ফি, ভয় ও সচেতনতার অভাবে দেশে করোনা পরীক্ষার হার নিম্ন
সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়ের জনসংখ্যা ১১ লাখ। তবে, জনসংখ্যা বিবেচনায় দেশের উত্তরাঞ্চলীয় এই জেলায় দৈনিক কোভিড পরীক্ষার সংখ্যা এতই কম যে তা থেকে জেলার করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে কোনো ধারণা পাওয়া যায় না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গতকাল সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় মাত্র নয় জনের কোভিড পরীক্ষায় করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে দুই জনের ফলাফল পজিটিভ এসেছে। অর্থাৎ শনাক্তের হার ২২ শতাংশ, যা দেশের মোট হারের চেয়ে অনেক বেশি।
আগের দিন পরীক্ষার সংখ্যা ছিল ১০ এবং এর মধ্যে তিন জন করোনা পজিটিভ ছিল। রোববার একই সংখ্যক লোকের পরীক্ষায় একজনের করোনা শনাক্ত হয়।
রাজধানীর বাইরের বেশিরভাগ জেলাতে সংক্রমণ ও মৃত্যু উভয়ই বাড়লেও গ্রামাঞ্চলের কোভিড পরীক্ষার চিত্র এটি।
তৃণমূল পর্যায়ের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা প্রতিটি জেলায় দৈনিক ৩০০টির মতো নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা রাখে এবং পরীক্ষার জন্য কিটের কোনো অভাব নেই।
তবে, যাদের লক্ষণ রয়েছে তারা অবহেলা ও করোনা শনাক্ত হলে তাদের আলাদা থাকতে হবে এই ভয়ে পরীক্ষা করাতে আসে না, জানান স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
ফি ১০০ টাকা হওয়াও গ্রামাঞ্চলে পরীক্ষা কম হওয়ার একটি কারণ। এটির কারণে অনেকে করোনা পরীক্ষায় নিরুৎসাহিত বোধ করে। দরিদ্রদের জন্য ফি মওকুফের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন মো. ফজলুর রহমান জানান, সীমান্তবর্তী জেলায় মারাত্মক এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় তারা পরীক্ষার জন্য লোকদের উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু, লোকেরা তা শুনছেন না।
‘আমাদের সব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও লোকজন কোভিড পরীক্ষা করানোর জন্য এগিয়ে আসছেন না। অনেক সময় আমরা তাদের তা করার জন্য বাধ্য করি। তবে, এটি হওয়া উচিত নয়। লোকেদের স্বেচ্ছায় পরীক্ষা করা উচিত। কারণ, পরীক্ষা বেশি হলে করোনার চিত্রটি পরিষ্কার হবে’, তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ১৬টি জেলায় গতকাল সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় প্রতিটি জেলায় ৫০টির কম নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
উদ্বেগজনকভাবে লক্ষ্মীপুর ও শরীয়তপুরে কোনো কোভিড পরীক্ষা হয়নি।
দুটি জেলার পরিস্থিতির সম্পূর্ণ বিপরীতে, সারাদেশে মোট ২৩ হাজার ২৬৫টি নমুনার মধ্যে রাজধানীতে ১০ হাজার ৩৫৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
গতকাল জাতীয় শনাক্তের হার হার ছিল ১৪ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং করোনার শুরু থেকে এ পর্যন্ত সামগ্রিক হার ছিল ১৩ দশমিক চার শতাংশ।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, পরীক্ষার সংখ্যা না বাড়লে দেশে ভাইরাস সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র পাওয়া সম্ভব হবে না।
যাদের করোনার লক্ষণ আছে, তাদের পরীক্ষা ও আলাদা না করতে পারলে তারা অজান্তেই ভাইরাসটি আরও ছড়াবে উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা যেকোনোভাবেই হোক সরকারকে পরীক্ষা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
কোভিড-১৯ সম্পর্কিত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম জানান, তারা বারবার পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর সুপারিশ করেছেন। তবে, দুর্ভাগ্যক্রমে তা হয়নি।
‘কোনো ব্যক্তিকে যদি কোভিড পজিটিভ পাওয়া যায়, তবে পরিবারের সব সদস্যকে পরীক্ষা করা উচিত। আলাদা থাকা ও কোয়ারেন্টিন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা উচিত’, তিনি গতকাল ডেইলি স্টারকে বলেন।
অধ্যাপক নজরুল বলেন, কোনো জেলায় ৫০টিরও কম নমুনা পরীক্ষা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, এর ফলে কোভিড পরিস্থিতির বাস্তব চিত্র বোঝা যাবে না।
‘এটি সত্য যে লোকেরা অনিচ্ছুক। তবে, সরকারের উচিত তাদের কোভিড পরীক্ষার জন্য উত্সাহিত করা’, তিনি বলেন।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, তারা কোভিড পরীক্ষা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।
তিনি গতকাল ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। তবে, লোকদের এগিয়ে আসতে হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জেলা প্রশাসন যদি এই বিষয়ে সুপারিশ করে, তবে সারাদেশে দরিদ্রদের জন্য কোভিড পরীক্ষার ফি মওকুফ করার বিষয়ে সরকার বিবেচনা করবে।’
গত সপ্তাহে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সীমান্তবর্তী কয়েকটি জেলায় দরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে কোভিড পরীক্ষা করানোর জন্য কর্মকর্তাদের বলেছেন।
জেলা পর্যায়ে পরীক্ষার চিত্র
হবিগঞ্জে প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাস করে। তবে, গতকাল জেলায় মাত্র ৪৬ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে নয় জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
সোমবার ৬৮টি নমুনা পরীক্ষায় পাঁচ জনের করোনা শনাক্ত হয়।
হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. একেএম মুস্তাফিজুর রহমান জানান, তারা দিনে ২০০ থেকে ৩০০টি নমুনা সংগ্রহ করার সক্ষমতা রাখেন। তবে, পরীক্ষার জন্য লোকজনকে কেন্দ্রে আসতে হবে।
‘জেলায় অনেক দরিদ্র মানুষ রয়েছে। যদি পরীক্ষার ফি মওকুফ করা হয়, তবে, আরও বেশি লোক পরীক্ষা করাতে আগ্রহী হবে’, তিনি বলেন।
ঝালকাঠিতেও পরীক্ষার সংখ্যা খুব কম ছিল।
জেলার আট লাখেরও বেশি মানুষের বিপরীতে গতকাল মাত্র ৬৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সোমবার মাত্র পাঁচ জনের পরীক্ষা করা হয়েছিল এবং দুই জনের করোনা শনাক্ত হয়।
সিভিল সার্জন অফিস জানিয়েছে, তাদের পর্যাপ্ত পরীক্ষার কিট রয়েছে।
জেলার সিভিল সার্জন রতন কুমার ঢালী বলেন, ‘আমরা কোভিড পরীক্ষার জন্য আসা কাউকে কখনো ফিরিয়ে দেইনি। তবে, লোকেরা এখনো পরিস্থিতি সম্পর্কে তেমন সতর্ক নয়। তারা ভাইরাসটিকে তেমন গুরুত্বই দেয় না।’
তিনিও দরিদ্রদের পরীক্ষার জন্য উৎসাহিত করতে ফি মওকুফ করার পরামর্শ দিয়েছেন।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন সুমন আলী
Comments