করোনার ভ্যাকসিন: বয়সসীমা কমানোর পরিকল্পনা করছে সরকার

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনার লক্ষ্য
স্টার ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন দেওয়ার ক্ষেত্রে বয়সসীমা আরও কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে সরকার। ১৮ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চালুর লক্ষ্যে সরকার বয়সসীমা কমানোর কথা ভাবছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, ‘বর্তমানে টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন বয়সসীমা ৪০ বছর। আমরা এটি আরও কমিয়ে ১৮-২০ বছর বয়সীদের দেওয়ার পরিকল্পনা করছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরামর্শ করে আমরা এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’

যেসব শিক্ষকরা এখনো টিকা নেননি, তাদেরকেও এই ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি।

‘আমরা প্রতিনিয়ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। কিন্তু, সবকিছুই নির্ভর করছে ভ্যাকসিনপ্রাপ্তির ওপর। ভ্যাকসিন সংগ্রহের ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি যথেষ্ট ভালো। আশা করছি মাসখানেকের মধ্যেই আমরা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করতে পারব’, বলেন মহাপরিচালক।

তিনি আরও বলেন, ‘দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমছে। সবাই যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, তাহলে সংক্রমণ আরও কমবে।’

গত সপ্তাহে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, তারা কোভিড-১৯’র জাতীয় প্রযুক্তিগত উপদেষ্টা কমিটির (এনটিএসি) পরামর্শের ওপর নির্ভর করছেন। দেশে করোনার সংক্রমণ হার পাঁচ শতাংশের নিচে নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় চালুর পরামর্শ দিয়েছে এনটিএসি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শনাক্তের হার ছিল নয় দশমিক ৩০ শতাংশ। এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

এ বিষয়ে পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এ বিষয়ে এখনো তারা কোনো বৈঠক করেননি।

‘আমি মনে করি, আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত আমাদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা উচিত। এরপর আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারব’, বলেন তিনি।

এই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ, ধাপে ধাপে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা যেতে পারে এবং সেই অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া যেতে পারে।

‘প্রথমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, এরপর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং তারপর কলেজ। তবে, ভ্যাকসিনপ্রাপ্তির ওপর এই পরিকল্পনাটি নির্ভর করবে’, বলেন তিনি।

ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষক ও কর্মচারী ভ্যাকসিন নিয়েছেন।

ডা. দীপু মনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থীকে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। সর্বশেষ গত সপ্তাহে এই বন্ধের মেয়াদ আবারও বাড়িয়ে ১২ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।

বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে এবং সরকার রাষ্ট্র-পরিচালিত টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে শিক্ষামূলক কর্মসূচি সম্প্রচার করছে।

শিক্ষামন্ত্রী এও জানিয়েছে যে, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে আগামী ১৩ জুন থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় খুলে দেওয়া হবে।

সরকার ইতোমধ্যে দেশে জরুরি ব্যবহারের লক্ষ্যে চীনের সিনোফার্মের ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়েছে। শিগগিরই চীনের সঙ্গে দেড় কেটি ডোজ ভ্যাকসিন কেনার একটি চুক্তি সই হবে বলে আশা করা হচ্ছে। চুক্তি সই হলে জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে।

একইসঙ্গে বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের ব্যবস্থাপনায় (গ্যাভি) কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় আগামীকাল বাংলাদেশ ফাইজারের এক লাখ ছয় হাজার ডোজ ভ্যাকসিন পাবে।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, সংরক্ষণ সুবিধার বিষয়টি বিবেচনা করে ফাইজারের ভ্যাকসিনের বেশিরভাগ ডোজ মূলত রাজধানীতেই দেওয়া হবে।

চীন ইতোমধ্যে উপহার হিসেবে বাংলাদেশকে সিনোফার্মের পাঁচ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দিয়েছে এবং আরও ছয় লাখ ডোজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

এই ভ্যাকসিন মেডিকেল শিক্ষার্থীদের দেওয়া শুরু হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘চীনের ভ্যাকসিনের প্রথম চালান আসার সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দেওয়ার কর্মসূচি শুরু হবে।’

ভারত করোনা ভ্যাকসিন রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় গত ২৬ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ সরকার অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ রেখেছে।

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের তিন কোটি ডোজ কেনার চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। সেই অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ভ্যাকসিন পাওয়া কথা ছিল।

জানুয়ারিতে সেরাম ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিনের প্রথম চালান পাঠায়। কিন্তু, ফেব্রুয়ারিতে পাঠায় ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন। এরপর নিজেদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে ভারত ভ্যাকসিন রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় আর কোনো চালান পাঠানো হয়নি।

Comments

The Daily Star  | English

Cancer patients cut off from vital lifeline

All six radiotherapy machines of the NICRH have been out of order for 19 days, depriving over 200 cancer patients of their scheduled therapy every day.

12h ago