ছাত্রলীগ-আনসার-পুলিশ সংঘর্ষে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বরিশাল
বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবন ও অফিস প্রাঙ্গণ থেকে সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) পোস্টার-ব্যানার সরানোকে কেন্দ্র করে গতকাল বুধবার রাতে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের আনসার ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে।
এ ঘটনায় রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য জেলার সঙ্গে বরিশালের বাস ও লঞ্চ যোগাযোগ বন্ধ আছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বরিশাল শহরে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। ঘটনাস্থল সিঅ্যান্ডবি রোডে অনেক দোকান খোলেনি। সেখানে করপোরেশনের গাড়ি আটকে সড়ক অবরোধ করা হয়েছে।
বিসিসি ও হাসপাতাল সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে, বরিশাল সদর উপজেলা চত্বরে গুলির ঘটনায় দুই পুলিশ ও দুই আনসার সদস্য, বরিশাল সিটি কপোরেশনের প্যানেল মেয়র গাজী নইমুল ইসলাম লিটু, রফিকুল ইসলাম খোকন, ২৩ নং ওয়ার্ড সভাপতি শাহরিয়ার বাবু, বিসিসি কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন।
তাদের মধ্যে ২৮ জন বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
সার্বিক পরিস্থিতি বিচার করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান।
প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণে হামলার সূত্রপাত
প্রত্যক্ষদর্শীরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের উচ্ছেদ শাখার কয়েকজন কর্মী গতকাল রাত সাড়ে ৯টায় ইউএনও কার্যালয়ে ঢুকে ব্যানার সরাতে শুরু করলে প্রথমে ইউএনও'র নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা বাধা দেন। এ নিয়ে উভয় পক্ষের কথা কাটাকাটি হয়।
ইউএনও মো. মুনিবুর রহমান তাদের থামাতে গেলে বিসিসি কর্মী ও ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার বাদানুবাদ হয়। এক পর্যায়ে ইউএনও'র প্রতি তারা চড়াও হলে ইউএনও নিজের নিরাপত্তা রক্ষায় আনসার সদস্যদের গুলির আদেশ দেন। আনসার সদস্যরা ছররা গুলি ছোড়ে বলে ইউএনও জানিয়েছেন।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ঘটনাস্থলে গেলে আনসার সদস্যরা আবার গুলি ছোড়ে বলে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ অভিযোগ করেছে।
ইউএনও মো. মুনিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, 'রাত সাড়ে ৯টায় ১০ জন যুবক আমার এখানে ঢুকে ব্যানার সরাতে শুরু করলে আমি দিনের বেলা আসতে বলি। তারা আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়।'
'পরে আবার রাত সাড়ে ১০টায় ৬০ থেকে ৭০ জনের একটি দল আসে। আমাকে গালি দেয়, বিনা অনুমতিতে আমার বাসভবনে ঢোকে। আমার বাবা-মা দুই জনেই করোনা রোগী তারা ভয়ে কাঁপছিলেন। এমতাবস্থায় আমার নিরাপত্তার জন্য আনসার সদস্যরা গুলি ছোড়ে।'
ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাইনুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মেয়রের উপস্থিতিতে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। নেতা-কর্মীরা না থাকলে তিনিও আহত হতেন।'
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. এনামুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটা সংঘর্ষ ছিল না। লোকজন সরিয়ে দিতে যা করার আমরা তাই করেছি।'
পুলিশ কমিশনারের ঘটনাস্থল পরিদর্শন
পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান আজ বৃহস্পতিবার ভোররাত ১টায় ইউএনও'র বাসভবন পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের বলেন, 'ঘটনাটি অনাকাঙ্খিত ও দুঃখজনক। এখানে আইন শৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে। এখানে অ্যাক্টিভিস্টদের ভায়োলেন্ট অবস্থায় দেখেছি। বিষয়টি সার্বিকভাবে দেখছি। তবে এই ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক জসীমউদ্দিন হায়দার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি ইউএনও'র মারফত শুনেছি যে ওরা তার ওপর চাড়াও হয়েছিল।'
বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বাদল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগস্ট মাসে এমন ঘটনা দুঃখজনক। আমরা সবাই বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখছি।'
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই ঘটনার তদন্ত দাবি করছি। আমার উপস্থিতিতে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে। আমার নেতা-কর্মীরা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আমি এতে ক্ষুব্ধ। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
পুলিশ কমিশনার এমডি শাহাবুদ্দীন খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। এই ঘটনায় আমরা আলাপ-আলোচনা, বিচার-বিশ্লেষণ করেই সিদ্ধান্ত নেবো।'
অন্তত ৫০ জন আহতের মধ্যে ২৮ জনকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহরিয়ার বাবু, যুবলীগ নেতা শাহীন হাওলাদার, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব গোসেন খান, ছাত্রলীগ নেতা গোলাম মোস্তফা অনীক আছেন।
হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, 'অধিকাংশই ছররা গুলিতে আহত। বেশ কয়েকজনের বুকে, মাথায় ও গলায় গুলি লেগেছে।'
Comments