নিজের উপর বিশ্বাসটাই চলে গিয়েছিল তাসকিনের

Taskin Ahmed
ছবি: বিসিবি

অগোছালো জীবন, চোটজর্জর ক্যারিয়ারের পিষ্ট তাসকিন আহমেদের চলার ট্র্যাক বিচ্যুত হয়ে পড়েছিল। দারুণ সম্ভাবনা নিয়ে আসা এই পেসার ডুবে যাচ্ছিলেন হতাশায়। নিজের উপর বিশ্বাসটাই উবে গিয়েছিল তার। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সব সামলে তাসকিনকে পাওয়া গেছে দারুণ ছন্দে, নিউজিল্যান্ড সফরে ভালো করেছিলেন।  শ্রীলঙ্কা সফরে নিজেকে নিংড়ে আলো কেড়েছেন আলাদাভাবে। দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে একান্ত আলাপে তাসকিন জানালেন তার দুঃসময় পেরিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প।

গত বছর লকডাউনের পর থেকেই নতুন এক তাসকিনকে দেখা যাচ্ছে। কীভাবে এমন বদলে যাওয়া? কি কাজ করেছেন?

তাসকিন:  লকডাউন যখন শুরু হয় তখন আমার অবস্থা ভাল ছিল না। ফর্মহীনতা, ইনজুরি মিলিয়ে মানসিক অস্থিরতায় ভুগছিলাম। তখন আমি চিন্তা করেছিলাম ঘুরে দাঁড়াব। কোভিড পরিস্থিতির সময় দেবাশিষ দাকে (বিসিবির চিকিৎসক দেবাশিষ চৌধুরী) বলেছিলাম আমার ফিটনেস লেভেল উন্নতি করতে হবে, না হলে কয়েকদিনের মধ্যে আমার আরও খারাপ অবস্থা হবে। আমি ফিরতে চাই।

ট্রেনিং বন্ধ থাকা অবস্থায়ও দেবু দা আমাকে সময় দেন, ট্রেনিং করা শুরু করান। দেখা যাচ্ছিল অনেকদিনের বিষন্নতা এবং নিজের ভেতরের কিছু সংশয় জন্ম নিয়েছিল যে আমাকে দিয়ে আর হবে কি হবে না। তখন মেন্টালি বোস্টআপ হওয়ার জন্য মেন্টাল ট্রেনার সাবিত আনোয়ার ভাইয়ের সাহায্য নেই। এভাবে দুজনের সঙ্গে শরীর ও মন ঠিক করার জন্য কাজ করেছি।

এক দেড় মাস পর সুজন (খালেদ মাহমুদ) স্যারের সঙ্গে কথা বলি । স্যার আমাকে সার্বিক বিষয়ে অনেক সাহায্য করেছেন।

সংশয় তৈরি হয়েছিল কেন?  

তাসকিন:  সব সময় ভাবতাম যে আমি ফিরব। কিন্তু তাও কোন না কোন কারণে হচ্ছিল না। তখন মনের ভেতরে সন্দেহ আসে যে আসলেই হবে তো?

এই সংশয়ের পেছনে আপনার আগের লাইফস্টাইলের প্রভাব ছিল

তাসকিন: আসলে ধরেন যখন পিছিয়ে গিয়েছিলাম সব মিলিয়ে পিছিয়ে গিয়েছিলাম। কিছু ইনজুরি হওয়ার পেছনে লাইফস্টাইলেরও একটা ভূমিকা ছিল। ওগুলো আল্লাহর রহমতে এখন ঠিক আছে। এখন আমি প্রক্রিয়ার উপর অনেক আস্থা রাখি। মনে করি যে প্রক্রিয়া যদি ঠিক থাকে তাহলে সব কিছুই অবশ্যই ভাল হবে। পারফরম্যান্সটা হয়ত আমার হাতে নেই। কিন্তু সেই পারফরম্যান্সের জন্য সৎভাবে আমার কাজটা যেন আমি করতে পারি। এটাই চিন্তা ছিল।

তারমানে আপনার লাইফস্টাইল কি এখন আগের চেয়ে অনেক গুছানো?

তাসকিন: হ্যাঁ এখন সব কিছু অনেক গুছানো। অনেক কিছু ত্যাগ করেছি। আর প্রক্রিয়া আগেরচেয়ে অনেক ভাল। মাঠের বাইরে পরিবারের অনেক বড় একটা জায়গা। আল্লাহর রহমতে সেই জায়গা থেকেও সব কিছু গুছিয়ে নিতে সহায়তা পেয়েছি, পাচ্ছি। আর খেলার বাইরে পরিবার যেন শান্তিতে থাকে, তারাও যেন আমার থেকে সেরাটা পায় সেই চিন্তাও এসেছে আমার ভেতর।

জাতীয় দলে ওটিস গিবসনও আমাকে এসব ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করেছেন। বোলিং নিয়ে তো বটেই, সব কিছু নিয়েই (সাহস্য করেছেন)।

শ্রীলঙ্কায় লম্বা সময় একটানা ভাল গতি রেখেছেন, গতি টানা ধরে রাখতে  ফিটনেস নাকি টেকনিক্যালও কোন বদলও আছে?

তাসকিন: এটা আসলে ফিটনেস এবং মাইন্ডসেট এই দুইটাই কারণে হয়েছে। কারণ শরীর ও মন দুইটাই যদি টপ লেভেলে না থাকে তাহলে গতি তুলা কঠিন। এখন যদি দেখা যায় মনোবল দিয়ে আমি করে যাচ্ছি কিন্তু আমার শরীর সাপোর্ট করছে না তাহলে তো হবে না। এইগুলাই আরকি। এই দুইটার কারণে আগের থেকে অনেক উন্নতি হচ্ছে, এবং হয়ত আরও হবে।

গিবসন বলছিলেন রানআপ নিয়ে কাজ করেছেন...

তাসকিন:  হ্যাঁ নিউজিল্যান্ডে গিয়ে এটা নিয়ে কাজ করেছি। উনার সঙ্গে অনেক কাজ করা হচ্ছে আসলে। এইগুলা নিয়ে কাজ করছি। উন্নতিও হচ্ছে। ওটিস অনেক সাহায্য করছে। প্রত্যেকটা জাতীয় দলের পেস বোলার ওর সঙ্গে কাজ অনেক উপভোগ করে।

রানআপে কি পরিবর্তন এনেছেন?

তাসকিন:  এসব টেকনিক্যাল ভাই। এটা আসলে অত বিস্তারিত বলার কিছু নাই।  বললে হয়ত সবাই বুঝবেও না। টেকনিক্যাল কিছু অদল-বদল আরকি।

স্যুয়িং করাচ্ছেন দেখলাম

তাসকিন:  সিম পজিশন উন্নতি হওয়াতে স্যুয়িং পাচ্ছি। আরও উন্নতি হবে। আসলে শ্রীলঙ্কা সিরিজে আহামরি কিছু করে ফেলেছি বলে মনে করি না। কিন্তু অনেক ইতিবাচক দিক ছিল। কিন্তু আমার সেরাটা আরও বেশি কিছু, অনেক বেশি কিছু আশা রাখি।

রিভার্স স্যুয়িং নিয়ে কাজ করছেন কিংবা কাজ করার ইচ্ছা আছে?

তাসকিন: এটা নিয়ে কাজ করার, এই জায়গায় উন্নতি করার আমার খুব ইচ্ছা। কাজ করছিও কিছু। ইনশাল্লাহ ফল দেখতে পারবেন।

বারবার গিবসনের কথা বলছেন। আরও তো কোচ ছিলেন তাদের থেকে গিবসন আলাদা কোন জায়গায়

তাসকিন:  আমাদের দেশিয় কোচ বলেন বা বিদেশি কোচ তাদের সবার বেসিক যে জিনিসগুলো বলেন হয়ত সবই এক। কিন্তু একেকজনের কাজ করার ধরণ, বোঝানোর স্টাইল হয়ত একেকরকম। উনার (গিবসনের) স্টাইলে হয়ত অন্যজনের চেয়ে বেশি বুঝতে পারছি, বেশি স্বস্তি বোধ করছি কাজ করে। উনি হয়ত কাজটা আদায় করে নিতে পারছে। রসায়নটা ভালো জমছে।  এটাই আরকি।

টেস্টে মূল বোলার হওয়ার তাগিদ কতটা?

তাসকিন: প্রত্যেকটা ম্যাচ, প্রত্যেকটা সিরিজ একটা সুযোগ। লাল বল, সাদা বল একেক রকমের খেলা। কিন্তু প্রসেস কিন্তু সব খেলার একই। দিনশেষে নিজের সেরাটা দেওয়া। হয়ত সাদা বলের ক্রিকেটে একটু বৈচিত্র্য বা পরিস্থিতির চাহিদা অনুযায়ী বল করতে হয়। লাল বলে সময় বেশি পাওয়া যায় কিন্তু স্কিল আর সর্বোচ্চ মনোবল থাকতে হয়। সেরাটা নিংড়ে দেওয়ার সুযোগ হারাতে চাই না।

কোচ বলছিলেন টানা সব সংস্করণ খেলায় ঝুঁকি হতে পারে। লম্বা সময় খেলতে হলে ম্যানেজ করে খেলা দরকার। আপনার চিন্তা কি? 

তাসকিন: কন্ডিশন, আবহাওয়া টিম সিলেকশন এইগুলা তো আমার নিয়ন্ত্রণে নাই। এইগুলা নিয়ে কি হবে না হবে বাড়তি চিন্তা করলে বর্তমানটাতে প্রভাব পড়বে। আমি বরং বর্তমানের প্রক্রিয়াটা ঠিক রাখতে ভাবছি। যখনই খেলার সুযোগ পাই যাতে সেরাটা দিতে পারি। আমার চিন্তার জায়গা হচ্ছে এটাই।

শ্রীলঙ্কা সফরে তো স্পিনারদের চেয়ে পেসাররা ভাল করেছে। পেসারদের উপর দলের বিশ্বাস বাড়া উচিত বলে মনে করেন?

তাসকিন: একটা সিরিজেই যে সময় হয়ে গেছে (পেসারদের উপর আস্থা রাখার) তা না। আমি হয়ত ভাল করেছি। কিন্তু আমি চাইব আমাদের ঘরোয়াতে উইকেটটা স্পোর্টিং হবে। আর প্রথম শ্রেণীর খেলার সহায়ক কন্ডিশন যদি পাওয়া যায় তাহলে আমরা পেস বোলাররা ভাল করতে পারব। এটা আমার বিশ্বাস আছে।

আপনার বলে তো সবচেয়ে বেশি ক্যাচ মিস হয়। খারাপ লাগে না?

তাসকিন: দেখবেন, আমি আসলে কখনই প্রতিক্রিয়া দেখাই না। এটা তো দলীয় খেলা মোমেন্টাম যাতে নষ্ট না হয় সেটা খেয়াল রাখা লাগে। মাঝে মাঝে খারাপ লাগে।

কখনো মনে হয় না আমার বলেই এত কেন?

তাসকিন: এটা বাইরে আফসোস করতে চাই না কারণ ক্রিকেটে হয়ত ক্যাচ মিস খেলার অংশ। একদিন দেখা যাবে আমার বলে সবচেয়ে বেশি ক্যাচ ধরা হচ্ছে, সবচেয়ে বেশি উইকেট পাচ্ছি।

জাতীয় দলে খেলা ফেলার তো পাঁচ বছর হয়ে গেছে। পেসারদের ক্যারিয়ার যেহেতু অন্যদের মতো লম্বা হয় না। কোন লক্ষ্য কি ঠিক করেছেন ক্যারিয়ার শেষে নিজেকে কোথায় দেখতে চান? 

তাসকিন: আমি নির্দিষ্ট কোন লক্ষ্যের কথা বলতে পারব না কিন্তু আমার লক্ষ্য অনেক বড়। আমি বিশ্বমানের বোলার হতে চাই। বিশ্বের সেরাদের মতন আমিও একজন হতে চাই। আমার স্বপ্ন অনেক বড় আমি বাংলাদেশকে অনেক ম্যাচ জেতাতে চাই। কিন্তু নির্দিষ্ট কিছু নাই যে ২০০ উইকেট নিতে চাই বা ৩০০ উইকেট নিতে চাই।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কার বোলিং দেখে কিছু শেখার চেষ্টা করেন? 

তাসকিন:  নির্দিষ্ট কারো না। টপ যারা আছে সবার বোলিং দেখি। বোঝার চেষ্টা করি কোন পরিস্থিতিতে তারা কি করছে। কারণ আমি ওদের কাতারে যেতে চাই। এটা আমার স্বপ্নের জায়গা। বড় বোলার ত অনেকেই আছে। নির্দিষ্ট কারো নাম বলব না। যার যখন খেলা সামনে পড়ে দেখি।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডেতে লক্ষ্য?

তাসকিন:  ভাল তো করতেই চাই। গত টেস্ট সিরিজে যেমন করেছি তার চেয়ে ভাল করতে চাই। আগের যেসব ভুল করেছি আর যেন তা না হয়।

Comments

The Daily Star  | English

5 killed as train hits auto-rickshaw in Cumilla

The accident took place when the Chattogram-bound Chattala Express train hit a battery-run auto-rickshaw in Kalikapur area

36m ago