চালু ফোনসেট ৩০ জুনের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হবে
আগামী ৩০ জুনের মধ্যে দেশে ব্যবহৃত সব মোবাইল ফোন (স্মার্টফোন বা বাটন ফোন) স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
আগামী ১ জুলাই থেকে মোবাইল ফোনের বৈধতা যাচাই কার্যক্রম পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হবে।
ইতোমধ্যে যেসব মোবাইল ফোন গ্রাহকরা ব্যবহার করছেন তা নিবন্ধনের আওতায় আনার পর ১ জুলাই থেকে নতুন করে চালু হওয়া ফোনগুলোর বৈধতা যাচাই করে অবৈধ ফোন চিহ্নিত ও সেগুলো বন্ধ করার প্রক্রিয়া চলবে। কর ফাঁকি দিয়ে বা অবৈধভাবে দেশে আনা কোনো অননুমোদিত, ক্লোনড বা নকল হ্যান্ডসেট নতুন করে নিবন্ধিত হবে না বা কাজ করবে না।
সবার জন্য ফোন নিবন্ধন বাধ্যতামূলক।
নতুন প্রযুক্তি
বিটিআরসি মূলত আগামী ১ জুলাই থেকে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিফিকেশন রেজিস্ট্রার (এনইআইআর) নামের একটি নতুন প্রযুক্তি চালু করার পরিকল্পনা করছে।
এর মাধ্যমে হ্যান্ডসেটগুলোর আইএমইআই নম্বর, সিম কার্ডের এমএসআইএসডিএন নম্বর ও সিম কার্ডের ক্রেতাদের বায়োমেট্রিক তথ্য বিটিআরসির কাছে সংরক্ষিত থাকবে। এরপর থেকে দেশে কোনো নকল বা অবৈধ মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না।
যদি ফোন কার্যকর থাকেও, তিনি মোবাইল ডেটা ব্যবহার বা ফোনকল করার মতো সিমের সেবা পাবেন না।
অবৈধ ফোন আমদানি, চুরি বা ক্লোন করা রোধ, ফোন ব্যবহারকারীর তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং অপরাধ দমন ও অপরাধীদের চিহ্নিত করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
নিবন্ধন প্রক্রিয়া
নেটওয়ার্কে সংযুক্ত রয়েছে এমন সব বৈধ দেশি বা বিদেশি ফোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হয়ে যাবে। তাই বর্তমানে তাদের কোনোকিছু করার প্রয়োজন নেই। যেসব ফোন বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে, সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে না।
ব্যবহারকারীরা *১৬১৬১# এ ডায়াল করে তাদের ফোনের বৈধতা যাচাই করে নিতে পারেন। অথবা, ‘KYD<space>15 digit IMEI number’ টাইপ করে ১৬০০২ এ ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে ফোনের বৈধতা জেনে নিতে পারেন। ফিরতি বার্তায় হ্যান্ডসেটটির বৈধতা সম্পর্কে জানিয়ে দেওয়া হবে।
যদি ফোনের আইএমইআই নম্বর জানা না থাকে, তাহলে *#06# এ ডায়াল করে তা জেনে নেওয়া যাবে। এ ছাড়াও, আইএমইআই নম্বর মোবাইলের বাক্সে অথবা হ্যান্ডসেটের পেছনে সেঁটে দেওয়া স্টিকারে লেখা থাকে।
গ্রাহকরা neir.btrc.gov.bd ওয়েবলিংকটি ব্যবহার করে এবং মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাস্টমার কেয়ার থেকেও এই সেবাটি নিতে পারবেন।
নতুন ফোন কেনার ক্ষেত্রে
১ জুলাই থেকে দেশে নতুন হ্যান্ডসেট কেনার সময় কিংবা বিদেশ থেকে আনার সময় এর বৈধতা যাচাই করতে হবে এবং ক্রয় রসিদটি সংরক্ষণ করতে হবে। কেনার আগেই হ্যান্ডসেটটির বৈধতা যাচাই করতে হবে। হ্যান্ডসেট কেনার পর যদি জানা যায় সেটি অবৈধ, তাহলে ক্রয় রসিদ দেখিয়ে এর সম্পূর্ণ মূল্য ফেরত পাওয়া যাবে। বিক্রেতা এ বিষয়ে সহযোগিতা না করলে বিটিআরসির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
কেউ যদি তার ব্যবহৃত হ্যান্ডসেট বিক্রি করে দিতে চান, তাহলে তাকে কাস্টমার কেয়ারে গিয়ে নিজের এনআইডি নম্বর থেকে হ্যান্ডসেটটির আইএমইআই নম্বরের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। এরপর ওই হ্যান্ডসেটটির নতুন ক্রেতা তার নামে এর নিবন্ধন করাতে পারবেন।
১ জুলাইয়ের পর কোনো হ্যান্ডসেট অকেজো হয়ে গেলে তা ব্যবহারকারীকে ম্যাসেজের মাধ্যমে জানানো হবে এবং হ্যান্ডসেটটি নিবন্ধনের জন্য তিন মাসের সময় দেওয়া হবে। গ্রাহক ক্রয় রশিদ বা অন্যান্য নথি দেখিয়ে সেটি বৈধ হিসেবে নিবন্ধন করতে পারবে। ব্যবহারকারী যদি অপারেটরকে হ্যান্ডসেটটির বৈধতার প্রমাণ দিতে না পারেন, তাহলে নির্দিষ্ট সময় পর এতে কোনো সিম কাজ করবে না।
বিদেশ থেকে আনা হ্যান্ডসেট
স্বয়ংক্রিয় নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর বিদেশ থেকে বৈধভাবে কেনা বা উপহার পাওয়া হ্যান্ডসেট বাংলাদেশি নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে যাবে।
ব্যবহারকারীদের ম্যাসেজের মাধ্যমে হ্যান্ডসেটটি বৈধ করার জন্য তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে বলা হবে। ম্যাসেজে ওয়েবসাইটের একটি লিংক থাকবে। ১০ দিনের মধ্যে এই লিংকে প্রয়োজনীয় তথ্য জমা দিয়ে হ্যান্ডসেটটি নিবন্ধন করা যাবে।
ব্যবহারকারীদের অনলাইন নিবন্ধনের জন্য neir.btrc.gov.bd এ একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে এবং স্পেশাল রেজিস্ট্রেশন নির্বাচন করতে হবে। ওয়েবসাইটে গ্রাহকের নাম, এনআইডি নম্বর, মোবাইলের আইএমইআই নম্বর, ক্রয় রসিদ, প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাগজপত্র বা পাসপোর্টের ছবি বা স্ক্যান কপি, ভিসা বা অভিবাসন সম্পর্কিত তথ্য দিতে হবে।
যদি নিবন্ধনটি অসম্পূর্ণ থেকে যায়, তবে তা অবৈধ বলে বিবেচিত হবে এবং ব্যবহারকারীদের নিবন্ধনের জন্য তিন মাস সময় দেওয়া হবে। এ বিষয়ে মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাস্টমার কেয়ার থেকেও সহযোগিতা পাওয়া যাবে।
বর্তমান আইন অনুযায়ী বিদেশ থেকে আসার সময় একজন সর্বোচ্চ দুটি হ্যান্ডসেট শুল্কমুক্ত সুবিধায় এবং শুল্ক পরিশোধ করা সাপেক্ষে আরও ছয়টি হ্যান্ডসেট আনতে পারেন।
Comments