রাজধানীতে ‘গোশতের হাট’ জমজমাট

বুধবার বিকেলে মিরপুর মাজারের সামনে বসা কোরবানির গোশতের হাট। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

ঈদের বিকেল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জমে উঠেছে সংগ্রহ করা কোরবানির মাংস কেনাবেচার ‘হাট’। ছিন্নমূল মানুষ শহরের নানা জায়গা থেকে কোরবানির মাংস সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে দেন। এ তালিকায় আছেন কসাইরাও। এটাকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর বসে যায় ছোট ছোট হাট। সাধারণত এসব মাংসের ক্রেতা নিম্ন আয়ের বাসিন্দা ও হোটেল ব্যবসায়ীরা। তবে, এবার করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে নগরের নিম্নবিত্ত মানুষ, এমনকি কিছু মধ্যবিত্তকেও এই মাংস কিনতে দেখা গেছে।

আজ বুধবার বিকেলে মিরপুর মাজারের সামনে বসা এমন একটি হাটে আশুলিয়ার নরসিংহপুর থেকে মাংস কিনতে এসেছিলেন আফজাল হোসেন। তৈরি পোশাক কারখানার কর্মী আফজাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা স্বামী-স্ত্রী দুই জনই গার্মেন্টসে কাজ করি। কিন্তু, কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য নেই। আবার কারও কাছ থেকে মাংস চাইতেও পারি না। তাই এখানে অপেক্ষাকৃত কম দামে পাঁচ কেজি মাংস কিনতে এসেছি।’

আফজালের মতো ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকে মাংস কিনতে আসা এমন অনেক ক্রেতার দেখা মিলল মিরপুর মাজারের সামনে। এমন একজন হলেন মর্জিনা বেগম। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, গাবতলী এলাকায় কয়েকটি বাড়িতে তিনি ছুটা বুয়ার কাজ করেন। সেসব বাড়ি থেকে তাকে কিছু কিছু মাংস দেওয়া হলেও, তার ছয় সদস্যের পরিবারের জন্য তা যথেষ্ট না। তাই, তিনি বাড়তি কিছু মাংস কিনতে এসেছেন।

ছিন্নমূল মানুষ শহরের নানা জায়গা থেকে কোরবানির মাংস সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে দেন। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

মাজারের সামনে মাংস বিক্রির এ রকম অন্তত ২০০টি দোকান চোখে পড়ে। বিক্রেতাদের মধ্যে ঈদের দিন বিভিন্ন জায়গায় কসাইয়ের কাজ করা মানুষের দেখাও মিলল। কোরবানির মাংস তৈরির কাজে সহায়তা করার পর কোরবানি দাতাদের কাছ থেকে অর্থের পাশাপাশি কিছু গোশতও পেয়েছেন তারা। সেগুলো বিক্রির জন্য এখানে নিয়ে এসেছেন।

রবিউল ইসলাম নামের তেমনই এক মাংস বিক্রেতা জানালেন, এমনিতে তিনি ঢাকায় রিকশা চালান। তবে, ঈদের দিন তিনিসহ পাঁচ জন মোহাম্মদপুরের একটি অ্যাপার্টমেন্টে কোরবানি করা পাঁচটি গরুর মাংস তৈরি করেছেন। তাতে করে তারা অর্থের পাশাপাশি গরুর পাঁচটি মাথা ও বেশ পরিমাণ মাংস পেয়েছেন।

রবিউল বলেন, ‘সন্ধ্যা পর্যন্ত পাঁচ হাজার টাকার মাংস বিক্রি করেছি। আরও তিন হাজার টাকার বিক্রি হবে।’

তিনি জানান, প্রতি কেজি মাথার মাংস তারা বিক্রি করছেন ৩০০ টাকা কেজি দরে। আর সাধারণ মাংস বিক্রি করছেন ৫০০ টাকা কেজিতে।

একই ভাবে ইন্দিরা রোডে বসা এমন একটি হাটে অনেক নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষকে এই মাংস কিনতে দেখা যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এদের কয়েকজন জানান, প্রতি বছর তারা এককভাবে কিংবা ভাগে কোরবানি দিয়ে থাকেন। কিন্তু, করোনা মহামারির কারণে তৈরি হওয়া আর্থিক দুর্দশা এবার তাদের সেই সঙ্গতি কেড়ে নিয়েছে। যে কারণে এখান থেকে মাংস কিনছেন তারা।

রহিমা বেগম নামের এখানকার একজন মাংস বিক্রেতা জানান, সকাল নয়টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত তিনি ফার্মগেট, রাজাবাজার, তেজকুনিপাড়া ও মনিপুরিপাড়াসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে সাত কেজির মতো মাংস সংগ্রহ করেছেন। এখন সেটা বিক্রি করতে এসেছেন এখানে।

উচ্ছ্বাস ভরা কণ্ঠে রহিমা বেগম বলেন, ‘বছরকার দিনে যদি কয়েকটা টাকা বাড়তি আয় করতে না পারলাম, তাহলে চলবে কীভাবে?’

Comments

The Daily Star  | English

‘I couldn’t miss it’: White wave engulfs National Stadium

With more than three hours to go before kick-off in the highly-anticipated Asian Cup Qualifier between Bangladesh and Singapore, the newly renovated National Stadium is already transforming into a sea of white -- the colour of Bangladesh's home jersey.

18m ago