এমআরপি পাসপোর্ট ছাপানো বন্ধ, অনিশ্চয়তায় প্রবাসীরা

ছবি: সংগৃহীত

নতুন পাসপোর্ট পেতে গত কয়েকমাস ধরেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভোগান্তিতে পড়েছেন বাংলাদেশি প্রবাসীরা। মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ সব দেশেই প্রবাসীরা এ সমস্যায় পড়ছেন। জুনের শুরুতে এমআরপি সার্ভারের তিন কোটি পাসপোর্টের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায়, পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষ গত চার সপ্তাহে কোনো পাসপোর্ট ছাপাতে পারেনি।

প্রবাসী ও মানবাধিকার কর্মীরা জানিয়েছেন, পাসপোর্ট পেতে দেরি হওয়ায় প্রবাসী কর্মীরা ঝুঁকিতে পড়ছেন। তাদের কাগজপত্র হালনাগাদ করতে দেরি হচ্ছে।

গত কয়েক সপ্তাহে অভিবাসীরা বেশ কয়েকবার বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করেছেন। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে প্রবাসে বেকারত্ব ও জীবন-জীবিকা নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হচ্ছেন তারা।

ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট বিভাগের (ডিআইপি) মহাপরিচালক (ডিআইজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব চৌধুরী জানান, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) ব্যবস্থাকে সময়ে সময়ে আপগ্রেড করার প্রয়োজন হয়।

গত রোববার তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, 'সার্ভার আপগ্রেড করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং আমরা সংশ্লিষ্ট মালয়েশিয়ান প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ বাড়াবো।'

তিনি জানান, সার্ভার আপগ্রেড হওয়ার পর জমা থাকা আবেদনপত্রের বিপরীতে পাসপোর্ট ছেপে বিতরণ করা হবে। তবে, তিনি কোনো সময়সীমা উল্লেখ করেননি।

ডিআইপি পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মো. শিহাব উদ্দিন খান জানান, ২০২০ সালের মধ্যে তাদের ই-পাসপোর্ট চালুর করার লক্ষ্য ছিল। কিন্তু, করোনাভাইরাসের কারণে কর্মকর্তারা দেশের বাইরে যেতে না পারায় এটা চালু করা সম্ভব হয়নি।

সোমবারে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, 'এ কারণে এমআরপি সার্ভারের ওপর চাপ বেড়েছে এবং সর্বোচ্চ তিন কোটি আবেদনপত্রের সীমা অতিক্রান্ত হয়েছে।'

শিহাব জানান, ডিআইপি ইতোমধ্যে মালয়েশীয় প্রতিষ্ঠান আইরিস করপোরেশনের সঙ্গে আরও অতিরিক্ত ৬০ লাখ পাসপোর্টের জন্য নতুন একটি চুক্তি করেছে এবং সার্ভারটিকে শিগগির আপগ্রেড করা হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ডিআইপির সূত্র জানায়, সার্ভারের ধারণক্ষমতা জুনের শুরুতে শেষ হয়ে গেলেও, ডিআইপি কিংবা আইরিস বিষয়টি সমাধানে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

গত চার সপ্তাহে কোনো পাসপোর্ট ছাপানো হয়নি বলেও একটি সূত্র জানিয়েছে।

মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালদ্বীপ ও লেবাননে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনগুলো থেকে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানানো হয়েছে, এমআরপি সার্ভারে কারিগরি ত্রুটির কারণে পাসপোর্টের সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে।

সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ দূতাবাস ৩০ জুলাই আরেক নোটিশে জানিয়েছে, বাংলাদেশে টেকনিক্যাল সমস্যা থাকার কারণে ৮ জুনের পর যেসব পাসপোর্টের রি-ইস্যুর আবেদন করা হয়েছে, সেই পাসপোর্ট এখনও আসেনি। তাই, পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার অনুরোধ করা হলো।

যথাসময়ে পাসপোর্ট দিতে না পেরে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন ৭ আগস্ট নোটিশ দিয়ে জানিয়েছে, ঢাকায় পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সার্ভারের ধারণক্ষমতা শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রচুর পাসপোর্ট জমা আছে। আওতা বহির্ভূত এই জটিলতার জন্য হাইকমিশন আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে।

রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তারা কয়েক মাস আগে পাসপোর্ট পেতে দেরি হওয়ার কারণে প্রবাসীদের ভোগান্তির বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে ডিআইপির মহাপরিচালকের কাছে চিঠি পাঠান এবং তাকে অনুরোধ জানান দ্রুত পাসপোর্টগুলো সরবরাহ করার জন্য। কিন্তু, এখনও এর কোনো সমাধান হয়নি।

মাসের পর মাস দেরি

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশি অভিবাসীরা তাদের হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা জানান, এক কোটিরও বেশি অভিবাসী বছরে প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠান, যা দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখে। কিন্তু, তাদের সমস্যাগুলো কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করছে না।

মালয়েশিয়া প্রবাসী ওয়াহিদ নিজাম জানান, পাসপোর্ট পেতে চার থেকে ছয় মাস সময় লাগছে। এতে, প্রবাসীরা অনিশ্চয়তা আর মালয়েশিয়ান পুলিশের গ্রেপ্তারের ভয়ে আছেন।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি ফোনে জানান, 'সময়মত পাসপোর্ট না পাওয়ার কারণে আমরা অনেকেই কাজের অনুমোদন নবায়ন করতে আবেদন জমা দিতে পারছি না। এমনকি যারা নথিভুক্ত নন, তারা সাধারণ ক্ষমা প্রাপ্তির প্রক্রিয়াতেও আবেদনপত্র জমা দিতে পারছেন না।'

সিঙ্গাপুরে বসবাসকারী বাংলাদেশী নাগরিক রশিদুল ইসলাম জানান, আবেদনপত্র জমা দেওয়ার তিন থেকে চার মাস পরেও পাসপোর্ট না পাওয়ায় তারা উদ্বেগের মধ্যে আছেন।

সৌদি আরবে কর্মরত এক বাংলাদেশি অভিবাসী জানান, তারা দূতাবাসের কাছ থেকে পাসপোর্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে ইকামা (বসবাসের অনুমতি) নবায়ন করতে পারছেন না।

বাংলাদেশ মিশনের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, এমআরপি সার্ভারের ওপর চাপ এবং মহামারির কারণে দেরি হওয়া ছাড়াও অন্য আরেকটি কারণে দেরি হতে পারে। পাসপোর্টের দালালরা অথবা অভিবাসীরা নিজেরাই হয়তো ঠিকমত অনলাইন আবেদনপত্র পূরণ করেননি।

মালয়েশিয়া ভিত্তিক প্রবাসীদের অধিকার রক্ষা কর্মী হারুন আল রশিদ বলেন, 'ডিআইপি সার্ভারের ধারণক্ষমতা অতিক্রমের বিষয়টি কেন বুঝতে পারেনি। কেন তারা এ বিষয়টির সমাধানে কোন উদ্যোগ নিলো না? এটা কল্পনার বাইরে।'

তিনি বলেন, 'এখন অনেক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। প্রবাসীদের যে কোনো সময় হাজতে নিয়ে যাওয়া হতে পারে, কারণ তাদের অনেকেই ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন করতে পারেনি। যদি তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয় বা তারা তাদের চাকুরি হারান, তাহলে কে সেটার ক্ষতিপূরণ দেবে?'

তিনি জানান, সাধারণত বাংলাদেশি অভিবাসীরা দালাল ও এজেন্টদের নানা রকম প্রতারণার শিকার হন এবং প্রায়ই তারা রাষ্ট্রের সেবাগুলো থেকে বঞ্চিত হন। কিন্তু, এবার ডিআইপির অবহেলার কারণে অভিবাসীরা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

হারুন আরও জানান, পাসপোর্ট পুনরায় পাওয়ার ক্ষেত্রে কিভাবে এই ঝামেলাপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হলো, তা জানার অধিকার অভিবাসীদের আছে।

তিনি ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি জানান।

প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান।

Comments

The Daily Star  | English

Ending impunity for crimes against journalists

Though the signals are mixed we still hope that the media in Bangladesh will see a new dawn.

13h ago