মায়ের কোলেই মারা গেলেন সেই রেমিট্যান্স যোদ্ধা রানা শিকদার
অবশেষে ছয় বছর বয়সী ছেলে আর বৃদ্ধা মার কোলেই মারা গেলেন সিঙ্গাপুরফেরত সেই রেমিট্যান্স যোদ্ধা রানা শিকদার।
বত্রিশ বছর বয়সী রানা শিকদার পাকস্থলীর ক্যান্সারে ভুগছিলেন। তিনি মে মাস থেকে শয্যাশায়ী থেকে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন।
রানার চাচা আনিস শিকদার জানান, গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টায় নারায়ণগঞ্জে নিজ বাড়িতে পরিবারের সব সদস্যদের উপস্থিতিতে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তিনি মা, স্ত্রী ও একমাত্র সন্তান রেখে গেছেন। সন্ধ্যায় রানাকে দাফন করা হয়।
দ্য ডেইলি স্টার রানাকে নিয়ে আগে ‘রানা শিকদার ও একজন ডা. সিনথিয়া’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।
রানা শিকদারের মৃত্যুর পর দ্য ডেইলি স্টার সিঙ্গাপুরে তার চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক ও যার সহায়তায় তিনি দেশে এসেছিলেন তার সঙ্গে যোগাযোগ করে।
সিঙ্গাপুরের হাসপাতালের চিকিৎসক সিনথিয়া গুহ জানান যে তিনি রানার মৃত্যুর খবর শুনেছেন।
‘আমার খারাপ লাগছে। তারপরেও ভালো লাগছে যে রানার জীবনে খুব ছোট একটা ভূমিকা রাখতে পেরেছি। একটা ভালোলাগা যে রানা তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী শেষ সময়টা পরিবারের সঙ্গে কাটাতে পেরেছে। পরিবারও রানার সঙ্গে সময় কাটাতে পেরেছে’, বলেন তিনি।
সিনথিয়া বলেন, ‘নিশ্চয়ই রানার পরবর্তী জীবন হবে অনেক মসৃণ।’
রানা শিকদার ২০১৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পাড়ি জমান সিঙ্গাপুরে। কাজ করেন শিপইয়ার্ডে। মে মাসের শুরুর দিকে হঠাৎ রানার পেটে ব্যথা আর বমি হয়। যান চিকিৎসকের কাছে। ওষুধ খেয়ে ব্যথা কমায় আবারও ছুটেন কাজে।
সপ্তাহখানেক না যেতেই আবার ব্যথা ও বমি। এবার ভর্তি হতে হলো হাসপাতালে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা গেল, তার পাকস্থলীতে ক্যানসার। চিকিৎসকরা জানালেন, একেবারে শেষ পর্যায়ে ক্যানসার। তাদের আর কিছু করার নেই।
সিঙ্গাপুরের হাসপাতালের চিকিৎসক সিনথিয়া গুহ হঠাৎ রানার জীবনের গল্প শুনেন। ক্রাউড সোর্সিংয়ের মাধ্যমে ফান্ড জোগাড় করে ২২ মে রাতে রানাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়।
রানাকে বিশেষ বিমানে বাংলাদেশে পাঠাতে খরচ হয় ৪৮ হাজার সিঙ্গাপুর ডলার বা ৩১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। আর রানার জন্য ডা. সিনথিয়ারা যে তহবিল গঠন করেছিলেন, মাত্র ৭২ ঘণ্টায় তাতে জমা পড়ে ৬০ হাজার সিঙ্গাপুর ডলার বা ৩৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
Comments