ঈদযাত্রায় বাড়তে পারে করোনার সংক্রমণ

বাসের বিকল্প হিসেবে কম খরচে এভাবেই পিকআপ ভ্যানে করে যাচ্ছেন অনেকে। এভাবে পিকআপে ভ্যানে করে যাত্রা করলে করোনায় সংক্রমিত হওয়ার উচ্চঝুঁকি রয়েছে। ছবিটি গতকাল চট্টগ্রাম শহরের নয়াবাজার থেকে তুলেছেন রাজীব রায়হান।

এবারের ঈদে সামাজিক দূরত্বের বিধি না মেনে গণপরিবহনে চড়ে শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে যাবেন হাজারো মানুষ। তাদের অনেকেই হয়তো মাস্কও পরবেন না। আর এতে করে দেশের করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে সতর্কতা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঈদের শেষে আবার যখন তারা ফিরবেন, তখন সংক্রমণের হার আর-নট স্কেলে এক এর উপরে চলে যেতে পারে।

আর-নট বা আর-শূন্য স্কেলের মাধ্যমে আক্রান্ত একজন থেকে কতজন সংক্রমিত হলেন, সেটি বোঝায়। আর-নট স্কেলের মাত্রা কম থাকলে নতুন সংক্রমণ কম বোঝায়। আর বেশি হলে বোঝায় এর বিপরীত চিত্র। এটি পরিস্থিতি পরিপ্রেক্ষিত তথ্য দিয়ে থাকে। যা নীতি-নির্ধারকদের কখন কড়াকড়ি লকডাউন আরোপ করতে হবে বা কখন বিধি-নিষেধ শিথিল করতে হবে, এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, আর’র মান এক এ থাকা মানে সংক্রমণের হার স্থিতিশীল। আর এক এর উপরে যাওয়া মানেই হলো রোগটি মহামারিতে পরিণত হয়েছে।

আর’র মান এক এর নিচে থাকা মানে একজন সংক্রমিত ব্যক্তির মাধ্যমে একজনেরও কম মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে। যার মানে ধীরে ধীরে সংক্রামকটি দুর্বল হচ্ছে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্য অনুযায়ী, গত আট মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর আর’র মান সর্বোচ্চ দুই দশমিক এক হয় গত ৯ এপ্রিল। আর গত ৪ জুলাই প্রথম গড় আর’র মান এক এর নিচে যায়।

গত ৯ জুলাই আর’র মান ছিল শূন্য দশমিক ৯৩৮। গত সপ্তাহ পর্যন্ত হার এমনই ছিল। এরপর থেকে আবার আর’র মান বাড়তে থাকে এবং গত ২৭ জুলাই এটি শূন্য দশমিক ৯৫১ এ পৌঁছায়।

এ ব্যাপারে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, ‘আর’র মান দেখে মনে হচ্ছে মানুষ হঠাৎ স্বাস্থ্যবিধি ভুলে গেছে এবং মহামারির তোয়াক্কা করছে না।’

তিনি মনে করেন, সামাজিক দূরত্ব মানা ও নিরাপদ সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেক মানুষই উদাসীন হয়ে পড়েছে।

‘ঈদকে কেন্দ্র করে মানুষের চলাফেরা বেড়েছে’ নিজ পর্যবেক্ষণে এমনটিই দেখেছেন ডা. এএসএম আলমগীর। গত ২৭ জুলাই এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, ‘এর পরিণতি আমরা আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যেই দেখতে পাব। যখন হয়তো সংক্রমণের হার আরও বেড়ে যাবে।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি ঈদে চলাফেরায় বিধি-নিষেধ থাকত, তাহলে হয়তো সংক্রমণ কমানো যেত। সেক্ষেত্রে আর’র মানও আবার কমতো। যার মাধ্যমে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধ করা যেত।

‘তবে, আমাদের যে অবস্থা, দেখে মনে হচ্ছে সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে’ বলেন ডা. এএসএম আলমগীর।

সৌদি আরবে সংক্রমণের হার আর-নট স্কেলে এক এর নিচে (শূন্য দশমিক ৯৩) যাওয়ায় সেখানকার বিধি-নিষেধ শিথিল করেছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, কয়েকদিনের মধ্যে সংক্রমণের হার এক এর উপরে চলে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ আবারও বিধি-নিষেধে কঠোর হতে বাধ্য হয়।

গত ২৭ জুলাই আইইডিসিআরের পরামর্শদাতা ও মহামারি বিশেষজ্ঞ মুশতাক হোসেন বলেন, ‘যেহেতু প্রতিদিন যে পরিমাণ করোনা পরীক্ষা হচ্ছে, তার সংখ্যা এক নয়, তাই পরীক্ষার ফলাফল থেকে প্রাপ্ত তথ্যও স্থায়ী নয়। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট যে শনাক্তের হার (পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার) প্রায় একই।’

‘শনাক্তের স্থায়ী এই হার ভবিষ্যতে যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি প্রতিহত করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে, আমরা আত্মতুষ্টির অনুভূতিতে এই সুযোগটি নষ্ট করছি’, বলেন মুশতাক হোসেন।

গত ১৮ মার্চ দেশে করোনায় প্রথম একজনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায়। আর গত ২৮ জুলাই দেশে মোট মৃত্যু তিন হাজারে পৌঁছায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দুই লাখ ৩২ হাজার ১৯৪।

Comments

The Daily Star  | English

Airborne superbugs lurk in Dhaka hospitals

Amid the bustling corridors of Dhaka’s hospitals, an invisible danger wafts silently through the air -- drug-resistant bacteria.

11h ago