বাহরাইনগামী বাংলাদেশিদের জন্য নতুন নির্দেশনা

বাহরাইনগামী বাংলাদেশিদের জন্য দেশ থেকে ৪৮ ঘণ্টা আগে করা পিসিআর পরীক্ষার করোনা নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আগামীকাল ২৭ এপ্রিল থেকে এ নিয়ম কার্যকর হবে। নতুন এ নিয়ম পালনে বাংলাদেশিদের সঙ্গে ভারতীয় ও পাকিস্তানি প্রবাসীরাও আছেন।
দেশটিতে পৌঁছানোর পরই বিমানবন্দরে সব দেশের যাত্রীদের জন্য পিসিআর পরীক্ষা করার নিয়ম বহাল থাকলেও তিন দেশের জন্য বাড়তি এই নিয়ম যুক্ত করা হয়েছে। সরকারি বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, করোনাভাইরাস মোকাবিলার জন্য জাতীয় মেডিকেল টাস্কফোর্স বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের ৬ বছরের বেশি বয়সী যাত্রীদের জন্য নতুন এই পদ্ধতি যুক্ত করেছে।
এ তথ্য নিশ্চিত করে বাংলাদেশ দূতাবাস বাহরাইনগামী প্রবাসী বাংলাদেশিদের সরকার নির্ধারিত কেন্দ্রগুলো থেকে ভ্রমণের ৪৮ ঘণ্টা আগে কিউআর কিউআর কোডসহ মুদ্রিত কোভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ নেওয়ার নতুন নির্দেশনার অনুরোধ জানিয়েছে।
বাহরাইনে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর (শ্রম) শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “অনেক আগেই বাংলাদেশ সরকার বিদেশগামী সবার জন্য করোনা নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলক করেছে, তারপরও বাহরাইন সরকার যখন নতুন নির্দেশনা দিয়েছে আমরা দেশ থেকে বাহরাইনগামী প্রবাসীদের এই বিষয়ে সচেতন করতে জোর দিয়ে বলছি, ভ্রমণের ৪৮ ঘণ্টা আগে পিসিআরভিত্তিক কোভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ নিশ্চিত করেই যেন ফ্লাইটে ওঠেন।"
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশিদের জন্য করোনা নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলকের সঙ্গে ভ্রমণ সম্পর্কিত আগের সব নিয়ম কার্যকর থাকবে। সব প্রবাসী বাংলাদেশিকে আগমনের পরে বাহরাইন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবশ্যই পিসিআর পরীক্ষা করাতে হবে এবং ফলাফল আসা পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। এছাড়া তাদের ৫ম এবং ১০ম দিনে আবার পিসিআর পরীক্ষা করতে হবে। বাহরাইনে আসার আগে “BeAware Bahrain” মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনে নিবন্ধন বা ডাউনলোড করতে হবে।
এদিকে বাহরাইন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, যাত্রীদের পায়ের ছাপের স্টিকার অনুসরণ করে টার্মিনালে সামাজিক দূরত্বের ব্যবস্থাগুলো অবশ্যই মেনে চলতে হবে। যাত্রীদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। যেসব যাত্রী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলো মেনে চলবেন না তাদের বিমানবন্দরে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে।
টার্মিনাল জুড়ে সার্বক্ষণিক স্যানিটাইজ ব্যবস্থার পাশাপাশি আল্ট্রাভায়োলেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমন রোবট বিমানবন্দর জীবাণুমুক্ত করার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে এবং ট্র্যাভেলেটর এবং এসকেলেটরে হ্যান্ড্রেল জীবাণুনাশক সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
বহির্গমন টার্মিনালে স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা স্বার্থে প্রবেশাধিকার শুধুমাত্র যাত্রীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। তবে চলাফেরায় অক্ষম, অসুস্থ ও কম বয়েসী যাত্রীদের ক্ষেত্রে সঙ্গী ঢোকার অনুমতি আছে। টার্মিনালের প্রবেশ পথে এবং বোর্ডিংয়ের আগে এন্ট্রি পয়েন্টগুলোতে তাপমাত্রার স্ক্রিনিং বাধ্যতামূলক এবং যে কেউ বেশি জ্বরে আক্রান্ত থাকলে তাকে আরেকবার চিকিত্সা মূল্যায়ন করা হবে। স্ক্রিনিংয়ে অতিরিক্ত সময় দেওয়ার জন্য, যাত্রীদের তাদের বিমান ছাড়ার সময়ের কমপক্ষে তিন ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে পৌঁছাতে হবে।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী বাহরাইনে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৩৫ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৬২০ জন মারা গেছে এবং ১ লাখ ৫৯ হাজার ১৯৮ জন সুস্থ হয়েছে। এ পর্যন্ত কতজন বাংলাদেশি করোনাক্রান্ত হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। তবে করোনায় ৩৬ জন প্রবাসী বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে দূতাবাস ও বাংলাদেশি কমিউনিটি সূত্র। বাইরাইনে বর্তমানে প্রায় ২ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি আছে। ২০১৮ সাল থেকে দেশটিতে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ আছে।
এদিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধে গত ৩ এপ্রিল থেকে বাহরাইনসহ ১২টি দেশের যাত্রী বাংলাদেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। গত ২৪ এপ্রিল জারি করা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সবশেষ নির্দেশনায় প্রবাসী কর্মীদের কর্মস্থলে পৌঁছাতে বাহরাইন ও কুয়েতের জন্য ২৮ এপ্রিল রাত ১১:৫৯ মিনিট পর্যন্ত বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়।
দেশে গমনেচ্ছু বাহরাইন প্রবাসীদের এ নির্দেশনার আলোকে তাদের ভ্রমণ পরিকল্পনা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস। নির্দেশনা অনুযায়ী বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের মধ্যে যাদের করোনার দুটি টিকা দেওয়া আছে ও তার সার্টিফিকেট রয়েছে এবং করোনা পিসিআর পরীক্ষার নেগেটিভ সার্টিফিকেট থাকবে, তাদের ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইন-এ থাকতে হবে। এক্ষেত্রে, এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ সার্টিফিকেট দেখে নিশ্চিত হওয়ার পর বোর্ডিং পাস ইস্যু করবে।
এ ছাড়া আগত যাত্রীদের মধ্যে যাদের করোনার একটি টিকা নেওয়া আছে ও তার প্রমাণপত্র রয়েছে অথবা একটি টিকাও নেওয়া নেই এবং করোনা-পিসিআর পরীক্ষার 'নেগেটিভ' সার্টিফিকেট আছে, তাদের সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সেন্টারে অথবা যাত্রীর নিজ খরচে বুকিংকৃত হোটেলে তিন দিনের বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। তিন দিন পর করোনা পরীক্ষার স্যাম্পল নেওয়া হবে। পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ এলে তারা বাড়িতে ফিরতে পারবেন। তবে বাড়িতে গিয়েও তাদের ১১ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। আর পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ এলে যাত্রীকে নিজ খরচে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত আইসোলেশন সেন্টারে অবস্থান করতে হবে। এক্ষেত্রে, বোর্ডিং পাস পেতে হলে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে যে, সরকার নির্ধারিত কোয়ারেন্টিন সেন্টারে পর্যাপ্ত সিট খালি আছে। না থাকলে, হোটেল বুকিং এর প্রমাণপত্র দেখিয়ে বোর্ডিংপাস গ্রহণ করতে পারবেন।
এজাজ মাহমুদ: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক
Comments