থমকে যাওয়া সময়ে আকবরের দিনকাল
দেশকে যুব বিশ্বকাপ জিতিয়ে মাস দেড়েক আগেই আকবর আলি পেয়েছেন তারকাখ্যাতি। দেশজুড়ে তাকে নিয়ে উঠেছিল তুমুল শোরগোল। এবার ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগেও তাই বাড়তি নজর ছিল আকবরের উপর। তবে বড়দের মঞ্চে ঝলক দেখানোর আর অবকাশ পেলেন কই! বিশ্বের প্রেক্ষাপট যে হুট করেই গেছে পাল্টে। আকবরদের বিশ্বকাপ জেতাও যেন মনে হচ্ছে কোনো সুদূর অতীত। করোনাভাইরাসের ছোবলে সব খেলাই বন্ধ। কবে আবার খেলা ফিরবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। অনেক ক্রিকেটারের মতো আকবরও তাই চলে গেছেন রংপুরে নিজের বাড়িতে। সেখান থেকেই মুঠোফোনে জানালেন তার বর্তমান হালচাল।
খেলা নেই, নেই অনুশীলনের তাড়া। মিলছে বিশ্রামের বিস্তর সুযোগ। রংপুর শহরের পশ্চিম জুম্মাপাড়ার বাড়িতে বিশ্রামই নিচ্ছিলেন আকবর।
'বাড়িতে কি আটকে গেলেন?' ফোনের ওপাশ থেকে কণ্ঠ উপায়ান্তরহীন, 'তাই তো মনে হচ্ছে।'
আকবরের দিনের বড় অংশ কাটছে বৈশ্বিক পরিস্থিতির খবর রেখে। সঙ্গে আছে মায়ের হাতের প্রিয় রান্না আর অফুরন্ত অবসর। কিন্তু এতে যে আছে বিপদও। পেশাদার খেলোয়াড়কে মাথায় রাখতে হয় মাঠে ফেরার ভাবনা। ফিজিও, ট্রেনাররা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দিচ্ছেন সেই তাগাদা। সবমিলিয়ে একটা বুদ্ধি বের করে ফিটনেস ট্রেনিং চালাচ্ছেন যুব বিশ্বকাপ জয়ী বাংলাদেশ অধিনায়ক।
ওজন যাতে না বাড়ে, সেজন্য বাড়িতে থাকলেও খাওয়া-দাওয়ায় থাকতে হচ্ছে সংযমী। ভোরে যখন কেউ থাকে না, তখন পাড়ার একটি মাঠে রানিংও চলে তার, 'বাসাতেই একটু হোম ওয়ার্ক করা যায়। ওগুলো চেষ্টা করেছি। ফিটনেস নিয়ে কাজ করছি। বেল্ট কিংবা অন্যান্য ইকুইম্পমেন্ট নিয়ে যা যা করা যায়, সেসবই করছি। আমাদের বাসার পাশেই একটা মাঠ আছে। সেখানে যাই একদম ফাঁকা সময়ে। যেসময় কেউ থাকে না তখন। তবে স্কিল ট্রেনিং মানে ব্যাটিং, কিপিং এসব অনুশীলন হচ্ছে না।'
জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাওয়া যাবে না, তাই বাড়িতে বসেই ফিটনেস ঠিক রাখার ফর্দ মেনে চলছেন তিনি, 'আমাদের ট্রেনার, ফিজিওরা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বিভিন্ন জিনিস পাঠাচ্ছে প্রতিনিয়ত, যেগুলো আমরা বাসায় বসেই এই সময়ে করতে পারি। সেসবই চেষ্টা করছি অনুসরণ করার।'
দেশের বিভিন্ন জায়গায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর খবর পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় সবাই বিদেশ থেকে আগত বা প্রবাসীদের সংস্পর্শে এসেছিলেন। আকবরদের এলাকায় প্রবাসী তেমন কেউ নেই। কিন্তু বৈশ্বিক এই মহামারি নিয়ে উদ্বিগ্ন সবাই। এলাকাজুড়েই তাই গড়ে উঠেছে সম্মিলিত সচেতনতাবোধ, 'আমাদের এলাকায় সবাই একটু এটা নিয়ে চিন্তিত। সারা বিশ্বে যখন ছড়িয়ে পড়েছে, অনেক বড় চিন্তার বিষয়। সারাক্ষণ সংবাদ দেখছি আমরা। কী অবস্থা সব সময় নজর রাখছি। যে যার মতন করে চেষ্টা করছে সচেতন থাকার। তবে আশার কথা, আমাদের এলাকায় প্রবাসী নেই।'
ছুটিতে বাড়ি যাওয়া অন্যরকম আনন্দের উপলক্ষ। কিন্তু এবারের ছুটি যে অন্যরকম! আগে বাড়ি এলে বন্ধুদের নিয়ে জম্পেশ আড্ডা হতো। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সবই বন্ধ, আকবরদের আড্ডা তাই হয়ে গেছে ভার্চুয়াল, 'ওরকম আড্ডা হচ্ছেই না। আগে বাড়ি এলে তো অনেক আড্ডা হতো। এখন বন্ধুরাও সবাই বুঝতে পারছে যে, ব্যাপারটা কীরকম। এখন আড্ডা অনেকটা ভার্চুয়াল। হোয়াটসঅ্যাপ বা সোশ্যাল মিডিয়ায় আড্ডা হচ্ছে। দেখা-সাক্ষাৎ করার সুযোগ নেই আর।'
বিশ্বকাপের পর নিজ এলাকায় আকবরের পরিচিতি বেড়েছে অনেক। সেই পরিচিতি কাজে লাগিয়ে এই সংকটকালে সচেতনতা প্রচারেও মনযোগী তিনি, 'যাদের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে, বলছি দেখা-সাক্ষাৎ এখন কম করা ভালো। সামাজিক দূরত্ব একটু মেনে চলতে হবে, বারবার হাত ধুতে হবে এসবই বলছি। ডব্লিওএইচও (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা) ও সরকারের পক্ষ থেকে যা বলা হচ্ছে, সেসব মেনে চলতে বলছি। হাত মেলানো বা সংস্পর্শে আসা এসব এড়িয়ে চলতে বলছি সবাইকে।'
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান নাজমুল হাসান অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য দেশের ক্রিকেট স্থগিত করেছেন। অন্তত ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত মাঠে খেলা ফেরার সম্ভাবনা নেই। পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়া অবধি আকবরও তাই থাকবেন রংপুরে। ফিটনেস কিছুটা ধরে রাখা গেলেও সময়টা দীর্ঘ হলে জড়তা আসতে পারে খেলায়। কিন্তু জীবনের প্রশ্ন যখন বড়, খেলা নিয়ে আর ভাবার সময় তখন কোথায়!
Comments