আম্পানের মূল ভয় জোয়ার-ভাটা
ইতিমধ্যে চতুর্থ ক্যাটাগরিতে ডাউনগ্রেড হওয়া ঘূর্ণিঝড় আম্পান সুন্দরবনের পশ্চিমের অংশের নিকটবর্তী হওয়ার সময় আরও দুর্বল হতে পারে বলে গতকাল মঙ্গলবার বলেছিলেন বিশেষজ্ঞরা।
অবশ্য তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে জোয়ারের উপর নির্ভর করে ঘূর্ণিঝড়টি কিছুটা দুর্বল হয়ে এখনও তীব্র ঝড় আকারে বাংলাদেশের উপর মারাত্মক ধ্বংসযজ্ঞের কারণ হতে পারে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক মো. শাহ আলম জানান, ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের গতি সমুদ্রের চেয়ে স্থলভাগে অবশ্যই কম হবে। ঘূর্ণিঝড়টি জোয়ারের সময় নাকি ভাটার সময় আঘাত করবে তার উপর নির্ভর করে ঝড়ের তীব্রতা।
তিনি আরও বলেন, আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো ঘূর্ণিঝড়টি এখনও ফানেলের মতো সাগরের বিশাল অংশকে ঢেকে রেখেছে। পানি উত্তর দিকে ঠেলে দিচ্ছে, যা আঘাত হানার সময় ঝড়ের তীব্রতাকে আরও বাড়িয়ে দেবে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত পূর্বাভাস কর্মকর্তা কামরুল হাসান জানান, এই ঘূর্ণিঝড়ের মূল বৈশিষ্ট্য হলো এর গতি, সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ও ব্যাসার্ধ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৯৯৯ সালের উড়িষ্যা ঘূর্ণিঝড়ের পরে আম্পান হলো বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া দ্বিতীয় সুপার ঘূর্ণিঝড়। এটি উপসাগরে তৈরি এই শতাব্দীতে প্রথম সুপার ঘূর্ণিঝড়।
যৌথ টাইফুন সতর্কতা কেন্দ্র জানিয়েছে যে স্থলভাগে আম্পানের ধারাবাহিক বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটারের নিচে হবে। যা ঘূর্ণিঝড়টিকে তৃতীয় ক্যাটাগরিতে দুর্বল করে দেবে।
গতকাল মঙ্গলবার ঘূর্ণিঝড়টি রেটিং ছিল পঞ্চম ক্যাটাগরিতে।
ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে তৈরি ৪৬টি তীব্র ঘূর্ণিঝড় নিবন্ধিত আছে।
প্রাণনাশের হিসাবে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ভয়াবহ সাতটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত করেছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৯৭০ সালে ভোলার ঘূর্ণিঝড়। এই ঘূর্ণিঝড়ে ৩ লাখ থেকে ৫ লাখ মানুষ মারা যায়। ঘূর্ণিঝড়টি ২০ ফুট উচ্চতার ঝড় তুলেছিল।
বাণিজ্যিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস সংস্থা ওয়েদার আন্ডারগ্রাউন্ড বলেছে, ‘আম্পানের সবচেয়ে মারাত্মক হুমকি হলো এর সম্ভাব্য বিপর্যয়কর ঝড়ের তীব্রতা। এমনকি আম্পানের উপরের বাতাস দুর্বল হয়ে গেলেও ঝড়ের তীব্রতার ঝুঁকি থাকবে মারাত্মক।’
ঘূর্ণিঝড় আম্পান তার প্রকৃতির কারণে আলাদা জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়র ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক মাহবুবা নাসরিন বলেন, ‘এটি সিডর এবং আইলার চেয়েও শক্তিশালী। মানুষ করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে এমনিতেই আতঙ্কিত। তার মধ্যে এই ঘূর্ণিঝড়টি তাদের জন্য দ্বিগুণ আঘাতের কারণ হবে।’
Comments