করোনার সঙ্গে এবার ডেঙ্গু
গত কয়েকদিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন ৫৩ বছর বয়সী আনিসুর রহমান। তার কাশি, গায়ে ব্যথা ও শ্বাসকষ্টও ছিল।
আনিসুর রহমানের মেয়ে একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। বাবার শারীরিক অসুস্থতা দেখে তার সন্দেহ হয়েছিল যে, তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, ‘আমি বাবাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাই। ডেঙ্গু ও করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। রিপোর্টে দেখা যায়, তার ডেঙ্গু ও করোনাভাইরাস দুটোই পজিটিভ।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার বাবা এখন গুরুতর অবস্থায় একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন। আমরা তাকে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করছি।’
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ডেঙ্গু ও করোনাভাইরাস একসঙ্গে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা যেন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাণঘাতী দুই রোগে একসঙ্গে আক্রান্ত হলে সুস্থ হয়ে ওঠা কঠিন হতে পারে।
স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৩৩১ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৬৪ জন ঢাকার ও বাকি ৬৭ জন অন্যান্য জেলার।
গত বছর ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্তের মধ্যে ৪৯ হাজার ৫৪৪ জন ঢাকার বাইরের ছিলেন। ডেঙ্গুতে মোট মারা গিয়েছিলেন ১৭৯ জন।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘এটা দ্বিগুণ আঘাত। করোনাভাইরাস ও ডেঙ্গু দুটোই বেশ জটিল। গত বছর ডেঙ্গু নিয়ে আমাদের খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সঙ্গে ডেঙ্গু যোগ হলে পরিস্থিতি আরও মারাত্মক হবে।’
উভয় রোগ মোকাবিলার জন্যই সর্তক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্তের পর এখন পর্যন্ত ২৯৮ জন এ রোগে মারা গেছেন। আজ শুক্রবার পর্যন্ত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২০ হাজার ৬৫ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের লাইন ডিরেক্টর ডা. শাহনীলা ফেরদৌসি জানান, আনিসুর রহমানই হয়তো দেশের প্রথম রোগী, যিনি একসঙ্গে ডেঙ্গু ও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
জনগণকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘যদি জ্বর নিয়ন্ত্রণে থাকে, কাশি না হয় ও শ্বাস-প্রশ্বাসে জটিলতা না থাকে, তবে রোগীর উচিত বাসায় থেকেই বিশ্রাম নেওয়া ও প্রচুর পানি পান করা।’
তিনি জানান, যদি রোগীদের শ্বাস নিতে সমস্যা হয় তবে তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু ও করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়াতে প্রচারণা চালাচ্ছে।
Comments