ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধের আহ্বান বিশেষজ্ঞদের
ভারতে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় এবং সেখানে শনাক্ত করোনার নতুন ধরনটির প্রবেশ ও ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে প্রতিবেশী এই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত মঙ্গলবার কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির এক সভাতেও ভারতে সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত সীমান্ত বন্ধ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ও জাতীয় পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ভারতে সংক্রমণ পরিস্থিতি মারাত্মক হওয়ায় আমরা অবিলম্বে সরকারকে সীমান্ত করে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম।’
‘সীমান্ত যদি পুরোপুরি বন্ধ রাখা সম্ভব নাও হয়, তাহলে অবশ্যই ভারত থেকে আসা ব্যক্তিদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে’, বলেন তিনি।
ভারতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের যে দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে, তার পেছনে কোভিড-১৯’র নতুন ধরন ‘ডাবল মিউট্যান্ট’ কাজ করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যে কারণে দেশটি ইতোমধ্যে ব্রাজিলকে ছাড়িয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমণের দেশে পরিণত হয়েছে। এখন ভারতের আগে রয়েছে কেবল যুক্তরাষ্ট্র।
এখন পর্যন্ত ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক কোটি ৬৬ লাখ ১০ হাজার ৪৮১ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। মারা গেছেন এক লাখ ৮৯ হাজার ৫৪৪ জন।
ভারতে করোনাভাইরাসের নতুন এই ধরনটির নাম বি.১.৬১৭। যা শুরুতে দুটি মিউটেশনসহ শনাক্ত হয়। সেগুলো হচ্ছে ই৪৮৪কিউ ও এল৪৫২আর। গত বছরের শেষের দিকে ভারতের একজন বিজ্ঞানী নতুন এই ধরনটির কথা জানান। যা সম্প্রতি বিস্তারিত আকারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) কাছে উপস্থাপন করা হয়।
বিবর্তনমূলক জীববিজ্ঞানের অংশ হিসেবে ভাইরাস সবসময় পরিবর্তিত হতে থাকে। কিছু মিউটেশন ভাইরাসকে দুর্বল করে দেয়। আবার কিছু মিউটেশন এটাকে শক্তিশালী করে তোলে। যা অপেক্ষাকৃত দ্রুত ছড়ায় ও সংক্রমণ বাড়ায়।
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত মার্চের শেষের দিকে এই ‘ডাবল মিউট্যান্ট’র অস্তিত্বের বিষয়টি স্বীকার করে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন বলছে, আজ টানা তৃতীয় দিনের মতো ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তের সংখ্যা ছিল বিশ্বে সর্বোচ্চ। এদিন শনাক্ত হয় তিন লাখ ৪৬ হাজার ৭৮৬ জন।
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও দুই হাজার ৬২৪ জন। এটিই এখন পর্যন্ত দেশটিতে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। দেশটিতে বর্তমানে অক্সিজেন সংকট চলছে।
গত ১৬ এপ্রিল ভারত সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ডাবল মিউটেশনের এই ধরনটি আরও কয়েকটি দেশে যেমন: অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড, নামিবিয়া, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যেও পাওয়া গেছে। কিন্তু, এই ধরনটি দ্রুত হারে ছড়ানোর বিষয়টি এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
সীমান্তে বিধি-নিষেধ আরোপের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও একই ধরনের পরামর্শ দিয়েছেন।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, ‘আর কোনো বিপর্যয় এড়াতে এখন ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ রাখার উচিত। এ বিষয়ে আমাদের মতামত আমরা যথাযথ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। যদিও সরকারের উপরের মহল থেকেই এই সিদ্ধান্ত আসবে।’
অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, গতকাল বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে ৬১০ জন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
যদি এর মধ্যেই বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের নতুন এই ধরনটি পাওয়া যায়, তাহলে কী হবে, জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘এটা অসম্ভব নয়। কারণ প্রতিদিন প্রচুর মানুষ স্বাভাবিকভাবেই সীমান্ত অতিক্রম করছে।’
প্রখ্যাত এই রোগতত্ত্ববিদের মতে, সম্প্রতি সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির পেছনে করোনাভাইরাসের কোন ধরনটি আছে, তা দেখার জন্য বাংলাদেশের এখন জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের ওপর জোর দেওয়া উচিত।
কোভিড-১৯ সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির আরেক সদস্য, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলানও বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের নতুন এই ধরনটির প্রবেশ ঠেকাতে সরকারের কঠোর উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন। তিনি আরও বলেন, ‘গত মঙ্গলবার পরামর্শক কমিটির সভায় আর কোন কোন জায়গা থেকে টিকা পাওয়া যেতে পারে, সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:
চ্যালেঞ্জের মুখে সরকার: ভ্যাকসিন সংকটের মধ্যেও চলবে প্রথম ধাপের টিকাদান
বাংলাদেশকে আড়াই কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দিতে চায় রাশিয়া
টিকার বিকল্প উৎস সন্ধানে বাংলাদেশ
বাংলাদেশকে ৬০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দিতে চায় চীনের সিনোফার্ম
ভারত সরকারের অনুমতি না পাওয়ায় বাংলাদেশে টিকা পাঠাতে পারছে না সেরাম
অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন পাওয়ায় অনিশ্চয়তা: অন্য উৎস খুঁজছে সরকার
Comments