সাড়ে চার বছরে প্রবাস থেকে এসেছে ৪৭৩ নারীর মরদেহ
শনিবার ভোর চারটা। ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কিশোরী মেয়ের মরদেহ নিয়ে কাঁদছেন স্বজনরা। ১৩ বছরের ওই কিশোরীর মরদেহ সৌদি এয়ারলাইন্সে এসেছে সৌদি আরব থেকে। ১৩ বছরের এই কিশোরীকে ২৫ বছর বয়স দেখিয়ে গতবছর সৌদি আরবে পাঠানো হয়েছিল। কাগজপত্রে আত্মহত্যা বলা হলেও তাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে বলে দাবি করছে পরিবার। গতকাল দুপুরে ঢাকার খিলগাঁওয়ে কবরস্থানে নদীকে দাফনের সময় পরিবারের আহাজারি তাই কিছুতেই থামছিল না।
নদীর মা বিউটি আক্তার কাঁদতে কাঁদতে বারবার বলছিলেন, ‘মেয়েটা সৌদি আরবে যাওয়ার পর থেকেই সমস্যায় পড়ে। এজেন্সিকে বারবার বলা হলেও ওরা ব্যবস্থা নেয়নি। এখন ওরা আমার বাচ্চা মেয়েটাকে মেরে ফেলেছে। কাগজে লেখা আত্মহত্যা, কিন্তু আমি দেখেছি আমার মেয়ের গলায় কোনও দাগ নেই। অথচ সারা শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন। আমি কার কাছে বিচার চাইবো?’
নদীর মায়ের মতোই কেঁদেছিলেন নাছিমা বেগম। চলতি বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর সৌদি আরব থেকে ফেরত আসে আরেক কিশোরী কুলসুমের মরদেহ। বয়স ১৪ হলেও তার বয়সও ২৫ দেখানো হয়েছিল। সৌদি আরবে তাকে পিটিয়ে হাত পা ভেঙে দেওয়ার পর হাসপাতালে মারা যায় কুলসুম।
অবশ্য নদী বা কুলসুমই শেষ নয়। চলতি বছর করোনার কারণে বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় মরদেহ পরিবহন করে দেশে আসা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এরপরও কিছু মরদেহ আসছে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তথ্য অনুযায়ী, এই বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর এই সময়ের মধ্যে বিদেশ থেকে অন্তত ৬৩ জন নারীর মরদেহ দেশে ফেরত এসেছে। এর মধ্যে সৌদি আরব থেকেই এসেছে ২২ জনের মরদেহ। এ ছাড়া, লেবানন থেকে ১৪, জর্ডান থেকে ১১, ওমান থেকে সাত, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে চার জনের মরদেহ এসেছে।
২০১৬ থেকে এ বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ধরলে অন্তত ৪৭৩ নারীর মরদেহ দেশে ফিরেছে। এর মধ্যে ১৭৫ জনের মরদেহ এসেছে সৌদি আরব থেকে। যার মধ্যে ৫১ জনই আত্মহত্যা করেছেন। আর অন্যান্য দেশ ধরলে আত্মহত্যার সংখ্যা অন্তত ৮১ জন।
শোকের সাগর কিশোরী নদীর পরিবার
পরিবারের ভাষ্য ও জন্ম সনদ অনুযায়ী নদী আক্তারের জন্ম ২০০৭ সালের ১ ডিসেম্বর। সেই হিসেবে তার বয়স এখনো ১৩ হয়নি। অথচ পাসপোর্টে অনুযায়ী তার বয়স এখন ২৭। পাসপোর্টে জন্ম তারিখ দেখানো হয়েছে, ১৯৯৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর। বাড়ি কুমিল্লা হলেও তার পাসপোর্ট করা হয় ময়মনসিংহ থেকে।
নদীর মা বিউটি ও বাবা দুলাল শেখের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছরের সৌদি যাওয়ার পর থেকেই নিয়োগকর্তা নদীকে নির্যাতন করতে শুরু করে। এমনকি কোনও বেতনও দেওয়া হয়নি। একাধিকবার বিষয়গুলো রিক্রুটিং এজেন্সি ঢাকা এক্সপোর্টের (আর এল-২৬৫) মালিক এ রহমান লালনকে জানান নদীর বাবা দুলাল।
তিনি অভিযোগ করেন, সমস্যা সমাধানের বদলে তাকে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হয়। আগস্টের শেষে এসে তারা জানতে পারেন নিপীড়ন সইতে না পেরে নদী আত্মহত্যা করেছেন।
সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ২৬ আগস্ট ঢাকায় যে চিঠি পাঠানো হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, ১৪ আগস্ট মদিনায় নদী আত্মহত্যা করেছেন বলে তাদের কাছে খবর আসে। দূতাবাস থেকে সৌদি রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স রাওদাহ আল উহুদের মালিক মানসুর আল মাগামিসীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, নদী আক্তার গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। সৌদি আরবেই এই মরদেহ যেন দাফন করা হয় সেজন্য পরিবারের মতামত চাওয়া হয়।
তবে, নদীর পরিবার স্থানীয়ভাবে দাফনের জন্য মত দেননি। এরপর ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে সৌদি আরবে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, মেয়েটির পরিবার স্থানীয়ভাবে মরদেহ দাফনের অনুমতি দেননি। তারা চান মরদেহ যেন দেশে আসে।
নদীর মৃত্যুর ঘটনায় আদালতে একটি মামলা করেছে পরিবার। ওই ঘটনার পর গত ১৮ অক্টোবর রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক এ রহমান লালনসহ তিন জনকে গ্রেপ্তার করে কলাবাগান থানা পুলিশ। কিন্তু, কথা হলো ১৩ বছরের একজন কিশোরী কীভাবে বিদেশে যায়?
এর আগে গত ৯ আগস্ট সৌদি আরবের কিং ফয়সাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় ১৪ বছরের কিশোরী কুলসুমের। বাবা-মায়ের দাবি, কুলসুম যে বাড়িতে কাজ করতো সেই বাড়ির নিয়োগকর্তা ও তার ছেলে মেরে দুই হাত-পা ও কোমর ভেঙে দিয়েছে। একটি চোখ নষ্ট করে দিয়েছে। তারপর ওই অবস্থায় রাস্তায় ফেলে গেছে। সৌদি পুলিশ সেখান থেকে কুলসুমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম বলেন, ‘১৩-১৪ বছরেরে একটি মেয়ে কী করে বিদেশে যাচ্ছে, কীভাবে তার পাসপোর্ট হচ্ছে, এজেন্সি, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কী করছে সেগুলো খতিয়ে দেখা দরকার। অন্তত একটা ঘটনা হলেও পুরোটা তদন্ত করা উচিত যে কার কী দায় ছিল।’
নয় মাসে ফিরেছে ৬৩ নারীর মরদেহ
করোনার এই সময়ে যেখানে বিমান চলাচল বন্ধ এবং অনেক মরদেহ স্থানীয়ভাবে দাফন হচ্ছে সেখানে গত নয় মাসে ফিরেছে ৬৩ নারীর মরদেহ। এর মধ্যে অন্তত তিনজনকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। পাঁচজন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। চারজন স্ট্রোক করে এবং দুর্ঘটনায় মারা গেছে তিনজন। এ ছাড়া, ১৪ জন আত্মহত্যা করেছেন যার মধ্যে আটজনই আত্মহত্যা করেছেন সৌদি আরবে।
এরা হলেন- নাছিমা বেগম (২৬), আফিয়া বেগম (৩৮), তাসলিমা বেগম (২৭), বরগুনার খাদিজা (৩৯), নরসিংদীর সাফিয়া (৩১), মৌলভীবাজারের হেলেনা (২৯), মানিকগঞ্জের মমতাজ (৩৪), চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাসরিন (৩১) ও নারায়ণগঞ্জের রেখা (৪০)। প্রতিটি মৃত্যুই পরিবারের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ।
বেশিরভাগই মারা যাচ্ছেন সৌদি আরবে
২০১৬ থেকে এ বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪৭৩ নারীর মরদেহ দেশে ফিরেছে। এর মধ্যে ৬৩ জন মারা গেছে চলতি বছর। গতবছর পর্যন্ত মৃত ৪১০ জনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি মারা গেছে সৌদি আরবে, ১৫৩ জন। এই বছরের ২২ জন ধরলে এই সংখ্যা ১৭৫ জন।
মৃতদের মধ্যে জর্ডান থেকে ৭৫ জন, লেবানন থেকে ৬৬ জন, ওমান থেকে ৪৫ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ২৭ জন এবং কুয়েতে ২০ জন মারা গেছেন। অন্যান্য দেশ থেকে এসেছে ৬০ নারীর মরদেহ।
নিহতদের মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অন্তত ৮১ জনই আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে, ২০১৬ সালে তিন জন, ২০১৭ সালে ১২ জন, ২০১৮ সালে ২৩ জন, ২০১৯ সালে ২৯ জন এবং এ বছর ১৪ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে শুধু শুধু সৌদি আরবেই আত্মহত্যা করেছেন ৫১ জন।
আত্মহত্যা ছাড়াও গত চার বছরে ৬৯ নারী দুর্ঘটনায় মারা গেছেন বলে নথিতে বলে হয়েছে। যার মধ্যে সৌদি আরবেই মারা গেছেন ২৯ জন। এছাড়া স্ট্রোক করে অনেকেই মারা যান।
মৃত্যুগুলো প্রশ্নবিদ্ধ
বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আট লাখেরও বেশি নারী বিদেশে গেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক অর্থাৎ তিন লাখই গেছেন সৌদি আরবে। মূল সংকটটা সেখানেই।
পরিবারগুলো বলছে, প্রতিটি মৃত্যুতেই কোনও না কোনও কিন্তু আছে। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন বেগম। সৌদি থেকে কীভাবে মিশরে গিয়ে তিনি মারা গেলেন সেই রহস্যের সমাধান হয়নি।
মিশরের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে জানানো হয়, ২৯ মে মিশরে ৫ তলা থেকে পড়ে মোসাম্মৎ বেগম নামে এক নারী গৃহকর্মী মৃত্যুবরণ করেন। বেগমের স্বামী আব্দুল আজিজ বলেন, বেশ কিছুদিন আগে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জানতে পারেন, বেগম নামে এক নারী মিশরে মারা গেছেন। কিন্তু, তার স্ত্রী সৌদি আরবে থাকায় তিনি বিষয়টিতে গুরুত্ব দেননি। এরপর মিশর থেকে যখন তাকে ফোন করা হলো, তখন বুঝতে পারেন তার স্ত্রী মিশরে মারা গেছেন।
২০১৭ সালের জুলাই মাসে সৌদি আরবে যান আবিরুন বেগম। পরে গৃহকর্তার বাসায় মারা যান তিনি। মৃত্যুর ৫১ দিন পর তার পরিবার এ খবর জানতে পারে। সৌদি আরব থেকে ফিরিয়ে আনা আবিরুনের মরদেহের সনদে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করা হয় হত্যা। আবিরুনের পরিবারের সদস্যরা জানান, তার নিয়োগকর্তা আবিরুনের ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে তাকে মেরে ফেলেছে। এমনকি দুই বছরে কোনও বেতনও তাকে দেওয়া হয়নি। কিন্তু, এই ঘটনার কোনও বিচার হয়নি।
একইভাবে সৌদি আরবে নির্যাতনে নিহত নাজমার মরদেহ দেশে আসে মৃত্যুর ৫৩ দিন পরে। গত বছরের ২৪ অক্টোবর তার মরদেহ দেশে আসে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে স্থানীয় এক দালালের মাধ্যমে সৌদি আরবে যান নাজমা। হাসপাতালে ক্লিনারের চাকরি দেওয়ার কথা বলে তাকে পাঠানো হলেও তাকে কাজ দেওয়া হয় বাসাবাড়িতে। সেখানে তাকে যৌন নির্যাতনসহ নানাভাবে নির্যাতন করা হতো। অমানসিক নির্যাতনে নাজমার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছেন তার স্বজনেরা।
সৌদি আরব থেকে ফেরা ফরিদপুরের সুফিয়া বেগম বলেন, ‘অনেক সময় নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে অনেকে আত্মহত্যা করেন। অনেকে নিজেকে আহত করেন। নির্যাতন সহ্য না করতে পেরে আমি নিজের গলায় নিজে ছুরি দিয়ে আঘাত করেছিলাম। অনেকেই এমন করে। বাধ্য হয়েই তারা আত্মহত্যা করে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিকাল সাইকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও নাসিরউল্লাহ সাইকোথেরাপি ইউনিটের পরিচালক কামালউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী দ্যা ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘একজন মানুষ কখনোই স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আত্মহত্যা করেন না। সৌদি আরবের যে ঘটনাগুলো আমরা দেখি এর কারণ ওই নারীরা সেখানে হয়তো নিপীড়ন বা এমন বিরূপ পরিস্থিতির শিকার হন যে আত্মহত্যাকেই তিনি বাঁচার উপায় মনে করেন। আসলে মানুষ আর কোনও উপায় সামনে না পেলেই এটা করে।’
শুধু যে মরদেহ হয়েই ফেরে তাই নয়, অনেকেই ফেরেন নির্যাতনের চিহ্ন নিয়ে। পরে তারা পরিবার ও সমাজে সবসময় হেয় প্রতিপন্ন হন এবং অনেক ক্ষেত্রেই পরিবার তাদেরকে গ্রহণ করতে চায় না। আবার অনেকেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেরেন। সর্বশেষ ১০ অক্টোবর সৌদি আরব থেকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে দেশে ফেরেন খুলনার রুনু বেগম। বাড়ি খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার মালকিদাড়া গ্রামে।
সৌদি আরবের রিয়াদ থেকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে দেশে ফিরে দুপুর থেকে বিমানবন্দরে নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় ঘোরাঘুরি করতে থাকলে এপিবিএন অফিস থেকে তাকে একটি বেসরকারি সংস্থার কাছে পাঠানো হয়।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার এখন সৌদি আরব। ২০১৫ সাল থেকে দেশটিতে বিপুল পরিমাণ নারী কর্মী যাওয়া শুরু করে। ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে সৌদি আরবের শ্রম মন্ত্রণালয়ে উপমন্ত্রী আহমেদ আল ফাহাইদের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসে এবং বাংলাদেশ নারী কর্মী পাঠানোর চুক্তি স্বাক্ষর করে।
এরপর ২০১৫ সালে গেলেন ২১ হাজার নারী শ্রমিক। ২০১৬ সালে গেলেন ৬৮ হাজার। ২০১৭ সালে ৮৩ হাজার, ২০১৮ সালে ৭৩ হাজার, ২০১৯ সালে ৬২ হাজার এবং এ বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চে ১০ হাজার নারীকর্মী সৌদি আরব গেছেন। আর গত চার বছরে অন্তত দশ হাজার নারী সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে এসেছেন।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে গত বছরের আগস্টে একটি প্রতিবেদন পাঠায় মন্ত্রণালয়। তাতে সৌদি আরব ফেরত ১১০ নারী গৃহকর্মীর তথ্য দিয়ে বলা হয়, ৩৫ শতাংশ নারী শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। ৪৪ শতাংশ নারীকে নিয়মিত বেতন দেওয়া হতো না।
দেশে ফিরে আসা নারী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে মন্ত্রণালয় তাদের ফিরে আসার ১১টি কারণ চিহ্নিত করে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশে ফিরে আসা নারীদের মধ্যে ৩৮ জন শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ৪৮ জন নিয়মিত বেতন-ভাতা পেতেন না। এ ছাড়া, অন্তত ২৩ জনকে পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া হতো না।
গত বছর সৌদি আরবের সঙ্গে যৌথ কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশ নিপীড়নের বিষয়টা তুলে ধরে। সৌদি আরবও আশ্বাস দেয় বরাবরের মতো।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক মো. শামছুল আলম জানান, নারী কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গত বছরের ডিসেম্বরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও বিএমইটি থেকে ১২ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
পরিস্থিতির কতোটা উন্নতি হয়েছে জানতে চাইলে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘সৌদি আরবে নারী নিপীড়ন বা মৃত্যুর ঘটনায় অধিকাংশ সময় এজেন্সিগুলোর দিকে আঙুল তোলা হয়। লাইসেন্স বাতিল-গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু, যারা নিপীড়ন করে সেই সৌদিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারলে সংকটের সমাধান হবে না।’
শরিফুল হাসান, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক
Comments