করোনা ছড়ানোর হার নিয়ে অন্ধকারে বিজ্ঞানী ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা

দেশের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব নিয়ে বেশিরভাগ ভবিষ্যদ্বাণী করছেন অনুমানের ভিত্তিতে, বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করে নয়। এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

আর-নট নিয়ে এখনও অন্ধকারে বিজ্ঞানী ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। আর-নট হচ্ছে একক ক্ষেত্রে ফলাফল হিসাবে আনুমানিক নতুন সংক্রমণের সংখ্যা। দেশে এখনও এই পরিমাপ করা যায়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর কারণে দেশে প্রাদুর্ভাবটি এখন কোন পর্যায়ে আছে, কখন এর সমাপ্তি হতে পারে বা কত প্রাণহানি করতে পারে তা বলা মুশকিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, আর-নট প্রাদুর্ভাবের তথ্য দেয়। যা নীতি নির্ধারকদের কখন কঠোর লকডাউন প্রয়োগ করতে হবে বা কখন নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে সে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে।

তিনি বলেন, ‘সরকার ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা অনুমানের ভিত্তিতে ভবিষ্যদ্বাণী করছেন। এগুলো পর্যাপ্ত ও আসল বৈজ্ঞানিক প্রমাণের ভিত্তিতে করা নয়।’

আর-নট মান কম হওয়ার অর্থ নতুন রোগীর সংখ্যা কম এবং আর-নট মান বেশি হওয়ার অর্থ নতুন রোগীর সংখ্যা বেশী জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সুতরাং, বর্তমান অবস্থা বুঝে ভবিষ্যদ্বাণী করতে ও প্রমাণের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে আর-নট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পরেই আইইডিসিআরের আর-নট নির্ধারণের জন্য একটি পরিকল্পনা কার্যকর করা উচিত ছিল।

যোগাযোগ করা হলে, স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে তারা এর কাজ শুরু করেছেন। তবে তথ্যের অভাবে এখনও কাজটি শেষ করতে পারেননি।

আইইডিসিআরের পরামর্শদাতা এবং মহামারি বিশেষজ্ঞ মুশতাক হোসেন বলেন, ‘আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি এবং এর কাজ এগিয়ে চলছে।’

তিনি আরও যোগ করেন যে সরকারি কর্মকর্তাদের ভবিষ্যদ্বাণী দৈনিক নতুন শনাক্ত রোগী বিশ্লেষণ, পরীক্ষার সংখ্যা ও মৃত্যুর হারের ভিত্তিতে তৈরি।

তিনি বলেন, ‘তবে হ্যাঁ, কখন কী করতে হবে সে সম্পর্কে খুব ভালো দিকনির্দেশনা দেয় আর-নট। এটা নিয়ে কাজ চলছে এবং আমরা শিগগির ফলাফল পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।’

বিশেষজ্ঞরা জানান, আর-নটের মান যদি দুই দশমিক পাঁচ হয়, এর অর্থ একজন সংক্রামিত রোগী গড়ে আরও দুই দশমিক পাঁচ জনকে সংক্রামিত করতে পারে। এই হার এক এর নিচে থাকার অর্থ নতুন সংক্রমিতর সংখ্যা অনেক কম। সেক্ষেত্রে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা যায়। এক এর উপরে হওয়ার অর্থ দাঁড়ায় সংক্রমিতর সংখ্যা বাড়ছে। সেক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরও কড়া ভাবে আরোপ করা উচিত।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সম্প্রতি ইতালির কর্মকর্তাদের হাতে আসা তথ্যে তারা জানতে পারে যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশটিতে করোনাভাইরাসের আর-নট শূন্য দশমিক আট-এ নেমে এসেছে। ফ্রান্সে যা তিন দশমিক তিন থেকে কমে শূন্য দশমিক পাঁচ-এ এসে দাঁড়িয়েছে। ভারতের অনুমান, দেশটিতে আর-নট এক দশমিক ৫৫ থেকে কমে এক দশমিক ৩৬ হয়েছে।

কোভিড-১৯ সম্পর্কিত জাতীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক ইকবাল আরসলান জানান, বেশি পরিমাণ পরীক্ষার কারণে বৈশ্বিক অনুশীলনটিই অনুসরণ করা বুদ্ধিমানের কাজ।

আর-নট নিয়ে তিনি বলেন, ‘তবে কিছু ক্ষেত্রে, বিভিন্ন দেশ নিজেদের অবস্থার ওপর ভিত্তি করে বৈশ্বিক অনুশীলনে পরিবর্তন করতে পারে। সেক্ষেত্রে এটা অবশ্যই সমস্যা তৈরি করবে।’

Comments

The Daily Star  | English

BNP won't form govt alone even if it wins 200 seats: Khasru

The 31-point proposal was formulated collectively by 42 parties, including the BNP, says the BNP leader

15m ago