প্রতি হাজার যক্ষ্মা রোগীর মধ্যে একজন এইডসে আক্রান্ত: নিপসমের গবেষণা
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি এক হাজার যক্ষ্মা রোগীর মধ্যে একজন এইডসে আক্রান্ত। এই তথ্যটিকে সংক্রামক ব্যাধিটিকে নির্মূল করার এবং ২০৩০ সালের ৯০-৯০-৯০ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে একটি ইতিবাচক ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা যায়।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) অংশ হিসেবে বাংলাদেশ যক্ষ্মা ও এইডস রোগীর সংখ্যা কমিয়ে আনার জন্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশে এইডসের প্রাদুর্ভাব নিম্ন পর্যায়ে। কিন্তু, যক্ষ্মা রোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ ৩০ দেশের একটি এবং বৈশ্বিক যক্ষ্মা রোগীর তিন দশমিক ছয় শতাংশ এখানেই থাকেন।
এইডস আক্রান্ত মানুষদের যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কারণ, এইডস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেওয়ার কারণে যক্ষ্মার জীবাণুর বিরুদ্ধে মানবদেহ সঠিক সুরক্ষা পায় না। বৈশ্বিকভাবে এইডস রোগে আক্রান্ত মানুষদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ যক্ষ্মা।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অধীনস্থ জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম) পরিচালিত ‘এইচআইভি সেরো সার্ভে অ্যামাং টিউবারকিউলোসিস পেশেন্টস ইন বাংলাদেশ, ২০১৯-২০২০’ নামক গবেষণা থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশে যক্ষ্মা রোগীদের মধ্যে শূন্য দশমিক এক শতাংশ এইডস রোগে আক্রান্ত হন।
নিপসমের পরিচালক ড. বায়েজিদ খুরশীদ রিয়াজ বলেছেন, এই ফলাফলটি বাংলাদেশের জন্যে খুবই ইতিবাচক একটি বিষয়। কারণ, এইডস রোগীদের মধ্যে যক্ষ্মার প্রাদুর্ভাবের হারটি সাধারণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইডসের বিস্তারের মাত্রার একটি স্পর্শকাতর নির্ণায়ক হিসেবে বিবেচিত।
যেহেতু এইডসের কারণে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে, সেহেতু যক্ষ্মা রোগীদের মধ্যে এইডস সংক্রান্ত নজরদারিকে এই দুটি রোগের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
আজ গবেষণাটির ফলাফল ঘোষণার আগে ডা. রিয়াজ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমাদেরকে সংক্রমণ হারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে এবং যদি তা করা যায়, সেক্ষেত্রে আমরা এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারব।’
বাংলাদেশে এর আগে এ ধরনের কোন গবেষণা পরিচালিত হয়নি।
২০২০ সালের জুন থেকে ডিসেম্বর মধ্যে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির (এনটিবি) আওতাধীন টিবি রিপোর্টিং সেন্টারের (টিআরসি) ব্যবস্থাপনায় থাকা ১২ হাজার ৬৫ জন যক্ষ্মা রোগীর ওপর একটি দেশব্যাপী ক্রস-সেকশনাল সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়েছিল।
২০১৯ সালের সরকারি তথ্য অনুযায়ী যক্ষ্মা বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের ওপর একটি অন্যতম প্রধান হুমকি। কারণ, প্রতি বছর ১২৯ জন এই রোগে মৃত্যুবরণ করেন।
এনটিপির তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে ৯৭৮ জন মানুষ যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হন।
বাংলাদেশে কমপক্ষে তিন লাখ ৫৭ হাজার মানুষ প্রতি বছর যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়। প্রতি এক লাখে ২২১ জন আক্রান্ত হন এবং মারা যান ২৯ জন।
প্রতি বছর কমপক্ষে পাঁচ হাজার ৯০০ জন যক্ষ্মা রোগীর মধ্যে ‘মাল্টি-ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স’ দেখা যায়, যা আশঙ্কাজনক একটি বিষয়।
এদের মধ্যে এক দশমিক পাঁচ শতাংশ নতুন রোগী এবং চার দশমিক নয় শতাংশ রোগীদের আগে চিকিৎসা করা হয়েছিল। আগে চিকিৎসা করা রোগীদের শরীরে যক্ষ্মার ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে।
‘তবে আনন্দের বিষয় এটাই যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকলেও ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট যক্ষ্মা রোগীদের মধ্যে একজনও এইডস আক্রান্ত হননি।’
এইডস আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে একজনও কাউকে রক্তদান করেননি। এ থেকে ধরে নেওয়া যায় যে দেশের রক্তদান প্রক্রিয়াটি মোটামুটি নিরাপদ রয়েছে।
গবেষণায় আরও জানা গেছে, যক্ষ্মা আক্রান্ত তৃতীয় লিঙ্গের রোগীদের মধ্যে কারও এইডস শনাক্ত হয়নি।
নমুনাগুলোর মধ্যে মাত্র ১২ জন যক্ষ্মা রোগীর দেহে এইডস শনাক্ত হয়েছে এবং তাদের মধ্যে চার জন গৃহবধূ।
ডা. রিয়াজের মতে, এই রোগীদের স্বামীরা এইডস আক্রান্ত হয়েছেন অথবা তাদের দেহে অন্য কোনোভাবে রোগটি সংক্রমিত হয়েছে।
গবেষণাটি থেকে জানা গেছে, যক্ষ্মা রোগীদের মধ্যে এইডসের সংক্রমণের হার পুরুষ ও নারীর ক্ষেত্রে একই।
প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা গেছে, যারা এইডস আক্রান্ত, তাদের মধ্যে ৮৩ শতাংশ ফুসফুসের যক্ষ্মায় ভুগছেন।
পেশার ক্ষেত্রে দেখা গেছে, পরিবহন শ্রমিক ও দিনমজুরদের মধ্যে এইডসের প্রাদুর্ভাব বেশি।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান
Comments