে হবে। আর সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাটিতে আইপিএলে বেশি রান হচ্ছে না। ১৮০ বা ২০০, এরকম দলীয় রান হচ্ছে না। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বর্তমানে এক মাঠে প্রচুর খেলা হওয়ায় ভালো উইকেট প্রস্তুত করা যাচ্ছে না। কিউরেটররা চাইলেও ভালো উইকেট বানাতে পারছে না। তাই উইকেট ভেজা থাকছে, মন্থর থাকছে। আমার কাছে মনে হয়, আইসিসি অবশ্যই ভালো উইকেট বানানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। তবে আইপিএলের এতগুলো খেলা হয়ে যাওয়ার পর উইকেট আসলে কতটুকু ভালো করা যাবে সেটা নিয়ে সংশয় থেকে যায়। হ্যাঁ, মিরপুরের উইকেটের চেয়ে অবশ্যই ভালো উইকেট থাকবে। তবে সেখানে আমাদের বোলিং অত্যন্ত ভালো এবং ব্যাটিংও ভালো হবে বলে আশা করছি।

ডেইলি স্টার: পাঁচ বছর আগে সাব্বির রহমান-নাসির হোসেন ছিলেন ফিনিশারের ভূমিকায়। তারা দলে জায়গা ধরে রাখতে পারেনি। এই পজিশনে বরাবরই বাংলাদেশ দলকে ভুগতে হয়। কেন এতদিন ধরে ঘাটতি রয়ে গেছে এবং বিশ্বকাপে সেটা কতখানি প্রভাব ফেলতে পারে?

মাশরাফি: পাঁচ বছর আগে সাব্বির-নাসির ফিনিশার হিসেবে ছিল, এখনও তারা থাকতে পারত। তারা সফল হয়নি বলেই হয়তো দলে নেই। তবে নতুন নতুন খেলোয়াড় উঠে আসছে। তাদের প্রতি পূর্ণ আস্থা আছে আমার। টিম ম্যানেজমেন্টও তাদেরকে সহযোগিতা করছে। আমার বিশ্বাস, তারা পারবে। পারবে না, এমন চিন্তা করার কোনো কারণ আমি দেখছি না। আর ঘাটতি প্রত্যেকটা দলেরই থাকে। কোনো দল কীভাবে সমন্বয় করে তাদের দুর্বলতার জায়গাগুলো অতিক্রম করতে পারে, সেটাই মূল বিষয়।

ডেইলি স্টার: আপনার মতে, বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের সেরা পারফর্মার কে হতে পারেন? কেন?

মাশরাফি: নির্দিষ্ট খেলোয়াড়কে সেরা বলার পক্ষপাতী আমি নই। (চূড়ান্ত দলে) যে ১৫ জন এবং অতিরিক্ত সফরসঙ্গী হিসেবে যে আছে, প্রত্যেকেই বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছে। প্রত্যেকের প্রতিই আমার শুভ কামনা। আমি চাই, যে-ই হোক, যে-ই পারফর্ম করুক না কেন বাংলাদেশ জিতুক। আমাদের কাছে সেরা পারফর্মার মুখ্য না, বাংলাদেশের ফল মুখ্য।  

ডেইলি স্টার: শেষ ওভার, বাংলাদেশের চাই ১৫ রান। কোন দুই জনকে ক্রিজে দেখতে চাইবেন, যারা জিতিয়ে মাঠ ছাড়তে পারে?

মাশরাফি: এর উত্তর দেওয়া খুব কঠিন। আমি বরং বলব, ওইরকম পরিস্থিতি আসলে, যাদের দ্বারা করা সম্ভব, তারা ক্রিজে থাকলেই হতে পারে।

ডেইলি স্টার: যেহেতু নিজে ছিলেন তারকা বোলার, এই দলের বোলারদের জন্য আপনার কী বার্তা থাকবে? 

মাশরাফি: আমি মনে করি, বাংলাদেশের এই পেস আক্রমণটা আমাদের সেরা। এক-দুই জনের কথা বলিনি, পুরো ডিপার্টমেন্টটা। তাসকিন (আহমেদ) অনেক উন্নতি করেছে, মোস্তাফিজুর (রহমান) সবসময়ই সেরা, শরিফুল (ইসলাম) বিস্ময় জাগিয়ে (ক্যারিয়ারের) শুরু থেকেই ভালো করছে। আর (মোহাম্মদ) সাইফউদ্দিন অসাধারণ। ডেথ ওভারে সে দারুণ বল করতে পারে এবং ব্যাটিংও পারে। আমি মনে করি, গত ২০-২৫ বছরে এরকম পেস বোলিং আক্রমণ আমরা পাইনি। পুরো টিম ম্যানেজমেন্ট, অধিনায়ক, দর্শক থেকে শুরু করে আমরা যারা আছি, সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছি।

ডেইলি স্টার: এবারের বিশ্বকাপে কোন দলের বা কোন কোন খেলোয়াড়ের খেলা দেখার অধীর অপেক্ষায় আছেন?

মাশরাফি: বাংলাদেশ দলের খেলাই দেখা হবে। কাজের ব্যস্ততা আছে। তাই আমার ফোকাস বাংলাদেশ দলের উপরই থাকবে। আমি আশা করছি, বাংলাদেশ দলের কেউ (বিশ্বকাপে) সেরা পারফর্মার হবে। আশা করতে কোনো দোষ নেই, কোনো ভুল নেই। আমাদের দলে বিশ্বমানের একজন খেলোয়াড় ইতোমধ্যে আছে- সাকিব আল হাসান। গত ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে সে দেখিয়ে দিয়েছে। মুশফিকুর (রহিম) আছে, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আছে। শুধু সিনিয়র খেলোয়াড় না, মোস্তাফিজ-তাসকিন-লিটন (দাস) ভালো করছে।

ডেইলি স্টার: বলা হয়ে থাকে, টি-টোয়েন্টিতে যেকোনো দল যে কাউকে হারিয়ে দিতে পারে। টেকনিক্যাল, ট্যাকটিক্যাল সবদিক বিবেচনা করে এই ফরম্যাট এখন যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে আপনি কি একমত এই ধারণার সঙ্গে? নাকি দলীয় শক্তিমত্তাই পার্থক্য গড়ে দেয়?

মাশরাফি: ক্রিকেট অনেক বেশি টেকনিক্যাল খেলা। যেমন (বাংলাদেশের সাবেক কোচ চন্ডিকা) হাতুরুসিংহে যখন এসেছিলেন, তার আগে কিন্তু আমরা টানা হারছিলাম। তারপর টেকনিক্যাল দিকগুলোর উন্নতি হওয়ায় একই দল নিয়েই আমরা ম্যাচ জেতা শুরু করি এবং বিশ্বের অন্যতম সেরা দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হই। টেকনিক্যাল দিকে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আর দ্বিতীয় বিষয়টি হলো, শক্তিমত্তা। একক নৈপুণ্য দেখিয়ে জেতানোর মতো খেলোয়াড় আমাদের নেই সম্ভবত। সাকিব অবশ্য আছে। মুশফিক নিজের দিনে পারে। কিন্তু কেউ সমর্থন না দিয়ে গেলে (একা) সম্ভব না। আমরা এমন একটা দল, যেদিন সবাই মিলে পারফর্ম করে, সেদিন অন্য দল আমাদের সামনে দাঁড়াতে পারে না। তাই আমি আশা করব, একটা দল হিসেবে যেন আমরা খেলতে পারি।

Comments

The Daily Star  | English
Impact of dollar crisis

As dollar jumps, old inflation battle to get tougher in new year

After a four-month lull, US dollar prices made an abrupt jump in December, making imports more expensive and pushing up business costs.

11h ago