দিলারা জামানের জীবন

দিলারা জামান। ছবি: স্টার

দিলারা জামান ১৯৬৬ সালে প্রথম অভিনয় করেন টেলিভিশন নাটকে। কালজয়ী বহু নাটকের এই অভিনেত্রী এখনও সরব অভিনয়ে। ১৯৯৩ সালে একুশে পদক প্রদান করা হয় খ্যাতিমান এই শিল্পীকে।

দিলারা জামান। ছবি: স্টার

দ্য ডেইলি স্টার: টিভি নাটকের সেকাল আর একাল সম্পর্কে আপনার কাছে জানতে চাই।

দিলারা জামান: অনেক কিছু বদলে গেছে। প্রযুক্তির অনেক উন্নতি হয়েছে। এখন প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। পুরো পৃথিবীই এখন হাতের মুঠোয়। সবকিছু ঘরে বসে দেখা যায়। অভিনয়ের ধরণ বদলে গেছে। আগের নাটকের সঙ্গে তুলনা করলে এখন হবে না। তখন একটি মাত্র টেলিভিশন চ্যানেল ছিল। একটি চ্যানেলই দেখতে বাধ্য ছিল সবাই। এখন তো আর তা নয়।

শুধু সেকালে ভালো কাজ হতো, একালে ভালো কাজ হয় না—এটা সত্য না। এখনও ভালো কাজ হচ্ছে। এক ঈদে ৩০০ থেকে ৪০০ নাটক প্রচার হয়। একজন দর্শক কয়টা নাটক দেখতে পারেন? অথচ সেকালে একটি নাটকই সবাইকে দেখতে হতো। আমি বলব একালে ভালো কাজ হচ্ছে, জীবন ঘনিষ্ঠ অনেক কাজ হচ্ছে।

ডেইলি স্টার: প্রথম আপনার অভিনীত 'ত্রিধারা' নাটকটি ১৯৬৬ সালে টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছিল। কেমন সাড়া পেয়েছিলেন?

দিলারা জামান: এখনও মনে আছে, ত্রিধারা নাটকটি প্রচারের দিন আমাদের ঢাকার বাসার কাছাকাছি অনেক বাসায় টেলিভিশন ছিল না। আশপাশের বাসা থেকে মানুষ আমাদের বাসায় এসেছিলেন নাটকটি দেখতে। তখন গোপীবাগে থাকতাম আমরা। পরের দিন ঘর থেকে বের হয়ে রিকশা নিয়ে যেখানেই গেছি মানুষ বলাবলি করতেন, ওই যে যাচ্ছে, ওনাকে কাল নাটকে দেখেছি।

দোকানে যাওয়ার পর দোকানদার বলেছিলেন, কাল আপনাকে নাটকে দেখেছি। সেই সময়ে টেলিভিশনে নাটক প্রচার হওয়া মানেই সবাই চিনে ফেলতেন। রাস্তায় রিকশা করে কোথাও যাওয়ার সময় বলতে শুনেছি, ওই যে অমুক যাচ্ছেন। নাটকের সংলাপও তখন মানুষ মনে রাখতেন। একটা সময়ে রিকশায় করে রামপুরা টেলিভিশন ভবনে যেতাম। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে লক্ষ্য করতাম, মানুষ অবাক হয়ে দেখছেন।

দিলারা জামান। ছবি: স্টার

ডেইলি স্টার:​​​​​​​​​​​​​​ কোনো বিষয়ে দুঃখবোধ কাজ করে?

দিলারা জামান: অনেক কাজ হয়ত করতে পারিনি, কিন্তু শিল্পের সঙ্গে বসবাস করেছি এটাই বড় বিষয়। সংসার, অভিনয়, শিক্ষকতা— একই সঙ্গে করেছি। ২৬ বছর শিক্ষকতা করেছি, অভিনয় কখনও ছাড়িনি। সংসারও সামলাতে হয়েছে। আমার ২ মেয়ে যখন ছোট যখন ছিল তখন ওরা ঘুমে থাকতে অনেক সময় শুটিংয়ে চলে গেছি। আবার এমনও হয়েছে অনেক রাতে শুটিং শেষে ফিরে দেখেছি ওরা ঘুমিয়ে গেছে।

চট্টগ্রামে অরিন্দম থিয়েটারে বহু বছর আগে কাজ করতাম। অসময়ে মঞ্চ নাটক ছেড়ে দেওয়ার জন্য এক ধরণের দুঃখবোধ কাজ করে আমার ভেতরে। আবার ভাবি, সবকিছু এক জনমে হয় না। সেজন্য দুঃখবোধটা তাড়া করে না।

ডেইলি স্টার:​​​​​​​​​​​​​​ অনেক সিনিয়র শিল্পী বেঁচে নেই। যাদের সঙ্গে কাজ করেছেন তাদের কথা মনে পড়ে?

দিলারা জামান: খুব মিস করি তাদের। অভিনেতা আবুল খায়ের, আবদুল্লাহ আল মামুন, সৈয়দ আহসান আলী সিডনি, এটিএম শামসুজ্জামান, এসএম মহসিন, আবদুল কাদের, কে এস ফিরোজসহ আরও কতজনকে হারিয়েছি। এটিএম শামসুজ্জামানের সঙ্গে সবশেষ 'জায়গীর মাস্টার' নাটকে অভিনয় করেছিলাম। খুব ভালো মানুষ ছিলেন তিনি। রওশন জামিলকে হারিয়েছি। তার সঙ্গে অনেক নাটকে অভিনয় করেছি। আজমেরি জামান রেশমাকে হারিয়েছি। টেলিভিশনের প্রথম নাটকে একসঙ্গে অভিনয় করেছিলাম আমরা। অনেকেই অসময়ে চলে গেছেন। ৭৯ বছর বয়স আমার। অভিনয় জীবনের কত স্মৃতি তাদের সঙ্গে।

ডেইলি স্টার:​​​​​​​​​​​​​​ তরুণদের প্রতি কোনো উপদেশ?

দিলারা জামান: ২৬ বছর শিক্ষকতা করেছি। অনেক শিক্ষার্থী আমার। অভিনয় শিল্পের মানুষরা আমাকে ভীষণ সম্মান করেন। আমিও তাদের ভালোবাসি। আমি তরুণদের বলব, সবার আগে ভালো মানুষ হতে হবে। ভালো মানুষ হওয়ার চেয়ে বড় আর কিছু নেই।

মানুষ হিসেবে আপনি অনেক বড়, কিন্তু মানসিকতার দিক দিয়ে অনেক ছোট। তাহলে কী দাঁড়াল বিষয়টি? জীবনের প্রথম লক্ষ্য হওয়া উচিত ভালো মানুষ হওয়া। তরুণরা এই একটি উপদেশ মেনে চলতে পারলে আর হতাশা আসবে না।

শিল্পের প্রতি তরুণদের ভালোবাসা থাকতে হবে, বইয়ের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে, আর দেশের প্রতি তো অবশ্যই ভালোবাসা থাকতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

‘No room for politics under AL name, ideology’

Nahid Islam, adviser to the interim government, spoke with The Daily Star on the nation's key challenges and the way forward.

14h ago