সীমিত পরিসরে ক্রীড়া কার্যক্রম শুরু হচ্ছে বাংলাদেশেও?
করোনাভাইরাসের বিস্তার বন্ধ করতে কার্যকর করা দুই মাসের লকডাউন উঠিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। গেল বুধবার জানানো হয়েছে যে, অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে মহামারি প্রকোপের মধ্যেই আগামী ৩১ মে থেকে শর্ত সাপেক্ষে অফিস ও গণপরিবহন চালু হবে। দেশের বড় বড় জাতীয় ক্রীড়া সংস্থাগুলোও সরকারের নির্দেশনা অনুসরণ করে তাদের নিজ নিজ অফিসিয়াল কার্যক্রম ফের শুরু করতে চায়। তবে ক্রীড়া কার্যক্রম অর্থাৎ মাঠে খেলা চালু করার আগে গোটা পরিস্থিতি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার প্রয়োজনীয়তা দেখছে তারা।
মহামারির প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ায় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় গেল ১৬ মার্চ দেশের সমস্ত খেলা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। এরপর থেকে ফেডারেশনগুলো তাদের ক্রীড়া কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এক রাউন্ড পরই ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ স্থগিত করে দিয়েছে। গেল ১৭ মে ঘরোয়া ফুটবলের ২০১৯-২০ মৌসুমের বাকি অংশ বাতিল করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে স্থগিত হয়ে থাকা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ। অন্যান্য ফেডারেশনগুলোও প্রায় আড়াই মাস ধরে তাদের কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে।
বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজামউদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘আমরা এখন সীমিত পর্যায়ে কার্যক্রম চালানোর কথা ভাবছি। তবে কখন পুনরায় খেলা আরম্ভ করা যাবে সে বিষয়ে আমরা এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যেমন- ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ, এফটিপি (ভবিষ্যৎ সফরসূচি) এবং কিছু অফিসিয়াল বিষয় নিয়ে কাজ করব। তবে লিগ পুনরায় চালু করা এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আন্তর্জাতিক সূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কাজটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।’
বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ নিজেদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমরা ৩১ মে অফিস খুলব। তবে আমরা কিছুদিন পরই কর্মীদের উপস্থিতি কমানো নিশ্চিত করব। কারণ, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ বাতিলের পরে আমাদের হাতে বড় কোনো কাজ নেই।’
তিনি যোগ করেছেন, ‘এরপর আমরা বাফুফের নির্বাচনের প্রক্রিয়াটি শুরু করব যা করোনভাইরাস মহামারি এবং সরকারের সাধারণ ছুটির কারণে স্থগিত ছিল। বাফুফের নির্বাহী কমিটি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা উপযুক্ত পরিস্থিতিতে নারী ফুটবল লিগ, জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ এবং স্কুল টুর্নামেন্ট আবার শুরু করার কথা ভাবছি।’
সোহাগের কথা প্রতিধ্বনিত হয়েছে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইউসুফের কণ্ঠে, ‘ক্রীড়া কার্যক্রম আবার শুরু করতে আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করব এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করব। পাশাপাশি আমরা ক্লাবগুলোর সঙ্গে ঢাকা প্রিমিয়ার হকি লিগ নিয়ে আলোচনায় বসতে চাই। কারণ, লকডাউন কার্যকর হওয়ার আগে তাদেরকে এ বিষয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলাম আমরা।’
‘এফআইএইচ (আন্তর্জাতিক হকি ফেডারেশন) বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য নির্ধারিত আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট সম্পর্কেও জানতে চেয়েছে। আমরা যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বোর্ডের সভায় সবকিছু নিয়ে আলোচনা করব এবং সরকারের নির্দেশিকাগুলো অনুসরণ করব,’ আরও বলেছেন তিনি।
বাংলাদেশ আর্চারি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজিব আহমেদ উদ্দিন চপল জানিয়েছেন, ‘কার্যক্রম কীভাবে পুনরায় চালু করা যায় তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। দেশের অর্থনীতির স্বার্থে সরকারের সিদ্ধান্ত আমাদের গ্রহণ করতে হবে। তবে অ্যাথলেটরা আমাদের কাছে সন্তানের মতো এবং তাদের স্বাস্থ্যের যত্নও নিতে হবে আমাদের।’
তিনি যোগ করেছেন, ‘ক্রীড়াবিদদের পিতা-মাতা, সংস্থা এবং স্পনসররা যদি সম্মতি দেয় তবে আমরা ছোট আকারে জাতীয় দলের প্রশিক্ষণ শুরু করব। কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক আয়োজনের আগে আমরা আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করব।’
বাংলাদেশ ভলিবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রাহামন মিকুও একই পথে হাঁটতে চাওয়ার কথা জানিয়েছেন, ‘আমরা প্রথমে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে চাই। কারণ, আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। যদি খেলা ফের চালু করার ন্যূনতম সুযোগ থাকে, তবে আমরা স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে এটি শুরু করব।’
এনএসসির তহবিল থেকে বরাদ্দ পাওয়ার সাপেক্ষে শিগগিরই যুব খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প শুরু করার ইচ্ছার কথা জানিয়ে বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান কোহিনূর বলেছেন, ‘লকডাউন শুরু হলেও আমাদের অফিস আংশিকভাবে খোলা থেকেছে। আমরা এখন খেলা আবার চালু করার কথা ভাবছি। সবকিছু অনুকূলে থাকলে আমরা জুনের শেষদিকে বা জুলাইয়ের প্রথম দিকে কিছু টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে চাই। আমাদের স্পনসরদের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে হবে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আমরা ১৫ জুনের পরে বৈঠক করব।’
Comments