‘আকাশে ভিনগ্রহের যান?’ প্রতিবেদন প্রকাশ করবে যুক্তরাষ্ট্র
কয়েক যুগ ধরে সারাবিশ্বের মানুষের কল্পনাশক্তিকে অনুরণিত করা আকাশে অজানা উড়ন্ত বস্তু বা আন আইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্টের (ইউএফও) অস্তিত্বকে একসময় উড়িয়ে দিলেও, মার্কিন সরকার খুব শিগগির এ প্রসঙ্গে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে যাচ্ছে বলে গতকাল জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
তাদের ভাষায়, অজানা বায়বীয় ঘটনা বা আন আইডেন্টিফায়েড এরিয়াল ফেনোমেনার (ইউএপি) ওপর বিস্তারিত এই প্রতিবেদনটি মূলত মার্কিন সামরিক বাহিনীর বৈমানিকদের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ও প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন সম্মিলিতভাবে এ বিষয়ে কংগ্রেসের কাছে একটি প্রতিবেদন জমা দেবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পেন্টাগন নৌবাহিনীর বৈমানিকদের কাছ থেকে পাওয়া কিছু ভিডিও প্রকাশ করেছে এবং এগুলোর সত্যতা নিশ্চিত করেছে, যেখানে কিছু ভিন্নধর্মী আকাশযানকে আমাদের জ্ঞানের পরিধির বাইরের প্রযুক্তি, গতিবেগ ও উড্ডয়ন কৌশলের প্রদর্শনী করতে দেখা গেছে।
পেন্টাগনের মুখপাত্র স্যু গাফ বলেন, ‘আমরা যেকোনো জানা অথবা অজানা বিমানের মার্কিন আকাশসীমায় অনুপ্রবেশকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করি এবং এ ধরনের প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা হয়।’
নিউইয়র্ক টাইমস গত ৩ জুন একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে, মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এমন কোনো প্রমাণ পাননি যাতে বলা যায় যে, নৌবাহিনীর বৈমানিকদের দেখা ইউএপিগুলো ভিনগ্রহের প্রাণীদের মহাশূন্যযান। তবে, তারা এই আকাশযানগুলোর অনিয়মিত উড্ডয়নের ব্যাখ্যা দিতে পারেননি এবং তারা ভিনগ্রহের সঙ্গে যোগসূত্রের ব্যাপারটিকে এখুনি বাতিল করছেন না।
ইউএপি নিয়ে তৈরি করা প্রতিবেদনটির একটি গোপন অনুলিপি নিয়ে কিছু জ্যেষ্ঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ব্রিফিং দেওয়া হয়েছে। তাদের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, গত দুই দশকে সংকলিত ১২০টি ইউএপি ঘটনার কোনোটির জন্য মার্কিন সামরিক বাহিনী দায়ী নয় অথবা এগুলোতে সরকারের কোনো উন্নত প্রযুক্তিও ব্যবহার হয়নি। এই ঘটনাগুলো মূলত মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ও বিমানে কর্মরত ব্যক্তিরা বর্ণনা করেছেন।
বহুল ব্যবহৃত ‘ইউএফও’ শব্দটির পরিবর্তে এখন আনুষ্ঠানিক সরকারি পরিভাষায় ‘ইউএপি’ শব্দটি ব্যবহার করা হচ্ছে। ইউএফও শব্দটি বই, সিনেমা ও অন্যান্য মাধ্যমে ভিনগ্রহের প্রাণীদের মহাশূন্যযানকে বোঝানোর ক্ষেত্রে জনপ্রিয়।
২০০৪, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে ইউএপি দেখার কথা নিশ্চিত করেছে তাদের নৌবাহিনী।
ইউএফও নিয়ে জনমানুষের মনে আগ্রহ রয়েছে সেই ১৯৪৭ সাল থেকে। সে বছর একটি ছোট বিমানের বৈমানিক বর্ণনা করেছিলেন যে তিনি নয়টি ‘সসার’ (থালা/প্লেট) এর মতো বস্তুকে শব্দের চেয়েও দ্রুতগতিতে ওয়াশিংটন স্টেটের মাউন্ট রেইনিয়ের কাছ দিয়ে উড়ে যেতে দেখেছেন।
তার বক্তব্যের ফলশ্রুতিতে একটি দৈনিক পত্রিকায় এটিকে ‘উড়ন্ত সসার’ হিসেবে অভিহিত করা হয় এবং পরবর্তী কয়েক মাস ধরে অনেকেই এটিকে দেখার কথা বর্ণনা করেন।
ভিনগ্রহের প্রাণীদের ভূপাতিত মহাশূন্যযান, মার্কিন সরকারের গোপন এলিয়েন গবেষণাগার ও তাদের উদ্ধার করা মরদেহ নিয়ে বিভিন্ন জল্পনা কল্পনা কখনোই থেমে থাকেনি। হলিউডের বিভিন্ন সিনেমা, টিভি সিরিজ ও বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে এ বিষয়টি খুবই জনপ্রিয়।
যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যের স্নায়ুযুদ্ধের সময়ে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র একটি উপদেষ্টা কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, ইউএফও দেখার খবরগুলো জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকি স্বরূপ। এরপর থেকেই মূলত এ ধরনের ঘটনাগুলো মার্কিন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে অবজ্ঞা করতে শুরু করে, জানিয়েছেন সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা বিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রতিরক্ষা সচিব ক্রিস্টোফার মেল্লন।
তবে, এ বিষয়টি নিয়ে গোপনে তদন্ত ও গবেষণা থেমে থাকেনি।
ক্রিস্টোফার মেল্লন এই বিষয়টি নিয়ে মার্কিন সরকারকে আরও স্বচ্ছতা দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
জনসম্মুখে বিষয়টিকে উড়িয়ে দিলেও, মার্কিন বিমান বাহিনী তাদের ব্লু বুক প্রকল্পের আওতায় ইউএফও দেখার তথাকথিত ১২ হাজার ঘটনার বিশ্লেষণ ও তদন্ত করে এবং এর মধ্যে ৭০১টি ঘটনাকে ‘অজানা’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। ১৯৬৯ সালে প্রকল্পটি শেষ হয়। পরবর্তীতে এ প্রকল্প সম্পর্কে বিমান বাহিনী জানায় যে, তারা জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি কোনো হুমকি কিংবা ভিনগ্রহের প্রাণীর অস্তিত্বের কোনো প্রমাণ পায়নি।
ইউএফও গবেষক মিক ওয়েস্টের মতে আসন্ন প্রতিবেদনটিতে এ ধরনের ঘটনা থেকে প্রথাগত জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকির ব্যাপারে বিস্তারিত বর্ণনা থাকবে।
তিনি বলেন, ‘এ প্রতিবেদনে ইউএপির সঙ্গে অ্যান্টি-মাধ্যাকর্ষণ বা এলিয়েনের (ভিনগ্রহের প্রাণী) সংশ্লিষ্টটার প্রমাণ থাকার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।’
আরও পড়ুন:
আকাশে অজানা উড়ন্ত বস্তুর ভিডিও প্রকাশ করেছে পেন্টাগন
‘এলিয়েন আছে, ট্রাম্প জানতেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে’
Comments