মৃত্যুপুরী ভারত, সীমান্ত বন্ধ করুন

ভারতে হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সংকট তীব্র। নয়া দিল্লির একটি গুরুদুয়ারার বাইরে একটি সিলিন্ডার দিয়ে কয়েকজন করোনা রোগীকে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়। ছবিটি গতকালের তোলা।- এপি

হাসপাতালে কোনো বেড খালি নেই। অক্সিজেনের তীব্র সংকটে বুক ভরে শ্বাস নিতে না পেরে মারা যাচ্ছে মানুষ। শ্মশ্মানে চিতার আগুন জ্বলছে দিন রাত। লাশ পোড়ানোর ভীড়। সবমিলিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা বলছে করোনায় রোগীর সুনামি চলছে।

বলছি বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতের কথা। দেশটিতে গতকাল শনিবার প্রায় ৩ লাখ ১৫ হাজার নতুন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে। যা নতুন বিশ্ব রেকর্ড। মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে দুনিয়ার কোনও দেশে কখনও এক দিনে এত নতুন রোগী পাওয়া যায়নি। কেবল শনাক্ত নয়, মৃত্যুও কম হয়নি। ওই একই দিনে ২১০৪ জন মারা গেছেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে।

অক্সিজেনের সংকট এতো তীব্র যে ভারত বিমান বাহিনীর বিশেষ বিমানে করে সিঙ্গাপুর থেকে তরল অক্সিজেন নিয়ে এসেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত, রাশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথেও ভারত চেষ্টা চালাচ্ছে সেসব দেশ থেকে জরুরিভিত্তিতে অক্সিজেন ও অন্যান্য ‌ওষুধ সামগ্রী আনার।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর টুইট বার্তায় সারা বিশ্বের কাছে আবেদন করে বলেছেন, ভারত যেহেতু বিভিন্ন দেশকে সাহায্য করেছে, তাদেরও উচিত ভারতকে সাহায্য করা।

অবস্থা এতোটাই শোচনীয় এবং ভয়ঙ্কর যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেছেন, 'একটা ভাইরাস কী করতে পারে সেটাই দেখা যাচ্ছে।’

বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলছে, "সেকেন্ড ওয়েভে এসে ভারতে রোজ যে এই লক্ষ লক্ষ রোগী কোভিডে আক্রান্ত হচ্ছেন, তার আসল কারণটা যে ঠিক কী তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা খুব নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছেন না।"

প্রতিবেদনটি আরও বলছে যে, ভারতে ভাইরাসের একটি ডাবল মিউটেটেড ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে এটা যেমন ঠিক, তেমনি সারা দেশে কোভিড প্রোটোকল মানার ক্ষেত্রেও দেখা গেছে চূড়ান্ত শিথিলতা। কারণ হিসেবে আরও বলছে গত দেড় মাসে হরিদ্বারের কুম্ভমেলায় জড়ো হয়েছেন লাখ লাখ হিন্দু পুণ্যার্থী, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে সব দলের নেতারাই ভাষণ দিয়েছেন বড় বড় জনসভায়।

পাশের দেশ ভারত সরকার যখন সম্পূর্ণ ব্যর্থ করোনার ঢেউ মোকাবিলা করতে তখন বাংলাদেশ সরকারের ঘোষিত চলাচল সীমিতের ফল পেতে শুরু করছে। সংক্রমণের হার কমেছে অনেকখানি। মৃত্যু যদিও এখনো সেইভাবে কমেনি। সরকার এরই মধ্যে তথাকথিত লকডাউন তুলে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা অনুমেয়।

কিন্তু ভারতের এই বিপদে তার নিকটতম প্রতিবেশী হয়ে খুব বেশি নিশ্চিন্তে থাকার কি কোনো সুযোগ আছে?

ভারতের সাথে আকাশ পথে যোগাযোগ বন্ধ থাকলেও স্থল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন মানুষ যাতায়াত করছে। সেটি বন্ধ হয়নি। সরকার গঠিত টেকনিক্যাল কমিটি ইতোমধ্যে অনুরোধ করেছে সরকারের কাছে যেনো ভারতের সাথে সব ধরনের স্থল, নৌ ও আকাশ পথের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

যদিও সরকারের এখনো কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। যদি এইভাবে চলতে থাকে তবে বাংলাদেশে ভারতের ডাবল বা ট্রিপল মিউটেন্ট ঢুকতে বেশি সময় নেবে না। আর যদি ঢুকেই পরে তবে তা কী পরিমান বিধ্বংসী হবে তা কল্পনাও করতে চাই না।

আমাদের মনে আছে মাত্র এক বছর আগে ইতালি থেকে দেশে ফেরা প্রবাসীরা কোয়ারেন্টিনে না থাকায় দেশে কীভাবে করোনা ছড়িয়েছে। ঠিক একইভাবে ব্রিটেন থেকে এসে কীভাবে ব্রিটিশ ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছে। এসব উদাহরণ তো আমাদের সামনেই আছে। তার উপর কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের কথা। সেসব জায়গা থেকে মানুষের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও আমাদের দেশে ঘটেছে। তাই বন্ধ করা ছাড়া কি আর কোনো উপায় আছে? 

আমরা অবশ্যই ভারতের পাশে দাঁড়াবো কিন্তু একই সাথে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ইতোমধ্যে ভারতের সাথে আকাশ ও স্থল পথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদেরও উচিত দ্রুত বন্ধ করা নতুবা ভারত যেমন এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে, সেই আশঙ্কা আছে বাংলাদেশেরও। আবেগ নয় বিজ্ঞানের দেখানো পথে সরকার কার্যকরী ও বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত না নিলে দেশে যদি করোনার নতুন ঢেউ লাগে তা সামলানো কঠিন হয়ে যাবে। তাই শুভস্য শীঘ্রম।

Comments