চীনের সিনোভ্যাকের টিকা কিনবে বাংলাদেশ

সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিন। ছবি: রয়টার্স

দেশের নাগরিকদের প্রায় সবাইকে টিকা দিতে সিনোফার্মের পর চীনের আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাকের কাছ থেকে করোনাভাইরাসের টিকা কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার।

এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ) গত ৩ জুন সিনোভ্যাকের কোভিড-১৯‘করোনাভ্যাক’ এর অনুমোদন দিয়েছে। সিনোভ্যাকের স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে ইনসেপটা টিকা লিমিটেড বাংলাদেশে এই টিকাটির জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন চেয়ে আবেদন করে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা সিনোভ্যাকের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, আর আলোচনার অংশ হিসেবে আমরা জরুরি ব্যবহারের জন্য এর অনুমোদন দিয়েছি। এখন আমাদের আলোচনা আরও দ্রুত এগোবে।’

‘যদি এর দাম আমাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে, চুক্তির শর্তগুলো আমাদের পক্ষে থাকে এবং যদি সরবরাহের সময়সীমা আমাদের চাহিদা অনুযায়ী হয়, তাহলে আমরা সিনোভ্যাকের কাছ থেকে টিকা কিনবো’, বলেন তিনি।

তিনি বলেন, গণ টিকাদান কর্মসূচীর পর অনেক দেশেই লকডাউন শিথিল করা হয়েছে এবং চলাচলের বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া হয়েছে।

‘আমাদের দেশের জনমানুষকে টিকা দিতে হবে এবং এজন্য আমাদের বিপুল পরিমাণ টিকা প্রয়োজন। এ কারণে আমরা সব সম্ভাব্য উৎসের সঙ্গে কথা বলছি,’ বলেন মন্ত্রী।

পঞ্চম টিকা হিসেবে করোনাভ্যাককে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটি ইতোমধ্যে আরও ২২টি দেশে অনুমোদন পেয়েছে। ১ জুন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভ্যাককে জরুরি ব্যবহারের জন্য তালিকাভুক্ত করেছে।

দুই ডোজ বিশিষ্ট এই টিকা দুই থেকে চার সপ্তাহের ব্যবধানে ১৮ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সীদের দেওয়া যায়। টিকাটি দুই থেকে আট ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায়।

ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মুক্তাদিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তার প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র সিনোভ্যাকের আবেদনপত্রটি তাদের পক্ষ থেকে জমা দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘সরকার সিনোভ্যাকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করবে এবং টিকা কিনবে। সেখানে ইনসেপটার কোনো ভূমিকা থাকবে না। কীভাবে সিনোভ্যাকের কাছ থেকে টিকা কেনা হবে সে ব্যাপারটি পুরোপুরি সরকারের হাতে।’

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি নিবন্ধিত হওয়ার পর দেশে সিনোভ্যাক টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকছে না।

সিনোফার্মের ভ্যাকসিনের ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, তারা আলোচনা করছেন এবং আশা করছেন যে ক্রয় চুক্তি খুব দ্রুতই সই হবে।

ইতোমধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, রাশিয়ার সঙ্গে স্পুতনিক-ভি টিকার যৌথ উৎপাদন ও ক্রয়ের চুক্তি সংক্রান্ত আলোচনা শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

বাংলাদেশে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার আই. ইগনেটভ মন্ত্রীর বাসায় একটি বিদায়ী বৈঠকে অংশ নেওয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানাবে কখন চুক্তিটি সম্পন্ন হবে। আমরা শুধু আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছি।’

ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দ্রাবক এসে পৌঁছলেই তারা ফাইজারের কোভিড-১৯ টিকা দেওয়া শুরু করবেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর মো. শামসুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এই দ্রাবকটি (টিকা দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়) সোমবারে এসে পৌঁছবে। এরপর আমরা টিকা দেওয়ার দিন-তারিখ নির্দিষ্ট করতে পারবো।’

তিনি জানান, এই টিকাটি রাজধানীর চারটি টিকাদান কেন্দ্র থেকে দেওয়া হবে এবং যারা ইতোমধ্যে নিবন্ধন করেছেন তাদেরকে এটি দেওয়া হবে।

গত সোমবার ফাইজার ভ্যাকসিনের এক লাখ ছয় হাজার ডোজের একটি চালান ঢাকায় এসে পৌঁছেছে। বৈশ্বিক টিকা সরবরাহ প্রকল্প কোভ্যাক্সের আওতায় এই টিকাগুলো পেয়েছে বাংলাদেশ।

২৭ মে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ) জরুরি ব্যবহারের জন্য ফাইজার টিকার অনুমোদন দেয়।

বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে ১৩ জুনের মধ্যে উপহার হিসেবে আরও ছয় লাখ ডোজ সিনোফার্ম টিকা পাওয়ার কথা।

১২ মে চীনের কাছ থেকে উপহার হিসেবে বাংলাদেশ পাঁচ লাখ সিনোফার্ম টিকা পেয়েছে। সরকার ইতোমধ্যে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য দিয়ে এই ডোজগুলো দেওয়া শুরু করেছে।

২৬ এপ্রিল মজুদ কমে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশ কোভিড ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়া স্থগিত করে। একই কারণে অনেক জায়গায় দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়াও স্থগিত করা হয়।

বাংলাদেশে গত ৭ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন পর্যায়ে ১৮ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সের নাগরিকদের জন্য গণটিকাদান কর্মসূচীর উদ্বোধন করা হয়।

সরকার চলমান টিকা নিবন্ধন প্রক্রিয়া গত ৫ মে স্থগিত করে।

 

ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

MRT-1 unlikely to be ready before 2030

Five years have passed since the country’s first underground metro rail project was approved, but construction of the key structure has not yet begun.

7h ago