পৃথিবী আগের মতো সুন্দর হোক, এটাই প্রত্যাশা করি: ববিতা
ঢাকাই চলচ্চিত্রে সত্তর দশকের সাড়া জাগানো নায়িকা ববিতা। বহু কালজয়ী সিনেমায় অভিনয় করে স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন তিনি। অভিনয় করেছেন সাড়ে তিনশরও বেশি সিনেমায়।
দেশ-বিদেশে বড় বড় চলচ্চিত্র উৎসবে প্রশংসিত হয়েছে ববিতার সিনেমা। সিনেমা দিয়ে নিজেকে যেমন পরিচিতি করেছেন, তেমনি দেশকেও তুলে ধরেছেন।
একাধিকবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন। ভারত থেকেও সম্মাননা পেয়েছেন।
দর্শকনন্দিত নায়িকা ববিতার আজ জন্মদিন।
‘লাইলি মজনু’ সিনেমার লাইলি তিনি। ‘লাইলি তোমার এসেছে ফিরিয়া মজনু গো আঁখি খোলো’ গানটি এখনো জনপ্রিয়। এই সিনেমায় ববিতার নায়ক ছিলেন রাজ্জাক।
‘নয়নমনি’ সিনেমার ‘চুল ধইরো না খোঁপা খোলে যাবে হে নাগর’ গানটি এই সময়ে এসেও নতুন প্রজন্মরা শুনে থাকেন। এই সিনেমায় ববিতার নায়ক ছিলেন ফারুক।
‘ফকির মজনু শাহ’ সিনেমায় ‘প্রেমের আগুনে জ্বলে গেলাম সজনী গো সে আগুন চোখে দেখলাম না’ গানটির আবেদন এখনো কমেনি। এই সিনেমায় ববিতার নায়ক ছিলেন জাফর ইকবাল।
‘ওয়াদা’ সিনেমায় ‘যদি বউ সাজো গো আরও সুন্দর লাগবে গো’ গানটি কোটি মানুষের মনে দাগ কেটে গিয়েছিল। এই সিনেমায় ববিতার নায়ক ছিলেন বুলবুল আহমেদ।
ববিতা অভিনীত সিনেমায় এ রকম অসংখ্য সুপারহিট গান রয়েছে, যা এখনো মানুষের মনে নাড়া দিয়ে যায়।
‘অবুঝ হৃদয়’ সিনেমায় ববিতা ও জাফর ইকবালের লিপে গাওয়া ‘তুমি আমার জীবন’ গানটি কয়েক দশক ধরে জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে।
‘গানের খাতায় স্বরলিপি লিখে’ গানটি ববিতা ও রাজ্জাক জুটির সাড়া জাগানো সিনেমা ‘স্বরলিপি’র। ববিতার জন্য ছিল অন্যতম সেরা একটি কাজ।
এ বিষয়ে ববিতা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ওই সময়টাই ছিল সুন্দর। গল্প, অভিনয়, পরিচালনা, গান সবকিছুতে যত্নের শতভাগ ছোঁয়া ছিল। যার কারণে আজও গানগুলি মানুষ শুনেন।
ববিতাকে প্রথম দিকে বলা হতো শহুরে সিনেমার আধুনিক নায়িকা। তাকে দিয়ে কেবল স্মার্ট ও গ্ল্যামারাস চরিত্রেই অভিনয় সম্ভব! কিন্তু, ববিতা একই ছকে আটকে থাকেননি। শহুরে, গ্রামীণ, সামাজিক, রাজকীয়, রোমান্টিক— সব ধরনের সিনেমায় অভিনয় করে নিজেকে যোগ্য শিল্পী করে তুলেছিলেন তিনি।
বিখ্যাত পরিচালক আমজাদ হোসেনের ‘গোলাপী এখন ট্রেন’-এ সিনেমায় ববিতা মিশে গেছেন নিখুঁতভাবে। আবার ‘আলোর মিছিল’ সিনেমায় আলো চরিত্রটি ববিতাকে দিয়েছিল অন্যরকম খ্যাতি।
এ দেশের সব নায়কের বিপরীতে ববিতা অভিনয় করেছেন। নায়করাজ রাজ্জাক এক সময় সিনেমা পরিচালনা শুরু করেন। তার পরিচালিত ‘অনন্ত প্রেম’ সিনেমায় নায়িকা হয়ে ববিতা অনেক আলোচিত হয়েছিলেন।
ববিতা সিনেমায় যাত্রা শুরু করেছিলেন বিখ্যাত পরিচালক জহির রায়হানের হাত ধরে। তখন তিনি কিশোরী। সিনেমার নাম ছিল ‘সংসার’।
স্বাধীনতার আগে ‘শেষ পর্যন্ত’ সিনেমা দিয়ে ববিতা প্রথম নায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ‘জ্বলতে সুরুজ কি নিচে’ সিনেমা দিয়ে তিনি ববিতা নামটি গ্রহণ করেন। প্রথম সিনেমায় তার নাম ছিল সুবর্ণা।
‘টাকা আনা পাই’ সিনেমাটির পরিচালক ছিলেন জহির রায়হান। এই সিনেমাটি ববিতার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট।
ববিতা বলেন, ‘সেরা সিনেমা কোনটি ওইভাবে বলা যাবে না। সব সিনেমাই প্রিয়।’
সত্যজিত রায়ের ‘অশনি সংকেত’ সিনেমার নায়িকা হিসেবে ববিতা পেয়েছেন আন্তর্জাতিক অভিনেত্রীর খেতাব। বিশ্বের অনেক দেশের বড় বড় চলচ্চিত্র উৎসবে গিয়েছেন সেই সিনেমার নায়িকা হয়ে।
আজও তাকে সত্যজিতের সিনেমার নায়িকা হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকেন অনেকে।
আজ তার জন্মদিন নিয়ে ডেইলি স্টারকে বললেন, ‘জন্মদিনে কিছুই করছি না। করার মতো পরিবেশও নেই। মনটাও ভালো না। আমার তিন ভাই আছেন তিন দেশে। সুচন্দা আপাও আছেন বিদেশে। আমার একমাত্র ছেলে অনিক কানাডায়। এজন্য মনটা ভালো না। মনটা বার বার বলছে কখন ছেলেকে কাছে পাব!’
কী চাওয়া আছে বিশেষ এই দিনে?
ববিতা বলেন, ‘সবার ভালোবাসা ও দোয়া নিয়ে এতদূর এসেছি। এখনো সবার দোয়া ও ভালোবাসা চাই। পৃথিবী আগের মতো সুন্দর হোক— এটাই প্রত্যাশা করি।’
Comments