বড় অঙ্কের মূলধন ঘাটতিতে ১১ ব্যাংক

স্টার ফাইল ছবি

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ২৪ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে ১১টি ব্যাংক। বড় অঙ্কের এই ঘাটতি ব্যাংকগুলোর নাজুক পরিস্থিতিকে উন্মোচিত করেছে।

মূলধন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকগুলো হলো- বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক ও এবি ব্যাংক।

ইতোপূর্বে সংঘটিত দুর্নীতির জের ধরে ব্যাংকগুলো এই বিরাট অঙ্কের মূলধন ঘাটতির মুখে পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক মার্চ পর্যন্ত ১১ হাজার ২২৯ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতির সম্মুখীন হয়েছে, যা আগের তিন মাসের চেয়ে চার শতাংশ বেশি।

একই সময় সোনালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি তিন হাজার ৬৩ কোটি টাকা থেকে বেড়ে তিন হাজার ৬৯৭ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এ সমস্যাটির ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। কারণ, এ ধরনের পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে ব্যাংকিংখাত নিয়ে নেতিবাচক বার্তা দেয়।’  

তিনি জানান, কোনো দেশে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিদেশি ব্যবসায়ীরা সাধারণত ব্যাংকের মূলধনের ভিত্তি ও খেলাপী ঋণ পর্যবেক্ষণ করে।

এ ধরনের মূলধন ঘাটতি তাদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।  

তবে ইতিবাচক দিক হচ্ছে, তিন মাস আগে দেশের ব্যাংকিং খাতে ১৫ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা মূলধন উদ্বৃত্ত থাকলেও মার্চে তা বেড়ে ১৬ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেগুলেটরি ফরবিয়ারেন্সের কারণে প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) জনতা ব্যাংকের মূলধন পরিস্থিতি যথেষ্ট উন্নতি হয়।

রেগুলেটরি ফরবিয়ারেন্স এমন একটি নীতি, যার মাধ্যমে মূলধন পুরোপুরি নি:শেষ হয়ে গেলেও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অর্থাৎ, ব্যাংকিং নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ করার ক্ষেত্রে এটি এক ধরনের ছাড়। 

প্রত্যেক ব্যাংককে খেলাপী ও সাধারণ ঋণের (যেটি খেলাপী হয়নি) বিপরীতে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা আমানতকারীদের স্বার্থে আলাদা করে রাখতে হয়, যাকে প্রভিশন বলা হয়।

এই ধরনের প্রয়োজনীয় প্রভিশন রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ছাড় দেয় জনতা ব্যাংককে। এর ফলে জনতা ব্যাংকের মূলধন কৃত্রিমভাবে বেড়ে যায়।

কিন্তু এই ফরবিয়ারেন্স পাওয়া সত্ত্বেও, গত মার্চে জনতা ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়ায় ৪১৭ কোটি টাকা, যা তিন মাস আগে ছিলো পাঁচ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা।

তবে, জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুস সালাম আজাদ জানান, গত মাসে আরেকটি রেগুলেটরি ফরবিয়ারেন্স পাওয়ায় ব্যাংকটিতে এখন ছয় হাজার ১৭ কোটি টাকার মূলধন উদ্বৃত্ত রয়েছে।

ব্যাংকটিকে গত মাসে পর্যায়ক্রমে প্রয়োজনীয় মূলধন রাখার অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বর্তমানে যে মূলধন রাখার কথা ছিলো, জনতা ব্যাংক আগামী চার বছরে তা পর্যায়ক্রমে রাখতে পারবে।

আজাদ বলেন, ‘নীতিমালার এই ছাড়ের কারণে গত বছর আমরা ১৪ দশমিক ৪৫ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছি।’

এদিকে, মার্চে বেসিক ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়ায় এক হাজার ৭২ কোটি টাকা। আগের প্রান্তিকের চেয়ে এটি ২৮ দশমিক ১৫ শতাংশ কম। 

বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আনিসুর রহমান জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেসিক ব্যাংককে নিট ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। মূলধন ঘাটতি জের ধরে এই পরিস্থিতির উদ্ভব।

তিনি বলেন, ‘আমরা খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছি। ঘাটতি কমাতে সহায়তা করবে এটি।’

এ ছাড়া, ব্যাংকটি বিভিন্ন সরকারি সংস্থার কাছে স্বল্প সুদে আমানত খোঁজ করছে।

তবে, ব্যাংকটির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বেসিক ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের বড় অংশ এখন খেলাপী। এর প্রায় ৯০ শতাংশই আদায়যোগ্য নয়।

এ সময়ের মধ্যে ব্যাংকটি থেকে অন্তত চার হাজার ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। তৎকালীন চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুসহ ব্যাংকটির আরও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও বোর্ড সদস্য এতে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ আছে।

২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে ব্যাংকটি উচ্চ সুদে দীর্ঘমেয়াদি আমানত ব্যবস্থা নিয়েছিলো। এসব আমানত এখন ব্যাংকের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই উচ্চ সুদ মূলধন ঘাটতির অন্যতম একটি কারণ।

ওই ব্যাংক কর্মকর্তা আরও বলেন, বেসিক ব্যাংক যদি সরকারি সংস্থাগুলোর কাছ থেকে স্বল্প খরচে আমানত পেতে সক্ষম হয়, তবে তারা সুন্দরভাবে ব্যালেন্সশিট ব্যবস্থাপনা করতে পারবে। পাশাপাশি, তা মুনাফাও অর্জন সাহায্য করবে।

মার্চে ব্যাংকিং খাতে গড় মূলধন পর্যাপ্ততার অনুপাত দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশে দাঁড়ায়, যা ডিসেম্বরে ছিল ১১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এর অর্থ, প্রথম প্রান্তিকে ব্যাংকিংখাতে মূলধনের সামগ্রিক ভিত্তি একটু শক্ত হয়েছে।

প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh-India summit

Dhaka to host high-level Bangladesh-India summit next month

The first high level official meeting between Dhaka and New Delhi since the fall of Awami League government is scheduled to be held in Dhaka next month

4h ago