উত্তরাঞ্চলে বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষার পরিকল্পনা

ছবি: সংগৃহীত

দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের মধ্যে আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে পরীক্ষার আওতায় আনতে বিনামূল্যে শনাক্তকরণ পরীক্ষার পরিকল্পনা করছে সরকার।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এসব জেলায় করোনা সংক্রমণের প্রকৃত অবস্থা নিরূপণের জন্য সরকারের কাছ থেকে এমন নির্দেশনা এসেছে।

গত শনিবার বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে সাধারণ মানুষকে কোভিড পরীক্ষার বিষয়ে উৎসাহিত করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই বৈঠকে রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের সিভিল সার্জনরাও উপস্থিত ছিলেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনের তথ্য অনুসারে, গতকাল সোমবার রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে কোভিড শনাক্তের হার যথাক্রমে ২৫ ও ২৩  শতাংশের উপরে ছিল। বিপরীতে সারাদেশে শনাক্তের হার ছিল ১১ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ বিষয়ে গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘উত্তরের বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, এই অঞ্চলে বসবাসরত প্রচুর নিম্ন আয়ের মানুষ আর্থিক কারণে কোভিড পরীক্ষা করাতে চান না। তাই পরীক্ষার খরচ যদি মওকুফ করা হয়, তাহলে তারা এ বিষয়ে উৎসাহিত হবেন।’

এই পরিস্থিতিতে সরকার এমন উচ্চ সংক্রমণের জেলাগুলোতে ‘কিছুদিনের জন্য বিনামূল্যে কোভিড পরীক্ষার পরিকল্পনা করছে’ বলে জানান জাহিদ মালেক।

কোভিড পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই মন্তব্য করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা যদি ১০টি পরীক্ষা করি, আর তাতে যদি পাঁচটির ফল পজিটিভ আসে, তার মানে হলো শনাক্তের হার ৫০ শতাংশ। যা প্রকৃত অবস্থাকে তুলে ধরে না। তাই বৈঠকে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে জোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অভিমত, ‘যত বেশি সংখ্যক মানুষকে পরীক্ষার আওতায় আনা যাবে, আমরা তত পরিষ্কার চিত্র দেখতে পাব।’

একইসঙ্গে তিনি বলেন, পরিবহন শ্রমিকরা যেহেতু সারাদেশে যাতায়াত করেন, তাই তাদের করোনা পরীক্ষার জন্য জায়গা নির্দিষ্ট করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে তাদের কোভিড পরীক্ষা করা হবে অ্যান্টিজেন র‌্যাপিড টেস্টের মাধ্যমে।

রাজশাহীর সিভিল সার্জন কাইয়ুম তালুকদার জানান, বর্তমানে এই বিভাগের করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। এ কারণে বিনামূল্যে কোভিড পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছিলেন তারা।

কাইয়ুম ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বিনামূল্যে কোভিড পরীক্ষার বিষয়ে মন্ত্রী আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। একইসঙ্গে দ্রুত এই সিদ্ধান্ত আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।’

লালমনিরহাট জেলার সিভিল সার্জন নির্মলেন্দু রায় বলেন, দ্রুত শনাক্তের জন্য পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে বিনামূল্যের পরীক্ষা এই অঞ্চলে আর্থিকভাবে দুর্বল ব্যক্তিদের করোনা পরীক্ষা করার বিষয়ে উৎসাহিত করবে।

গত ৩১ মে থেকে নীলফামারীতে করোনা শনাক্তের হার বাড়ছে। যা বর্তমানে প্রায় ২০ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে জানিয়ে নির্মলেন্দু রায় আরও বলেন, ‘আমাদের এখন পরীক্ষার সংখ্যা আরও বাড়ানো দরকার। সম্ভাব্য রোগীদের জন্য যদি পরীক্ষাটা বিনামূল্যে করার ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে আমরা সেটা দ্রুত শনাক্ত করতে পারব। যা সংক্রমণ কমিয়ে আনতে পারে।’

গত বছরের মার্চে দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুর দিকে সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিল। তবে, পরবর্তীতে ২৯ জুন ‘অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা এড়াতে ও অধিকতর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতের জন্য’ সরকার করোনা পরীক্ষার জন্য মূল্য নির্ধারণ করে দেয়।

পরে বিভিন্ন মহলের সমালোচনার মুখে সরকার মূল্য কমিয়ে আনে। বর্তমানে সরকারি বুথে কোভিড পরীক্ষার জন্য ১০০ টাকা করে নেওয়া হয়। বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহের বিষয় থাকলে খরচ হয় ৩০০ টাকা। দুটি ক্ষেত্রেই সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে।

ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ

Comments

The Daily Star  | English

MRT-1 unlikely to be ready before 2030

Five years have passed since the country’s first underground metro rail project was approved, but construction of the key structure has not yet begun.

7h ago