ডলার কেনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রেকর্ড

bangladesh_bank.jpg
বাংলাদেশ ব্যাংক। স্টার ফাইল ফটো

চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে সাত দশমিক ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কিনে এ যাবতকালের সর্বোচ্চ ডলার কেনার রেকর্ড তৈরি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। টাকার মূল্য বাড়ানো ঠেকাতে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে এ ডলার কেনা হয়েছে।

এর আগে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে পাঁচ দশমিক ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কিনেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের আগে সেটিই ছিল সর্বোচ্চ ডলার কেনার রেকর্ড।

কিন্তু, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে ব্যবসায় মন্দাজনিত কারণে আমদানি কমে যায়। পাশাপাশি, রেমিট্যান্সের উচ্চপ্রবাহের কারণে দেশের ব্যাংকিং খাতে প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত ডলার জমা হতে থাকে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জুলাই-মে মাসে ডলার কেনার আগের রেকর্ড ভাঙতে বাধ্য হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, অর্থনৈতিক মন্দা থেকে বেরিয়ে আসার আগ পর্যন্ত মুদ্রাবাজারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই হস্তক্ষেপ অব্যাহত রাখা উচিত।

মার্কিন ডলার কেনার ফলে টাকার মান বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে। এর ফলে, রপ্তানি খাতের ব্যবসায়ীরা সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন। টাকার মান পড়ে গেলে তাদের রপ্তানি থেকে আয় কমে যেতো। এ ছাড়া, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়ছে।

কিন্তু, ডলারের বিপরীতে বড় অংকের টাকা বাজারে সরবরাহ করতে হচ্ছে। এর জের ধরে বাজারে এখন অতিরিক্ত তারল্য সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, ব্যবসা মন্দার কারণে এখন ঋণের চাহিদা কমে গেছে। ফলে ব্যাংকে জমা হচ্ছে অলস টাকা। 

বিষয়টি ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যয়ের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। গত এপ্রিলে ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ প্রায় দুই লাখ কোটি টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে।  

প্রচুর ডলার কেনা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক মার্কিন মুদ্রার বিপরীতে টাকার মূল্য নির্ধারণে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। জুলাই থেকে স্থানীয় মুদ্রা শক্তিশালী হওয়া শুরু করে। এর জের ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে হস্তক্ষেপ করে।

জুলাই থেকে ডলার প্রতি আন্তঃব্যাংক বিনিময় হার প্রায় ৮৪ দশমিক ৮০ টাকায় স্থিতিশীল রয়েছে। গত বছরের ২ জুন এ হার ছিল ৮৪ দশমিক ৯৫ টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক হস্তক্ষেপ না করলে টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য ব্যাপকভাবে কমে যেতো।

বাংলাদেশ পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘স্থানীয় মুদ্রার মূল্য বেড়ে যাওয়া ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার কেনার উদ্যোগ সঠিক। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ হস্তক্ষেপ চালিয়ে যাওয়া উচিত।’

এর মানে হচ্ছে, মহামারির সময় প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডলার থাকবে বাংলাদেশে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাবেক কর্মকর্তা মনসুর আরও বলেন, ‘দুর্বল টিকাদান কর্মসূচির প্রেক্ষিতে আগামী অর্থবছরের শেষ পর্যন্ত ব্যবসায়িক মন্দা অব্যাহত থাকবে। বিশ্বব্যাপী পণ্যবাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে সম্প্রতি আমদানি ব্যয় বাড়লেও, তা বিনিয়োগ খাতের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেনি। আমদানি করা পণ্যের পরিমাণ খুব একটা বাড়েনি।’

তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক এনভয় গ্রুপের চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপের বিষয়টি সময় উপযোগী। কারণ, মন্দা থেকে রপ্তানিকারকদের স্বার্থ রক্ষা করতে এটি শক্তিশালী ভূমিকা পালন করছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের এ পদক্ষেপ সত্ত্বেও এখনো প্রতিযোগী দেশের মুদ্রার চেয়ে টাকার বিনিময় হার তুলনামূলকভাবে বেশি। মার্কিন ডলারের বিপরীতে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের মুদ্রা মূল্য টাকার চেয়ে বেশি কমেছে।

তিনি বলেন, ‘টাকা শক্তিশালী হওয়ার কারণে আমরা প্রতিযোগিতার সংকটে পড়েছি। রপ্তানিকারকদের স্বার্থ রক্ষায় সামনের দিনগুলোতে স্থানীয় মুদ্রা আরও অবমূল্যায়ন করা উচিত।’

ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলী বলেন, ‘রেমিট্যান্সের উচ্চপ্রবাহের কারণে সামনের মাসগুলোতেও বাংলাদেশে ডলার সরবরাহ অব্যাহত থাকবে।’ 

জুলাই থেকে মে মাসের মধ্যে বাংলাদেশ ২২ দশমিক আট বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স অর্জন করেছে, যা এখন পর্যন্ত এক বছরে সর্বোচ্চ।

আমদানি বাড়তে শুরু করলে এ বাড়তি ডলার বাংলাদেশকে সহায়তা করবে।

গত ২ জুন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ৩৪ দশমিক ৭০ শতাংশ বেশি।

প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম

Comments

The Daily Star  | English

3,930 candidates for 44th BCS to face fresh viva: PSC

The oral interviews of these candidates were conducted up until July 18 after a total of 11,732 examinees passed the 44th BCS written tests

1h ago