৪ বছর ধরে আটকা জাহাজ, হুমকিতে পারকি সৈকত
২০১৭ সালের ৩০ মে ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে ক্রিস্টাল গোল্ড নামের জাহাজটি চট্টগ্রামের পারকি সমুদ্র সৈকতে আটকা পড়ে। ১৯২ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজটি দীর্ঘদিন সেখানে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকায় জাহাজের বিভিন্ন দূষিত পদার্থ পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে বলছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।
অন্যদিকে, সেখানে জাহাজ ভাঙার অনুমতি দেওয়া হলে পরিবেশের জন্য তা মারাত্মক হুমকি হবে বলে জানিয়েছেন তারা। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় যত দ্রুত সম্ভব জাহাজটি সরিয়ে নিতে বলা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আতিকুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দীর্ঘদিন সৈকতে জাহাজটি আটকে থাকার কারণে সেখানে পলি জমছে। এতে করে পরবর্তীতে সেখানে ভাঙন দেখা দিতে পারে। জমে থাকা পলি কাছের ঝাউ বাগান পর্যন্ত বিস্তৃত হচ্ছে ফলে ঝাউ গাছগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।'
তিনি উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, 'সৈকতে জাহাজ ভাঙার অনুমতি দেওয়া হলে সেখানে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় হবে। জাহাজটি সেখান থেকে যত দ্রুত সম্ভব সরানো উচিত।'
আটকে পড়া ক্রিস্টাল গোল্ড জাহাজের মালিক ছিল ক্রিস্টাল গ্রুপ। কিন্তু ব্যাংক লোন এবং নাবিকদের বেতন জটিলতায় পরবর্তীতে ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান জাহাজটি নিলামে কিনে নেয় বলে জানান পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মফিদুল আলম বলেন, '২০১৯ সালে সৈকতে অনুমতি ছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ জাহাজটি কাটার অভিযোগে ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজকে দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ ধার্য করে পরিবেশ অধিদপ্তর।'
সেসময় জাহাজ কাটার কারণে এক হাজার ৪৯১ শতাংশ সৈকতের জীববৈচিত্র্য নষ্ট এবং সামুদ্রিক জীব ধ্বংস হয়েছিল বলে জানান তিনি।
'আমরা তাদের ৩২টি শর্ত দিয়ে জাহাজ কাটার অনুমতি দিয়েছিলাম, কিন্তু ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজ উচ্চ আদালতে আপিল করে', বলেন মফিদুল আলম।
ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজের একজন পরিচালক মো. আমজাদ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পরিবেশ অধিদপ্তরের দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশের পর আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করেছিলাম। কিন্তু উচ্চ আদালত আবেদনটি খারিজ করে দিয়ে একটি আদেশ দিয়েছেন। আদেশের কপি এখনও আমি সংগ্রহ করতে পারিনি।'
তিনি বলেন, 'জাহাজটির দৈর্ঘ্য ১৯২ মিটার।'
জাহাজটির কারণে আগের মতো আর পর্যটক আসে না বলে জানান আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং পারকি সমুদ্র সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শেখ জোবায়ের আহমেদ।
তিনি বলেন, 'আটকে থাকা এই জাহাজের কারণে সৈকতে কাদা জমছে, ঝাউ গাছগুলো পড়ে যাচ্ছে। কাদা এবং অনেক ঝাউ গাছ পড়ে যাওয়ায় পারকি সৈকতে এখন আর আগের মতো পর্যটক আসে না।'
বন্দরনগরী থেকে পারকি সৈকত কেবল ১৭ কিলোমিটার দূরে জানিয়ে আনোয়ারা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মৃণাল কান্তি ধর বলেন, 'দল বেঁধে ঝাঁকে ঝাঁকে লাল কাঁকড়া এবং কাছিমের ছুটোছুটি পারকির অন্যতম আকর্ষণ। এই সমুদ্র সৈকত থেকে একসঙ্গে বঙ্গোপসাগর এবং কর্ণফুলী নদী দেখার সুযোগ থাকায় প্রতি বছর হাজারো পর্যটক পারকি সমুদ্র সৈকতে আসতেন। তবে এখন পর্যটক অনেক কমে গেছে।'
Comments