অসাধু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ই-অরেঞ্জের লোভনীয় মূল্যহ্রাস অফারে প্রলুব্ধ হন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মো. শাহেদুল ইসলাম। তার মাসিক বেতন মাসে ১৫ হাজার টাকা হওয়া সত্ত্বেও তিনি পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন ও সহকর্মীদের কাছ থেকে ১৩ লাখ টাকা ধার নেন। এই টাকা দিয়ে তিনি মে মাসে ৫টি ও জুনে আরও ৩টি মোটরসাইকেলের জন্য অগ্রিম দাম পরিশোধ করেন।

ই-অরেঞ্জ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল প্রথম ৫টি মোটরসাইকেল জুনে এবং বাকিগুলো জুলাইর মধ্যে সরবরাহ করার। কিন্তু তিনি এখনও একটি পণ্যও হাতে পাননি।

শঙ্কিত হয়ে তিনি গত মাসে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে (ডিএনসিআরপি) পণ্য অথবা টাকা ফেরত চেয়ে অভিযোগ করেন।

শাহেদুল সোমবার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, 'আমি এখনও ডিএনসিআরপির কাছ থেকে শুনানির দিন তারিখ নিয়ে কোনো নোটিশ পাইনি।'

'আমি লাভের আশায় কাজটি করেছিলাম। ঋণ পরিশোধের চাপে আমি এখন দিশেহারা অবস্থায় আছি', বলেন তিনি।

সম্প্রতি বিভিন্ন সরকারি সংস্থা সন্দেহজনক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াতে দ্বিধান্বিত ও অস্থির গ্রাহকরা জুলাই ও আগস্টে ডিএনসিআরপির কাছে প্রতিকার চেয়ে প্রায় ৬ হাজার অভিযোগ করেছেন।

ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ এবং ধামাকা শপিংয়ের বিরুদ্ধেই ৫ হাজার অভিযোগ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত মাত্র ১২ শতাংশ বা ৭২৬টি অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়েছে।

জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে ২ হাজার ৬৪৩টি অভিযোগ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র ৩৩টি বা ১ দশমিক ২৪ শতাংশ অভিযোগের নিষ্পত্তি করতে পেরেছে ডিএনসিআরপি।

ই-অরেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা সোনিয়া মেহজাবিন এবং প্রতিষ্ঠানটির বেশ কিছু কর্মকর্তা ১৬ আগস্টে গ্রাহকদের ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন। এরপর থেকে তারা কারাগারেই আছেন।

এ বছরের ১৪ মে মধ্যবয়সী খায়রুল বাশার একটি আইপ্যাডের জন্য ইভ্যালিকে ৩২ হাজার টাকা মূল্য পরিশোধ করেন। ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের পণ্যটি সর্বোচ্চ ৪৫ দিনের মধ্যে সরবরাহ করার কথা ছিল।

কিন্তু বেসরকারি স্কুল শিক্ষক খায়রুল এখনো তার স্মার্ট ডিভাইসটি পাননি। গত ১২৯ দিনে তিনি ১০ বারেরও বেশি ইভ্যালির গ্রাহক সেবা বিভাগের সঙ্গে কথা বলেছেন।

তাকে বারবার পণ্য দ্রুত ডেলিভারি দেওয়া নিয়ে আশ্বস্ত করা হয়েছে, কিন্তু এখনো তিনি সেটি হাতে পাননি।

ফলশ্রুতিতে বাশার ২২ আগস্ট ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে পণ্যের মূল্য ফেরত চেয়ে অভিযোগ করেন।

পেশায় গণিত শিক্ষক বাশার ৫ সেপ্টেম্বর অধিদপ্তরে ফোন করে অভিযোগের প্রতিকার সম্পর্কে জানতে চান।

একজন কর্মকর্তা তাকে জানান, ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রতিষ্ঠানটির স্থগিত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তারা ১০ সেপ্টেম্বর থেকে অভিযোগ নিয়ে কাজ শুরু করবেন।

শীর্ষ ১৮টি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মধ্যে ইভ্যালির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সংখ্যক অভিযোগ এসেছে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি তাদের ব্যবসায়িক কৌশলে অস্বাভাবিক মূল্য ছাড়ের অফারসহ অন্যান্য অনিয়মের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরে এসেছে।

গত দুই মাসে গ্রাহকরা এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ২ হাজার ২০৬টি অভিযোগ এনেছেন। এ পর্যন্ত মাত্র ১৬ শতাংশ কিংবা ৩৫০টি অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়েছে।

ইভ্যালির এমডি ও সিইও মোহাম্মদ রাসেল এবং তার স্ত্রী ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে গত সপ্তাহে গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়।

সম্প্রতি ইভ্যালি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছে, গ্রাহক ও অন্যান্য ব্যবসায়ীদের কাছে তাদের দেনা যথাক্রমে ৩১১ কোটি ও ২০৬ কোটি টাকা।

এছাড়াও ধামাকা শপিং এর বিরুদ্ধে ২৫০টি অভিযোগ এসেছে।

ময়মনসিংহের ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য বিক্রেতা কাওসার মাহমুদ ধামাকা শপিংকে জুনে ৬টি ফ্রিজের জন্য ২ লাখ টাকা দেন।

তিনি জানান, পণ্য ডেলিভারি করার জন্য নির্ধারিত সময়সীমা ইতোমধ্যে অতিবাহিত হয়েছে।

তিনি কল সেন্টারে ফোন করলে তাকে জানানো হয়, কবে পণ্য ডেলিভারি হবে তারা তা জানেন না।

কাওসার বলেন, 'আমি খুবই উদ্বিগ্ন। ২ লাখ টাকা আমার জন্য অনেক টাকা।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) বাবলু কুমার সাহা বলেন, 'ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধে ৯৯ শতাংশ অভিযোগই চুক্তির শর্ত ভঙ্গ সংক্রান্ত।'

তিনি জানান, 'এ অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ জরিমানার পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা। আমরা যদি প্রতিষ্ঠানকে এই পরিমাণ টাকা জরিমানা করি, তাহলে ভোক্তা সেখান থেকে মাত্র ১২ হাজার ৫০০ টাকা পাবেন। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভোক্তারা ১০ লাখেরও বেশি টাকার পণ্য অর্ডার করেছে। এতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।'

তিনি আরও বলেন, 'ভোক্তার সুবিধার কথা মাথায় রেখে আমরা অভিযোগের নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করি।'

তিনি লোভনীয় মূল্যছাড়ে প্রলুব্ধ হয়ে কেনাকাটা করার আগে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের ব্যাপারে জেনে নেওয়ার পরামর্শ দেন।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান।

Comments

The Daily Star  | English
gold price hike in Bangladesh

Why gold costs more in Bangladesh than in India, Dubai

According to market data, gold now sells for $1,414 per bhori in Bangladesh, compared to $1,189 in India, $1,137 in Dubai

1h ago