দেশে করোনার সংক্রমণ আবার বাড়ছে, স্বাস্থ্যবিধি মানার আহ্বান বিশেষজ্ঞদের

করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকলেও মাস্ক ছাড়াই চলাচল করছেন অনেকে। ছবিটি বুধবার রাজধানীর ফার্মগেট এলাকা থেকে তুলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের আলোকচিত্রী প্রবীর দাশ।

গত এক সপ্তাহ ধরে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবারও বাড়ছে। যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

গত দুই মাসে সর্বোচ্চ এক হাজার ৫১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে গতকাল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে দেশে দৈনিক শনাক্তের হার দুই দশমিক ২৬ থেকে তিন দশমিক ৩০ শতাংশের মধ্যে থাকলেও চলতি মাসে তা বেড়ে পাঁচ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

দেশব্যাপী টিকাদান কর্মসূচি চলছে এবং চলতি মাসের শেষের দিকে খোলা হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যেই হঠাৎ করোনার সংক্রমণ ও মৃ্ত্যু বাড়ায় উদ্বেগ জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি মানতে মানুষের অনীহার কারণেই সংক্রমণ বাড়ছে।

তারা বলেন, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অনেকের জড়ো হওয়া, পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে মানুষের ভিড় এবং প্রতিদিনের কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে মহামারি চলে গেছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বুধবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মানুষজন সামাজিক দূরত্ব মানছে না এবং মাস্ক পরছে না। সে কারণেই এখন সংক্রমণের হার বেশি। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।’

‘আমরা পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। আর লোকজনের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, তারা পেছনে ফিরে যেতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপে কী ঘটেছে তা আমরা দেখতে চাই না। সামাজিক ও রাজনৈতিক সমাবেশ সীমিত করতে আমরা ইতোমধ্যে দেশব্যাপী ডিসিদের নির্দেশনা পাঠিয়েছি।’

শিগগিরই স্বাস্থ্যবিধি মানার আহ্বান জানিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রচার করা হবে বলেও জানান তিনি।

২০২০ সালের মার্চে দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হওয়ার পর দৈনিক শনাক্তের হার কিছুদিন কম ছিল। গত বছরের মে’র মধ্যবর্তী সময় থেকে শনাক্তের হার বেড়ে ২০ শতাংশেরও বেশি হয়। যা গত আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এরপর থেকে দৈনিক শনাক্তের হার কমতে থাকে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি দেশে সর্বনিম্ন করোনার হার ছিল দুই দশমিক ২৬ শতাংশ। কিন্তু, মার্চ থেকে আবার তা বাড়তে থাকে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ৯ মার্চ দেশে দৈনিক শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।

স্বাস্থ্য অধিপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশিদ আলম বলেন, ‘মানুষের অসতর্কতা সত্যিই হতাশাব্যঞ্জক। ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেওয়ার পর অনেকেই ভাবছেন তারা এখন নিরাপদ। কিন্তু, বিষয়টি তো তেমন নয়।’

‘যদি মানুষ বিপদ সম্পর্কে সচেতন না থাকে, তাহলে আমাদের কী করার আছে?’, বলেন তিনি।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশব্যাপী টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৪০ লাখেরও বেশি মানুষকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে জানুয়ারিতে পাওয়া যুক্তরাজ্যের ধরনের কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্টটাই কারণ কি না, তা বলা মুশকিল।’

‘বিদেশ থেকে আসা লোকদের কঠোরভাবে কোয়ারেন্টিন পালন করতে হবে। অন্যথায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে’, বলেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘বিদেশ থেকে যারা আসবেন, বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে থেকে যারা আসবেন, তাদের কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশন অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে নির্দিষ্ট কিছু দেশের সঙ্গে ফ্লাইট চলাচলও বন্ধ করতে হবে।’

‘কোনো দেশে শীতে বা গ্রীষ্মে ভাইরাসটি দ্রুত ছড়ায় কি না, তার কোনো প্রমাণ নেই’, বলেন তিনি।

‘শীতকালে করোনার সংক্রমণ বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল। কিন্তু, ভাগ্যক্রমে তা হয়নি। গ্রীষ্মের শুরুতেই সংক্রমণ বাড়তে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু, তা আরও বাড়বে কি না, সেটি নির্ভর করছে আমরা স্বাস্থ্যবিধি কত কঠোরভাবে মানব, তার ওপর।’

সংক্রমণ বাড়ার উৎস ও কারণ জানার ওপর গুরুত্বারোপ করে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘আমাদেরকে বের করতে হবে যে, সংক্রমণ কি কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় বাড়ছে নাকি পুরো দেশে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই আমাদেরকে কারণ খুঁজে বের করতে হবে। আমরা যদি আত্মসন্তষ্ট থাকি, তাহলে পরিস্থিতির বিপর্যয় ঘটতে পারে।’

আরও পড়ুন:

যুক্তরাজ্যের স্ট্রেইন দেশে শনাক্ত: ‘দেরিতে জানিয়ে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারছি’

শনাক্তের হার ঊর্ধ্বমুখী: সতর্কতার আহ্বান বিশেষজ্ঞদের

করোনার নতুন স্ট্রেইন: করছি কী, করণীয় কী

‘ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে, মানুষের কাছে যেতে হবে’

Comments

The Daily Star  | English

32 killed in 48 hours in Gaza

The health ministry in Hamas-run Gaza on Saturday said that 32 people were killed in the Palestinian territory over the past 48 hours, taking the overall death toll to 46,537

54m ago