নতুন ভ্যারিয়েন্ট ও স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা, ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

ছবি: সংগৃহীত

মানুষ যেভাবে কোভিড-১৯ বিষয়ক স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করছে, তাতে সামনে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

সারাবিশ্বে উদ্বেগের হয়ে দাঁড়ানো করোনার চারটি ভ্যারিয়েন্ট ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট হিসেবে পরিচিত বি.১.৬১৭ ভ্যারিয়েন্টও রয়েছে। প্রতিবেশী দেশটিকে বিপর্যস্ত অবস্থায় ফেলে এটি এখন বিশ্বের নানা স্থানে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু, এ অবস্থাতেও বাংলাদেশে বিধি-নিষেধ শিথিল করা হয়েছে, সামাজিক দূরত্ব মানতে মানুষের অনীহা দেখা যাচ্ছে। টিকাদান কর্মসূচিও অনিশ্চিতয়তার মধ্যে পড়েছে। ফলে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে।

অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ঈদুল ফিতরের আগে সরকার করোনা সংক্রান্ত বিধি-নিষেধ শিথিল করে দেয়। তবে, মানুষের ঈদযাত্রা থামানোর জন্যে গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়। এরপরও গ্রামের বাড়িতে ঈদ উদযাপন করতে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে লাখো মানুষ রাজধানীসহ বড় শহরগুলো ছেড়ে গেছেন।

এখন পর্যন্ত দেশের ১৬ কোটি মানুষের মাত্র দুই শতাংশ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দুই ডোজ পেয়েছেন। প্রথম ডোজ পেয়েছেন চার শতাংশের কম লোক। ভ্যাকসিন সংকটের কারণে সরকার প্রথম ডোজ দেওয়া স্থগিত রেখেছে। প্রথম ডোজ পাওয়া প্রায় ১৪ লাখ মানুষ এখন দ্বিতীয়টি পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যারা ইতোমধ্যে টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন, তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার ক্ষেত্রে ১৪ লাখের বেশি ডোজের ঘাটতি রয়েছে। কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে টিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি মৃত্যুহার কমায়।

এখন পর্যন্ত মোট ৩৭ লাখ ৮৩ জন করোনার টিকার দুই ডোজ পেয়েছেন। প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৯১২ জন।

টিকা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে ভারত ও নেপালের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি এড়াতে এখন মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই বলে সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান মো. সায়েদুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কয়েক সপ্তাহ পর সংক্রমণ বাড়তে পারে এবং দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আবারও চাপে পড়তে পারে।’

‘এ ধরনের পরিস্থিতির জন্যে আমাদের এখন থেকেই প্রস্তুত থাকতে হবে’, বলেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে বর্তমানে কোভিড রোগীদের জন্য এক হাজার ১৭১টি আইসিইউ এবং ১১ হাজার ৯৯১টি সাধারণ বেড রয়েছে।

সায়েদুর রহমান মনে করেন, ভারতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকারের উচিত প্রতিটি জেলা হাসপাতালে নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং শহরগুলোর সব হাসপাতালে অক্সিজেন জেনারেটরের ব্যবস্থা করা। রোগীদের থাকার ব্যবস্থা করার জন্যে এই সময়ের মধ্যে সরকারের কয়েকটি ফিল্ড হাসপাতালও তৈরি করা উচিত বলে মত দেন তিনি।

বড় শহরগুলোকে দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা এই শহরগুলো থেকে বের হবেন, তাদের ঢোকার অনুমতি দিতে হবে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকার পর।’

অধ্যাপক সায়েদুর বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, বিশেষত মাস্ক পরার বিষয়টি সরকারকে কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে। বড় পরিসরে মাস্ক বিতরণ করা উচিত।’

বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ সতর্ক করেছেন যে, যেহেতু করোনাভাইরাস পরিবর্তিত হতে থাকে এবং এরইমধ্যে বিশ্বের সব উদ্বেগজনক ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে পাওয়া গেছে, সেহেতু এখানে একটি নতুন ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ভ্যারিয়েন্ট আরও মারাত্মক হতে পারে।

যে চারটি ভ্যারিয়েন্টকে ‘বৈশ্বিক উদ্বেগ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তার মধ্যে চতুর্থটি হচ্ছে ভারতে প্রথম শনাক্ত হওয়া বি.১.৬১৭। অন্য তিনটি দ্রুত ছড়ানো ও মারাত্মক ভ্যারিয়েন্ট প্রথম শনাক্ত হয় যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলে।

স্বাস্থ্যবিধি না মেনে মানুষ যেভাবে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় ছুটে যাচ্ছে, তাতে ঈদের পর বাংলাদেশে ভারত ও নেপালের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে সম্প্রতি সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

তিনি বলেন, ‘মানুষ বেপরোয়াভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ঈদের পর ভারত ও নেপালের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বাংলাদেশে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. বে-নজির আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘টিকা সংকট, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা ও ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট দেশে ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে।’

তিনি বলেন, ‘ঈদের ছুটির পর করোনা পজিটিভের সংখ্যা অনেক বেড়ে যেতে পারে। আগামী তিন মাস— জুন, জুলাই ও আগস্ট আমাদের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্য বিভাগের এখনই প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।’

বিএসএমএমইউর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম আশঙ্কা করছেন, সংক্রমণের হার আরও বাড়তে পারে এবং সামনে হাসপাতালগুলোতে রোগীদের প্রচুর ভিড় দেখা যেতে পারে। বাড়তে পারে মৃত্যুও।

তিনি বলেন, ‘আমাদের অক্সিজেনের উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়াতে হবে। কিছু ফিল্ড হাসপাতালও প্রস্তুত করা দরকার। এগুলো করতে না পারলে সর্বনাশা পরিস্থিতি তৈরি হবে।’

ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম

Comments

The Daily Star  | English

Feeling the pulse of local startup ecosystem

From groceries to food and commuting, startups, founded by innovative young people, became popular brands

15h ago