বিশ্বসেরা ৮০০’র তালিকায় কেন নেই বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়
যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কোয়াককোয়ারেল সাইমন্ডস (কিউএস) সম্প্রতি বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাঙ্কিং প্রকাশ করেছে। সেই তালিকায় ৮০০-এর মধ্যে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) প্রথম আট শ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে রয়েছে। তবে, গত বছরের মতো এবারের তালিকাতেও বিশ্বের ১০০টি সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে এশিয়ার ২৬টি বিশ্ববিদ্যালয়।
এ বিষয়ে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ঢাবির ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) পরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সেলিম রেজা নিউটনের সঙ্গে।
ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বর্তমানে র্যাঙ্কিংয়ের বিষয়ে আমাদের কোনো মনোযোগ নেই। আমাদের মনোযোগ হলো শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়ন ও গবেষণার ক্ষেত্র সম্প্রসারণে। এগুলোতে উন্নতি না করলে আমরা সার্বিকভাবে পিছিয়ে যাব। তাই আমরা এই দুটো বিষয় নিয়ে কাজ করছি।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ দুটি ক্ষেত্রে যেভাবে সম্প্রসারণ ঘটছে, তাতে আমরা এই দুই খাতে মনোযোগ না দিলে আরও পিছিয়ে যাব। সারা পৃথিবী র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে যাক, আমরা পিছিয়ে থাকি। আগে আমাদের মৌলিক ভিত মজবুত করতে হবে।’
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যত গবেষণা ও প্রকাশনা হয়, ব্যক্তিগত উদ্যোগেই বেশি হয়, প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে কম হয়। তার সবগুলো আবার রেকর্ডের মধ্যে আসে না। এ জাতীয় র্যাঙ্কিং তৈরিতে মূলত অনলাইনে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত সব গবেষণা, প্রকাশনা ও ম্যাগাজিন রেকর্ডের মধ্যে আসে না।’
এর বাইরে গবেষণার গুণগতমান ও শিক্ষকদের মানেরও সংকট রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখন যে নিম্নমানের শিক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে, তাতে ভবিষ্যৎ ভালো দেখছি না। তা ছাড়া উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্ব নেই। তারা বিশ্ববিদ্যালয়কে সরকারের একটা শাখা মনে করে। সরকার চায়, এখানে এমন একটি কাঠামো তৈরি করতে, যেখানে সরকার যা চাইবে, তারা তাই করবে। সরকার কীভাবে খুশি থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনের কাছে এখন সেই চিন্তাটাই মুখ্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা বড় হয়ে যে গবেষক হবে, সেটাও নানাভাবে হুমকির মধ্যে রয়েছে। শিক্ষা-গবেষণায় যোগ্য ও স্বাধীন উদ্যোগ নিয়ে সামনে আসবে এমন ব্যক্তিকে সরকার পছন্দ করে না।’
অধ্যাপক ড. সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার বলেন, ‘কিসের ওপর ভিত্তি করে র্যাঙ্কিং করা হয়েছে সেটা দেখা প্রয়োজন। র্যাঙ্কিং তৈরিতে ছাত্রদের বেতন থেকে শুরু করে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন, গবেষণা সবকিছুই অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। অনেক র্যাঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রে দেখা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে কতজন শিক্ষার্থী আছে, কী পরিমাণ বেতন দিচ্ছে সেটাও। প্রথম ক্রাইটেরিয়াতে গেলে আমরা র্যাঙ্কিংয়ে অনেক এগিয়ে থাকব সন্দেহ নেই। তবে, পরের ক্রাইটেরিয়াতে আমরা অনেকে পিছিয়ে যাব। কারণ আমাদের এখানে বেতন খুব কম।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক শিক্ষকের ভালো ভালো রিসার্চ পাবলিকেশন্স আছে। তবে, সেগুলো পাবলিশ করার মতো ভালো ওয়েবসাইট নেই। বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়মিত তাদের গবেষণা প্রকাশনা ওয়েবসাইটে আপলোড করে থাকে। আমাদের এখানে সেটা করা হয় না। তা ছাড়া ভালো একটা ওয়েবসাইট তৈরি ও মেনটেইন করার জন্য ভালো বাজেটও দরকার, সেটা এখানে দেওয়া হয় না।’
অনেক ক্ষেত্রে র্যাঙ্কিং তৈরিতে ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ঢাবির আইবিএ ছাড়া আর দু-একটা প্রতিষ্ঠান আছে, যারা ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে ভালো যোগাযোগ রাখে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই ও গণমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে কীভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে সেগুলোও র্যাঙ্কিং গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালো খবর গণমাধ্যমে খুব একটা দেখা যায় না। নেতিবাচক কিছু হলেই সেটা ফলাও করে প্রচার করা হয়।’
অন্যান্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সব ডিজিটাল মোডে চলে গেছে, সবকিছু ডিজিটালি করছে। ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে তাদের ভালো যোগাযোগ রয়েছে উল্লেখ করে ফারহাত আনোয়ার বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাইদের সঙ্গেও ঠিকমতো যোগাযোগ নেই।’
অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খান বলেন, ‘অনেকগুলো ক্রাইটেরিয়ার ভিত্তিতে র্যাঙ্কিং করা হয়। সবগুলো ক্রাইটেরিয়ার জন্য বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উপযুক্ত নয়। বিদেশি শিক্ষক-শিক্ষার্থী এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্ট। আমরা দেখতে পাই, ২০১২ সালের আগেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক বিদেশি শিক্ষার্থী ছিল। সেটা এখন অনেক কমে গেছে। এ ছাড়া গবেষণায় আমাদের প্রচেষ্টা অনেক কমে গেছে। এক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক প্রচেষ্টাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যারা কয়েকজন কাজ করছি, তাদের কাজ দেখানোরও ভালো কোনো উপায় নেই। অন্যান্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে আছে। শিক্ষকদের কাজ দেখানোর জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাও দরকার।’
‘একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট তার আইডেনটিটি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ওয়েবসাইট আছে, সেটা দেখলে মনে হয় কোনো পার্টির ওয়েবসাইট। এসব বিষয়ে আমাদের অমনোযোগিতা রয়েছে।’
`আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া পিএইচডি ও এমফিল ডিগ্রি মানসম্পন্ন নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ও খুব একটা গুরুত্ব দেয় না। আবার দেশেও পিএইচডি করার ভালো সুযোগ নেই। অধিকাংশ শিক্ষক পিএইচডি করার জন্য দেশের বাইরে চলে যান। তাছাড়া এখানে অ্যাডভান্সড রিসার্চ খুব কম গুরুত্ব পায়। সায়েন্স ফ্যাকাল্টিতে কিছু হচ্ছে, অন্যান্য ফ্যাকাল্টিতে অনেক কম হয়।’
‘র্যাঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রকাশনা, ইতিবাচক উপস্থাপনা র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকতে ভূমিকা রাখে।’
অ্যাকাডেমিক পরিবেশ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকরা সরকারি দলের পেছনে ছোটেন ব্যক্তিগত সুবিধা নেওয়ার জন্য। এছাড়া, গত এক দশকে অনেক বিতর্কিত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সাত জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলে দেখা গেছে তাদের মধ্যে দুই জন যোগ্য, বাকি পাঁচ জন অযোগ্যকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’
‘র্যাঙ্কিংয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিদেশি শিক্ষক, ভিজিটিং প্রফেসরদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ’ উল্লেখ করে তানজিম উদ্দিন খান বলেন, ‘আমাদের এখানে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে নিয়োগ দিতে হলে অনেক ধরনের জটিলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।’
অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘এ ধরনের র্যাঙ্কিংয়ের গবেষণা ও সেগুলোর ফান্ডিং নিয়েও প্রশ্ন আছে। র্যাঙ্কিং কারা করছে, কী উদ্দেশ্যে করছে সেগুলোও দেখতে হবে। র্যাঙ্কিংয়ে ভালো করার জন্য গবেষণা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। আমাদের মতো গরিব দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য খুব কম বাজেট থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি এক হাজার কোটি টাকা বাজেট দেওয়া হয়, তাহলে শুধু গবেষণার জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা দরকার। কিন্তু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে গবেষণার জন্য মাত্র পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই টাকা দিয়ে ভালো গবেষণা সম্ভব না। ভালো মানের একটা গবেষণার জন্য যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, সেটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দেওয়া হয় না।’
যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বছরে বৃত্তির জন্য যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বছরের বাজেটের চেয়ে বেশি বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের র্যাঙ্কিং বিশ্ব রাজনীতির একটা অংশ।’
একই র্যাঙ্কিং চীন করলে যে ধরনের হবে, যুক্তরাষ্ট্র করলে সেটার অন্য ফলাফল আসবে উল্লেখ করে রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘যদি হিউম্যান রাইটস নিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র র্যাঙ্কিং করে, তাহলে চীনের র্যাঙ্কিংয়ে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। চীন বলবে, যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে থাকা গুয়ানতানামো বে কারাগারে সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়। আবার যুক্তরাষ্ট্রের র্যাঙ্কিংয়ে চীন সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে থাকবে।’
তা ছাড়া ‘টাকা দিয়ে’ এ ধরনের র্যাঙ্কিং তৈরি করা যায় বলেও মন্তব্য করেন রোবায়েত ফেরদৌস।
অধ্যাপক সেলিম রেজা নিউটন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়কে করপোরেট প্রতিষ্ঠান বানানোর অন্যতম একটা পদ্ধতি হলো এই র্যাঙ্কিংয়ের রাজনীতি। এখানে এমন এমন সব রিকয়ারমেন্ট থাকে, র্যাঙ্কে পৌঁছানোর জন্য যেগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের আত্মাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এখন আমাদের ঠিক করতে হবে, বাংলাদেশে আমরা কী ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় চাই। যে ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় আছে, সেগুলো যে খুব ভালোভাবে চলছে আমি তা বলছি না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উন্নত করার প্রচুর সুযোগ আছে। আমাদের সেটা করা উচিত, করতে পারা উচিত। সেটা নিয়ে আমাদের নিজেদের বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করা উচিত। আলাদাভাবেই আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে গুছিয়ে সারাদেশের মানুষ মিলে আলাপ করা দরকার। সেটা অন্য রকমের আলাপ। আমরা যদি ঠিক করি আমরা র্যাঙ্কিংয়ের লাইনেই যাব, করপোরেট র্যাঙ্কিংয়ের লাইনে— তাহলে সেটা মনে হয় আমাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে না।’
বিভিন্ন সময়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাঙ্কিংয়ের উন্নতি-অবনতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বলতে যা চলে, সেটা তো অত গোছানো কিছু হয় না। আমরা ভীষণ রকমের আমলাতান্ত্রিক একটা পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চালাই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মূলত একেকজন ভিসির চালকদারী, ইজারাদারী। এটা বিশেষ করে গত ২০-২৫ বছর ধরে সরকারগুলো, বিভিন্ন সরকার এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এখন গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কিছু দেখা যায় না, শুধু ভিসিকে দেখা যায় এবং সেগুলো দেখা যায় অনিয়মের কারণে, ক্ষতিকর সব কারণে। এখান থেকে আমি আর কী আশা করব? এখানে সত্যিকারের কোনো ধারাবাহিকতা নেই। সত্যিকারের কোনো স্পৃহাকে উৎসাহিত করা হয় না। ফলে আমাদের আপনা-আপনি যা হয়, সেটাই হয়তো র্যাঙ্কিংয়ে দেখা যায়। এখানে কোনো সিস্টেমেটিক ইফোর্ট নেই।’
Comments