‘হাজার বছর ধরে’ বেঁচে থাকবেন জহির রায়হান

Zahir Raihan
জহির রায়হান। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে বহুল পঠিত উপন্যাসের নাম ‘হাজার বছর ধরে’। গ্রামীণ মানুষের জীবনের কথা উঠে এসেছে এই উপাখ্যানে। বইটি প্রকাশের এত বছর পরও পাঠকের কাছে একটুও আবেদন কমেনি বরং বেড়েছে।

‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাসের লেখক জহির রায়হান এভাবেই পাঠক ও মানুষের অসম্ভব ভালোবাসা নিয়ে হাজার বছর ধরে বেঁচে থাকবেন।

আজ বুধবার (১৯ আগস্ট) কালজয়ী এই লেখক ও চলচ্চিত্র পরিচালকের জন্মদিন। ১৯৩৫ সালের আজকের দিনে জহির রায়হান জন্মগ্রহণ করেছিলেন ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের মজুপুর গ্রামে।

লেখক হিসেবে জহির রায়হানের যেমন রয়েছে বিপুল পাঠকপ্রিয়তা, তেমনি একজন সফল চলচ্চিত্রকার হিসেবেও তার রয়েছে অনেক অনেক দর্শকপ্রিয়তা।

সাহিত্য ও চলচ্চিত্র দুই দিকে সফল জহির রায়হান। আবার ছোটগল্পকার হিসেবেও সফল। তার লেখা ছোটগল্প ‘সময়ের প্রয়োজনে’ অনেক বছর আগে পাঠ্য হিসেবে ছিল। তার লেখা অন্য ছোটগল্পগুলোও পাঠকের মন ছুঁয়ে গেছে।

তার ‘আরেক ফাল্গুন’ ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে লেখা এক অসাধারণ উপন্যাস। এই উপন্যাসের শেষ লাইন ‘আসছে ফাল্গুনে আমরা কিন্তু দ্বিগুণ হব’ এ দেশের মানুষকে জাগিয়ে তুলেছে।

এ ছাড়াও, ভাষা আন্দোলন নিয়ে তিনি আরও একটি উপন্যাস লিখেছেন, বইটির নাম ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’।

‘বরফ গলা নদী’ তার আরেকটি অসাধারণ উপন্যাস। এ দেশের সাধারণ মানুষের জীবনের কথা উঠে এসেছে এ উপন্যাসে।

আবার ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’ উপন্যাসে জীবন ও ভালোবাসা মিশে আছে বিনিসুতোর মালার মতো।

জহির রায়হান খুব বেশিদিন বাঁচেননি। তবে নতুন নতুন সৃষ্টির জন্য তিনি জন্মেছিলেন। সাহিত্য, চলচ্চিত্র, সাংবাদিকতা দিয়ে জহির রায়হান তার অল্প সময়ের জীবনকে করে গেছেন তাৎপর্যমণ্ডিত।

মৃত্যুর এতকাল কেটে গেলেও সাহিত্যর জন্য তিনি যা দিয়ে গেছেন, তাতে তার প্রতি এক বিন্দু ভালোবাসাও কমেনি। দিন দিন তার গল্প-উপন্যাসের পাঠকপ্রিয়তা বেড়েই চলছে। জন্ম সার্থক তার এখানেই।

‘জীবন থেকে নেয়া’ জহির রায়হানের অমর এক সৃষ্টি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছে সিনেমাটি। সিনেমাটি আজও দর্শকরা অধীর আগ্রহ নিয়ে দেখেন।

নায়ক রাজ রাজ্জাক অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘বেহুলা’র পরিচালকও জহির রায়হান। জহির রায়হানের হাত ধরেই নায়ক হিসেবে রাজ্জাকের আগমন এ দেশের সিনেমায়। নায়িকা ববিতাসহ অনেক শিল্পীর সিনেমায় অভিষেক ঘটে জহির রায়হানের হাত ধরে।

সাধারণ মানুষদের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার কথা সেলুলয়েডের ফিতায় তুলে ধরতেন জহির রায়হান। ‘কাঁচের দেয়াল’ সিনেমাটি তার আরেকটি সফল সৃষ্টি।

অবশ্য ৬০’র দশকে জহির রায়হান প্রথম পরিচালনা করেন ‘কখনো আসেনি’ সিনেমাটি।

৬০’র দশকে উর্দু ভাষার সিনেমা, যা কিনা পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র ‘সংগম’র পরিচালকও ছিলেন জহির রায়হান।

‘আনোয়ারা’ তার পরিচালিত আরও একটি আলোচিত ও প্রশংসিত সিনেমা।

এভাবেই সাহিত্য ও চলচ্চিত্র দুই দিকেই কাজ করে গেছেন জহির রায়হান। সাহিত্যের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান তিনি।

অনেক পরে এসে একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) দেওয়া হয় তাকে।

তবে জহির রায়হানের বড় পুরস্কার পাঠক ও দর্শকের ভালোবাসা। আজও তার গল্প-উপন্যাস এবং সিনেমা মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

16h ago