রাতে সৌদির ফ্লাইট, নাটকীয় প্রতীক্ষা করোনা সনদের
আজ রাত সাড়ে ১২টায় সৌদি আরবে ফ্লাইট মোহাম্মদ আরিফ ও তার বাবা মোহাম্মদ শহিদুল্লাহর। কিন্তু এখনো তারা করোনার সনদ পাননি। অথচ ফ্লাইট ছাড়ার তিন থেকে চার ঘণ্টা আগে তাদের বিমানবন্দরে যেতে হবে। তারা ফকিরাপুলের একটি হোটেলে প্রতিটি মিনিট প্রতীক্ষার প্রহর গুনছেন। কারণ কোভিড-১৯ পরীক্ষার সনদ না পেলে তো তারা সৌদি আরবে যেতে পারবেন না।
শুধু আরিফ বা তার বাবা মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ নয়, সৌদি এয়ারলাইনসের এসভি-৮০২ ফ্লাইটে আজ রাতে ২৬০ জন বাংলাদেশির সৌদি আরবে যাওয়ার কথা। তারা সবাই কোভিড-১৯ সনদের অপেক্ষায় আছেন। এ যেন ভয়াবহ এক দুশ্চিন্তা!
নোয়াখালীর ছেলে আরিফ জানান, তিনি ও তার বাবা শহিদুল্লাহ চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি তিন মাসের ছুটিতে দেশে আসেন। এরপরই আটকা পড়েন করোনায়। কবে যেতে পারেন সেই প্রতীক্ষা করতে করতে কয়েকদিন আগে জানতে পারেন, সৌদি আরবে এখন যাওয়া যাবে। এরপর শুরু হয় টিকেটের জন্য যুদ্ধ।
মোহাম্মদ আরিফ জানান, গত শনিবার তারা ঢাকায় আসেন। এরপর কয়েকদিন টিকেটের লাইনে দাঁড়ান। অবশেষে বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় টিকিট পান। কিন্তু সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কোভিড-১৯ পরীক্ষার সনদ থাকতে হবে। কাজেই টিকেট পেয়েই ছুটেন মহাখালী। সেখানে প্রবাসীদের করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে হয়। কিন্তু সেখানে তাদের বলা হয়, সময় শেষ। শুক্রবার সকালে আসতে হবে।
আরিফ জানান, শুক্রবার ভোরেই তারা করোনা পরীক্ষার জন্য লাইনে দাঁড়ান। এরপর তারা নমুনা দেন। কিন্তু বিকাল ৫টা পর্যন্ত কোনো সনদ বা মোবাইলে মেসেজ পাননি। ফলে চরম দুশ্চিন্তায় আছেন তারা। তাদের বলা হয়েছে, ফ্লাইট ছাড়ার তিন থেকে চার ঘণ্টা আগেই বিমানবন্দরে থাকতে হবে। কিন্তু এখনো সনদ পাননি।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর অনুমতি দেয় সৌদি সরকার। এরপর সৌদি এয়ারলাইনসকে সপ্তাহে দুটি ফ্লাইট চালানোর অনুমতি দেয় বাংলাদেশ। এই টিকিট পাওয়া নিয়ে শুরু হয় যুদ্ধ।
প্রবাসীরা বলছেন, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে না যেতে পারলে তাদের চাকরি থাকবে না, ভিসায়ও জটিলতা হবে। ফলে গত সপ্তাহ পুরোটাই রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সোনারগাঁও হোটেল সংলগ্ন সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইনসের টিকিট বুকিং অফিসের সামনে প্রবাসীরা বিক্ষোভ করেন।
সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের অনুরোধের প্রেক্ষিতে আটকে পড়া প্রবাসীদের কাজের অনুমতিপত্র বা আকামার মেয়াদ আরও ২৪ দিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সৌদি আরব। তাতে বেশ স্বস্তি এলেও টিকিট ও ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে করোনা সনদ নিয়ে দুশ্চিন্তার এখনো শেষ নেই।
প্রবাসীরা বলছেন, সাত থেকে আটমাস আগে তারা দেশে এসে আটকা পড়েছিলেন। তারা জানান, যথাসময়ে যদি সমন্বিতভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হতো, তাহলে তাদের টিকিট নিয়ে এতো দুশ্চিন্তা করতে হতো না।
রাজধানীর মহাখালীর ডিএনসিসি মার্কেটে করোনাভাইরাস নমুনা পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা জানান, ২৬, ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বরের সৌদি এয়ারলাইনস ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের টিকিট যারা হাতে পেয়েছেন, তারা সবাই করোনা পরীক্ষার জন্য আসছেন। শুক্রবার সকাল থেকেই প্রচুর ভিড়। এর মধ্যে বিদ্যুৎ না থাকায় গরমে সবাইকে কষ্ট পেতে হয়। তারপরেও পাসপোর্ট, ভিসা ও টিকিট দেখিয়ে সরবরাহকৃত ফরম পূরণ করে সবাই নমুনা দিয়েছেন।
শুক্রবার রাতে যাদের ফ্লাইট তারা কতক্ষণ নাগাদ সনদ পাবেন? জানতে চাইলে মহাখালীর ডিএনসিসি মার্কেটে করোনাভাইরাস নমুনা পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক সমীর কান্তি সরকার বিকাল ৫টায় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। রাতে সাড়ে ১২টায় ফ্লাইট। রাত ৮টার মধ্যে আমরা এখান থেকে সনদ দিতে পারব। প্রবাসীরা রাত ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে বিমানবন্দরে গেলেই চলবে। তারপরেও যদি কেউ সনদ ছাড়া যান, বিমানবন্দরে আমাদের স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে তারা যেন সনদ পেতে পারেন, আমরা সেই বিকল্প ব্যবস্থাও ভাবছি। দেখা যাক। আমরা খুব করে চাইছি যেন কারও ফ্লাইট মিস না হয়।’
শরিফুল হাসান, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক
Comments